BRAKING NEWS

দেশজুড়ে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের সংখ্যা, দৈনিক আক্রান্ত বেড়ে ১.৬৮-লক্ষাধিক, ভারতে করোনায় মৃত্যু ১,৭০,১৭৯

নয়াদিল্লি, ১২ এপ্রিল (হি.স.) : দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের  সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সংক্রমণের সংখ্যা ১,৬৮,৯১২ জন। এরমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের করোনাভাইরাসের মোকাবিলার জন্য তৈরি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দিল্লি বিহার সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্কুল কলেজ এর মতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি করুণা টিকাকরণ অভিযান দেশজুড়ে চলছে সমানতালে। তবে সুখবর হল দেশীয় দুইটিকা কোভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ডের পর এবার দেশে আসছে রাশিয়ার টিকা।

দৈনিক করোনা-সংক্রমণে ফের রেকর্ড গড়ল ভারত। বাড়তে বাড়তে ভারতে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ১.৬৮-লক্ষাধিক দেশবাসী। রবিবার সারাদিনে ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১,৬৮,৯১২ জন, বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র দেশে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৯০৪ জনের প্রাণ। ভারতে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যাও বাড়তে বাড়তে ১২.০১-লক্ষের (৮.৮৮ শতাংশ) গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই সেরে ওঠাও স্বস্তি দিচ্ছে, রবিবার সারা দিনে ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ৭৫,০৮৬ জন। ফলে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট সুস্থ হয়েছেন ১,২১,৫৬,৫২৯ জন করোনা-রোগী (৮৯.৮৬ শতাংশ)।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ১,৬৮,৯১২ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১,৩৫,২৭,৭১৭-তে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বুলেটিনে জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘন্টায় ৯০৪ জনের মৃত্যুর পর ভারতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৭০,১৭৯ জন। সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১২ লক্ষ ০১ হাজার ০০৯ জন (৮.৮৮ শতাংশ), বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে একধাক্কায় বেড়েছে ৯২,৯২২ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৬৫ জনকে করোনা-টিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২৯,৩৩,৪১৮ জনকে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের কাজেও এবার প্রভাব ফেলল করোনা। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বহু কর্মী সদস্য। তাই নিজ নিজ বাড়িতে থেকেই মামলার শুনানি করবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতের বহু কর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের কর্মীদের মধ্যে এই পরিমাণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আপাতত বাড়ি থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত মামলার শুনানি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আদালত চত্বর, আদালতের সব ঘর জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে আদালতের সিঙ্গল বা ডিভিশন বেঞ্চগুলো বসবে। ডিইইউ, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, ১০.৩০-এ সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চের বসার কথা ছিল সেই বেঞ্চ বসেছে ১১.৩০ মিনিটে এবং এগারোটায় যে বেঞ্চের বসার কথা ছিল সেই বেঞ্চ বসেছে দুপুর বারোটায়।

আবার করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে যখন গোটা দেশ উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত, এই সময়ে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে কুম্ভ মেলায় ধরা পড়ল ভিন্ন ও আতঙ্কের চিত্র। সোমবার কাতারে কাতারে পুণ্যার্থী ও সাধুরা শাহি স্নান করলেন হরিদ্বারের গঙ্গায়। ফলে হর কী পৌরি-সহ সর্বত্রই কোভিড বিধি প্রায় শিকেয় উঠেছে। সকাল সাতটা পর্যন্ত শাহি স্নান করেন সাধারণ ভক্তরা, এরপরই হর কী পৌরিতে শাহি স্নান করেন জুনা আখারার সাধুরা, শাহি স্নান করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধুরা। আশ্চর্যের বিষয় হল, সামাজিক দূরত্ব তো দূর অস্ত বহু পুণ্যার্থীর মুখে মাস্ক পর্যন্ত ছিল না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কোভিড বিধিনিষেধকে যেন ‘প্রহসনে’ পরিণত করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সামাজিক দূরত্ব অগ্রাহ্য করে, মাস্ক না পরে ঘেঁষাঘেষি ভাবে গঙ্গায় স্নান করেছেন। প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভমেলা হয়। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী শাহি স্নানের জন্য আসেন হরিদ্বারে। কিন্তু এ বারের কুম্ভমেলা একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে হচ্ছে। দেশে করোনার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তাই গঙ্গার সমস্ত ঘাটে কোভিড বিধি মেনে চলার নির্দেশিকা জারি করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বড় জমায়েত এড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পুণ্যার্থীদের অনেকেই বলছেন, বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। বাস্তবেও তাই দেখা গেল।

তবে খুশির খবর কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের পর করোনা মোকাবিলায় রাশিয়ায় তৈরি স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিল দেশের কোভিড সম্বন্ধীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। ফলে এই নিয়ে ভারতে ছাড়পত্র পেল করোনার তৃতীয় ভ্যাকসিন । এ বার ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) অনুমতি দিলেই ভারতের তৃতীয় টিকা হিসেবে ব্যবহার করা হবে স্পুটনিক ভি-কে। এর ফলে এদেশে টিকার চাহিদা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনকে জরুরিকালীন ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সিডিএসসিও (সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন)-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি।। এবার ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-এর তরফে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র প্রয়োজন। তবে ছাড়পত্র দিলেও ভারতে কবে থেকে এর ব্যবহার শুরু হবে এবং কবে এ দেশের বাজারে স্পুটনিক ফাইভ পাওয়া যাবে, তা জানানো হয়নি। ইতিমধ্যেই ভারত টিকা তৈরিতে বিশ্বের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত টিকার একটা বড় অংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। সেই পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়েই এবার হয়তো দ্রুত স্পুটনিক ভি ভারতের বাজারে আসবে।

হায়দরাবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরি এই ভ্যাকসিন ভারতে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল।  ভারতে স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য রাশিয়ার ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)-এর সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে হাত মিলিয়েছিল  ডক্টর রেড্ডিস। এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯১.৬ শতাংশ এবং ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ভেনেজুয়েলা ও বেলারুশে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালানো হচ্ছে।  রাশিয়ার এই টিকা ৫৯টি দেশে ব্যবহার হচ্ছে । স্পুটনিক ফাইভের ওয়েবসাইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতে বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এরইমধ্যে স্পুটনিক ফাইভ টিকার অনুমোদনে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য মিলবে। স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনকে জরুরিকালীন ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সিডিএসসিও (সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন)-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি।। এবার ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-এর তরফে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই ভারত সফরে এসে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লেভরভ জানিয়েছিলেন যে, কোভিড ১৯ প্রতিরোধক স্পুটনিক ফাইভ টিকার ৭০ কোটি ডোজ উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। এখন সেই ভ্যাকসিন ভারতে ছাড়পত্র পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *