একদিকে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে ধেয়ে আসছে সাইক্লোন ‘রেণু’, উত্তর ও পূর্ব ভারতে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্য্যয়ের আভাস

নয়াদিল্লী, ২০ মে৷৷ আগামী সাত দিনে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় ঘটবে বলে আবহাওয়া বিভাগ

বৃষ্টিস্নাত রাজপথ৷ শুক্রবার বিকালে আগরতলা শহরে তোলা নিজস্ব ছবি৷
বৃষ্টিস্নাত রাজপথ৷ শুক্রবার বিকালে আগরতলা শহরে তোলা নিজস্ব ছবি৷

জানিয়েছে৷ এমনিতেই সমগ্র উত্তর ভারতে তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়ছে৷ দিল্লী, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং গুজরাটে তাপমাত্রা ৫০ এর ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে৷ এদিকে, সাইক্লোন ‘রেণু’ ধেয়ে আসছে উড়িষার উপকূলবর্তী এলাকায়৷ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল এলাকা সাইক্লোন ‘রেণু’ বিধবস্ত করে এগিয়ে চলেছে উড়িষার দিকে৷ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী নেলোর জেলায় সাইক্লোন ‘রেণু’র কারণে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খঁুটি উড়ে গিয়েছে৷ বাড়ি-ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বিস্তীর্ণ এলাকজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোর জেলা তছনছ করে সাইক্লোন ‘রেণু’ উড়িষার উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়বে৷ ইতিমধ্যেই উড়িষার উপকূলবর্তী এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ এর কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ মৎসজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে৷ বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম মধ্য অংশে গভীর নিম্নচাপের কারণে এই সাইক্লোনের উৎপত্তি৷ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে আগামী চবিবশ ঘন্টায় দক্ষিণ এবং উত্তর উড়িষার অধিকাংশ স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত এবং পবল বেগে তুফান আসতে পারে৷ তামিলনাড়ুতেও উপকূলবর্তী এলাকায় তুফানের কারণে লাল সতর্কতা জারী করা হয়েছে৷ বিশাখাপট্টনমে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ উঠছে৷
ইতিমধ্যে উড়িষা, পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাইক্লোন ‘রেণু’র সতর্কতা জারী করেছে৷ ত্রিপুরাতেও আগামী চবিবশ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ দিনের বেলায় প্রায় ১০৭ এমএম এবং রাতে ২০ এমএম বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আগরতলা বিমানবন্দরস্থিত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে৷ এই বৃষ্টিপাতের সাথে প্রবল বেগে ঝড়ও বইতে পারে৷ তাতে আগামী চবিবশ ঘন্টায় রাজ্যে ভারী মাত্রায় ঝড় তুফানের সম্ভাবনা রয়েছে৷
একদিকে সাইক্লোন ‘রেণু’ এবং ভারী বৃষ্টিপাতে চিন্তিত পূর্বভারত, অন্যদিকে উত্তর ভারত তীব্র দাবদাহে কাহিল হয়ে পড়েছে৷ দিল্লীসহ ছয়টি রাজ্যে তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রাজস্থানে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রী সেলসিয়াস৷ প্রচন্ড গরমে রাজস্থানের জালোরে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে৷ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে দিল্লী, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবে আগামী সাত দিন তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী পার করবে৷ জানা গিয়েছে, রাজস্থানের কোথাও তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রীর নীচে নয়৷ আবহাওয়া বিভাগ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আগামী কয়েকদিন প্রচন্ড গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷ এদিন, হরিয়ানার হিসারে ৪৬ ডিগ্রী, পাঞ্জাবের অমৃতসরে ৪৩৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা গিয়েছে৷ এদিকে, দিল্লীতে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রী পার করেছে৷ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে আমেদাবাদে গরম একশ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে৷ সেখানে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রীতে পৌঁছেছে৷ এর আগে ১৯১৬ সালের ২৭ মে আমাদেবাদে সর্বোচ্চ ৪৭৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা গিয়েছিল৷ দাবদাহ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে রাজস্থানে৷ বিকানীর, বার্মের, গঙ্গানগর এবং জয়সলমিরে তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রী ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ রাজস্থানেরই চুরুতে তাপমাত্রা ৫০২ ডিগ্রীতে পৌঁছেছে৷ এছাড়া রাজ্যের ফলোদিতে তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রীতে পৌঁছেছে৷ তীব্র দাবদাহের কারণে দিল্লীতে সমস্ত সুকল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারী করা হয়েছে৷ গরম কমলে পুনরায় সুকলগুলি শুরু হবে৷ এদিকে উত্তরপ্রদেশে তীব্র দাবদাহে কুড়ি জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট এবং দিল্লীতে লু চলছে৷
একদিকে, উত্তর ভারত গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছে, অন্যদিকে উড়িষাসহ পূর্ব ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন মারাত্মক বিপর্য্যস্ত হয়ে পড়বে৷ আবহাওয়া বিভাগ আশঙ্কা করছে সাইক্লোন ‘রেণু’ ১১০ কিমি প্রতিঘন্টা গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে উড়িষার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে৷ ফলে একদিকে গরম অন্যদিকে ভারী বৃষ্টির সাথে সাইক্লোন আগামী কয়েকদিনে দেশের কিছু রাজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে জনজীবনে৷
এদিকে, তাঁর সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বিপন্ন হতে পারে কমপক্ষে চার কোটি ভারতীয়৷ এই বিপদসসুকল এলাকার মধ্যে রয়েছে মুম্বাই ও কলকাতা৷ ক্রমাগত নগরায়নের ফলে আগামীদিনে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা বাড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে বলে এমনটাই রিপোর্টে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ৷
জলবায়ু পরিবর্তনের সব থেকে খারাপ প্রভাব প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পড়বে বলে এই রিপোর্টে জানানো হয়েছে৷ ২০৫০-র পর এর প্রভাব জনবসতির উপর পড়তে শুরু পারে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে৷ এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়নের প্রায় ১০টিও দেশে এর প্রভাব পড়ত পারে৷ আর সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ভারত৷ প্রভাব পড়বে কমপক্ষে চার কোটি মানুষের উপর৷ এছাড়া এই আওতায় রয়েছে বাংলাদেশের আড়াই কোটি মানুষ, চিনের ২ কোটি ও ফিলিপিন্সের দেড় কোটি নাগরিক৷ বলা হয়েছে, নগরায়ন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এশিয়ায় এই অবস্থা তৈরি করতে পারে৷
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েএছ, বারতের উপকূলবর্তী এলাকায় নগরায়নের ফলে স্বাভাবিক উপকূলবর্তী অবস্থা ব্যাহত হচ্ছে৷ এর ফলে ভারত বা চিনের মত দেশকে চরম অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে৷ ভারতের মধ্যে যে দুটি শহরের কথা মূলত বলা হচ্ছে, সেগুলি হল মুম্বাই ও কলকাতা৷ এছাড়া রয়েছে চিনের গুয়াংজু, সাংহাই, বাংলাদেশের৷ ঢাকা, মায়ানমারের ইয়াংগো, থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক, ভিয়েতনামের হাই ফোং শহরও৷ এ বিষয়ে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে৷