BRAKING NEWS

চিরঘুমে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতন

কলকাতা, ১৩ আগস্ট (হি.স.): চিরঘুমে শায়িত হলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)-র বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| ২০০৪ সালে সর্বসম্মতিক্রমে লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হন তিনি| ১৯৬৮ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি| ১৯৭১ সালে লোকসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন| সিপিআই (এম) সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে তাঁর অন্তর্ভুক্তি হয় লোকসভায়| ১৯৭১ সাল থেকে ২০০৯ সাল- দশবার লোকসভায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| শুধুমাত্র ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়| সেবার ৪৯.৮ শতাংশ ভোটদাতার সমর্থন পেয়ে ১৯,৬৬০ ভোটে সোমনাথকে হারিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মমতা| সোমনাথকে পরাজিত করে প্রথমবার লোকসভায় পা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়|

১৯২৯ সালের ২৫ জুলাই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অসমের তেজপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| তাঁর বাবা নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পেশায় আইনজীবী ছিলেন| অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা-র প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়| ১৯৪৮ সালে জওহরলাল নেহরু নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সরকার কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়াকে ব্যান করে দেয়, গ্রেফতার করা হয় নেতাদের| তখনই সর্বভারতীয় সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন নির্মলবাবু| মিত্র ইন্সটিটিউশন স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান লণ্ডনে| কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্যাকটিস করতে থাকেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়|

১৯৬৮ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| ১৯৬৮-২০০৮ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই (এম)-র সদস্য ছিলেন তিনি| ১৯৭১ সালে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি| সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হন তিনি| ১৯৮৯-২০০৪ সাল পর্যন্ত সিপিএমের লোকসভার নেতা ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান তিনি| মোট দশবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন| ২০০৪ সালে শেষবার সাংসদ নির্বাচিত হন বোলপুর থেকে| ২০০৪ সালেই লোকসভায় সর্বসম্মতভাবে তিনি স্পিকার হন| ২০০৮ সালে ইউপিএ সরকার থেকে সিপিএম সমর্থন তুলে নেওয়ার পরেও তিনি স্পিকার পদে রয়ে গিয়েছিলেন| যার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করেছিল তত্কালীন সিপিএম নেতৃত্ব|

১৯৬৬ সালে বিশিষ্ট সাংসদ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে| ২০০৪ সালের পর লোকসভা নির্বাচনের পর ওই বছরের ৪ জুন প্রোটেম স্পিকার হিসেবে নিযুক্ত হন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| ১৪ তম লোকসভায় তিনি নির্বাচিত হন স্পিকার হিসেবে| গণেশ বাসুদেব মাভালঙ্কার পর তিনিই প্রথম প্রোটেম স্পিকার যাঁকে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত করে লোকসভা| লোকসভার স্পিকার হিসেবে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কার্যকালের মেয়াদ ছিল এককথায় ‘ঐতিহাসিক’| তিনি স্পিকার থাকাকালীন জাতীয় কোষাগার থেকে শৌচালয়ের জিনিসপত্র ও চায়ের খরচ দেওয়ার অভ্যাস করেন| বিদেশ সফরে কোনও সাংসদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য গেলেই তাঁকে তাঁর খচর বহন করতে হবে বলে সওয়াল করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়|

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কঠিন পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হতে হয়েছিল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে| ইউপিএ সরকার থেকে সিপিএম সমর্থন তুলে নেওয়ার পরেও তিনি স্পিকার পদে রয়ে গিয়েছিলেন| ফলস্বরূপ ২০০৮ সালে তাঁকে বহিষ্কার করেছিল তত্কালীন সিপিএম নেতৃত্ব| এই ঘটনার পরই সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান তিনি| সোমনাথের মতে, ওই দিনটি ছিল ‘জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিনগুলির মধ্যে একটি’|

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়| ২০০৬ সেপ্টেম্বর মাসে নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন সোমনাথ| সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত হয় ৫৩ তম সিপিএ সম্মেলন| এখানেই শেষ নয়, লোকসভার স্পিকার থানাকালীন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াসে শুভারম্ভ হয় লোকসভায় টিভি-র|

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *