BRAKING NEWS

দেশে করোনার আগ্রাসন অব্যাহত, সতর্ক বিভিন্ন রাজ্যে,প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটাতে বড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের

নয়াদিল্লি, ১৩ এপ্রিল (হি.স.) : ভারতে করোনার আগ্রাসন অব্যাহত! গত রবিবার সারা দিনে ভারতে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১.৬৮-লক্ষের বেশি মানুষ। সোমবার সারাদিনে কিছুটা কমে, ভারতে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ১.৬১-লক্ষাধিক দেশবাসী। সোমবার সারাদিনে ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১,৬১,৭৩৬ জন, বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র দেশে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৮৭৯ জনের প্রাণ। ভারতে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১২.৬৪-লক্ষের (৯.২৪ শতাংশ) গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই সেরে ওঠাও স্বস্তি দিচ্ছে, সোমবার সারা দিনে ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ৯৭,১৬৮ জন। ফলে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট সুস্থ হয়েছেন ১,২২,৫৩,৬৯৭ জন করোনা-রোগী (৮৯.৫১ শতাংশ)।


ভারতে ২৬-কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেল করোনা-পরীক্ষার সংখ্যা। মঙ্গলবার সকালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, ১২ এপ্রিল সারা দিনে ১৪,০০,১২২ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা-স্যাম্পেল টেস্ট করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারতে করোনা-টেস্টের সংখ্যা ২৫,৯২,০৭,১০৮-এ পৌঁছে গিয়েছে। ১৪,০০,১২২ জনের করোনা-পরীক্ষার মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ১,৬১,৭৩৬ জন।


কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ১,৬১,৭৩৬ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১,৩৬,৮৯,৪৫৩-তে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বুলেটিনে জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘন্টায় ৮৭৯ জনের মৃত্যুর পর ভারতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৭১,০৫৮ জন। মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬৯৮ জন (৯.২৪ শতাংশ), বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে একধাক্কায় বেড়েছে ৬৩,৬৮৯ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট ১০ কোটি ৮৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ০৮৫ জনকে করোনা-টিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৪০,০৪,৫২১ জনকে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে।

দেশে সংক্রমণের সূচক গত দু’মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। করোনা-যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার, প্রতিষেধকেই দেখা দিয়েছে ঘাটতি। প্রতিষেধক চেয়ে কেন্দ্রের কাছে রোজ আবেদন করছে একের পর এক রাজ্য। গোড়ার দিকে দেশে প্রতিষেধকের চাহিদা কম থাকায় ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’-র লক্ষ্যে প্রায় ৬ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক বিভিন্ন দেশকে দিয়েছে ভারত। বাইরের দেশে ভারতের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও এখন তা কার্যত বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদী সরকারের কাছেই।


দেশে প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটাতে বড় পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। এদেশে এখনও ব্যবহার হয়নি এমন বিদেশি সমস্ত প্রতিষেধক প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিতে চলেছে কেন্দ্র। যার ফলে প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটানো যাবে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা।এ দেশে প্রয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই রাশিয়ার স্পুটনিক ভি-কে ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। পাশাপাশি চলতি বছরেই জনসন অ্যান্ড জনসন, জাইডাস ক্যাডিলা, সিরাম ন্যাভোভ্যাক্স এবং ভারত বায়োটেকের ন্যাসাল ভ্যাকসিন-সহ মোট ৫টি প্রতিষেধকও দ্রুত ছাড়পত্র পেতে চলেছে। এর বাইরে যে সমস্ত বিদেশি প্রতিষেধক অন্যান্য দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলিকেও ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।

গত ক’দিন ধরেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিষেধক চেয়ে একের পর এক আবেদন আসছে কেন্দ্রের কাছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ওড়িশা এবং রাজস্থানও কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে। বহু টিকা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ারও খবর আসতে শুরু করেছে।


কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সরকার থেকে চিকিৎসকমহলেও। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, এই দ্বিতীয় তরঙ্গ আগের তুলনায় খুব কম সময়ে বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। আর এই কারণে বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যে কার্ফু এবং লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকারগুলি। স্কুল পরিষেবা বন্ধ করার পাশাপাশি সমস্ত পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। এর পরেও প্রতিটা দিন সংক্রণের পরিমাণ তালিকা ছাড়িয়ে বাড়ছে।


করোনা মোকাবিলায় এবার কড়া হতে চলেছে এ রাজ্যও। কীভাবে করোনাকে বাগে আনা যায় তা নিয়ে এদিন বিকেলে জরুরি বৈঠক বসতে চলেছে নবান্নে। সূত্রের খবর, করোনা মোকাবিলায় কী করণীয় তা নিয়ে আলোচনায় এদিন হাজির থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।


এদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন নানা ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। লকডাউন বা নাউট কার্ফু জারি করা হলে অর্থনীতির ওপর তার কেমন প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে এদিনের বৈঠকে।


উল্লেখ্য, আগের দিনই জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক সারেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পরেই করোনা রুখতে একাধিক নির্দেশিকা জারি করে নবান্ন। রাজ্যের যে ১০ টি জেলায় নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, সেই জেলাগুলিতে করোনা রুখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে রাজ্য়ে। তার উপর দেখা দিয়েছে ভ্যাকসিনের আকাল। পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতেও বেডের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। তাই এবার সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এতদিন সরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনার জন্য বেডের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬০৪টি। এবার তা ১ হাজার ৮২৪টি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে মোট বেড সংখ্যা দাঁড়াবে ৭ হাজার ৪২৮টি।


বিভিন্ন রাজ্যে এই প্রতিষেধকের বণ্টন ঘিরে আবার স্বজনপোষণেরও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। যেমন মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি। কেন্দ্র তাদের দিয়েছে ১.৬ কোটি ডোজ যেখানে গুজরাতের জনসংখ্যা সাড়ে ৬ কোটি অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের অর্ধেক হলেও প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে প্রতিষেধক গিয়েছে প্রায় ১.৫ কোটি ডোজ়। সংক্রমণ রোখার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার প্রতিষেধক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *