নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মে৷৷ বিদায় লগ্ণে ত্রিপুরা হাইকোর্টের মুখ্য বিচারপতি দীপক গুপ্তা অভিজ্ঞতার ডালি উপহার

দিয়েছেন৷ তিনি রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ও সরকারী আইনজীবীদের অদক্ষতার কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেছেন, পুলিশী ব্যর্থতার কারণে বহু অপরাধী সাজা পাচ্ছে না৷ একই রকম সরকারী আইনজীবীদের অদক্ষতার কারণে অপরাধীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সাজার হার নিয়ে এই অভিমত ব্যাক্ত করেছেন৷
বুধবার রাজ্যত্যাগের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদায়ী মুখ্য বিচারপতি৷ এই সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরায় দীর্ঘ তিন বছরের কার্য্যকালের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি৷ কিন্তু, সাজার হার নিয়ে প্রশ্ণে বিদায়ী মুখ্য বিচারপতির প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং অবহেলা ফুটে উঠেছে৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যে ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর হচ্ছে না৷ যতক্ষণ না এফআইআর হবে ততক্ষণ ঐ ঘটনার তদন্ত শুরু হবে না৷ [vsw id=”49cjvmNP8wk” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]আর তদন্ত শুরু হতে যত দেরী হবে তথ্য প্রমাণাদি লোপাট ততটাই সহজ হবে৷ ফলে যথাসময়ে এফআইআর না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই তদন্তে সঠিক প্রমাণ পুলিশের হাতে আসে না৷ তদরূপ কোন মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে সরকারী আইনজীবীদের দক্ষতার অভাবে অনেক সময়ই বহু মামলায় প্রকৃত অপরাধীর সাজা হয় না৷ এক্ষেত্রে তিনি সরকারী আইনজীবী নিয়োগে নির্দিষ্ট দক্ষতা বিচার করা হচ্ছে না৷ কারণ, এই ধরনের আইনজীবীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা বা দক্ষতা যাচাইয়ের কোন পরীক্ষা ইত্যাদি নেওয়া হয়না৷ কিন্তু, সাজার হার প্রশ্ণে রাজ্য সরকারকে সবচেয়ে বেশী অস্বস্তিতে ফেলেছে পুলিশের তদন্তে দুর্বলতা নিয়ে বিদায়ী মুখ্য বিচারপতির মন্তব্যে৷ তিনি স্পষ্ট জানান, বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের তদন্তে যথেষ্ট দুর্বলতা বারবার প্রমাণিত হয়েছে৷ আদালতে অপরাধীকে সাজা দিতে গেলে পুলিশের তদন্ত সঠিক ভাবে হওয়া প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতাই যে সাজার হার নিম্নমুখী হওয়ার মুখ্য কারণ তা আজ তাঁর বক্তব্যে প্রমাণিত৷
অবশ্য সাজার হার নিম্নমুখী হওয়ার আরও একটি কারণ হল, বহু মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হন না৷ তবে এর জন্য তিনি রাজ্য সরকারকে কোনভাবেই দায়ী করেননি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে আর্থিক দিক দিয়ে অস্বচ্ছল মানুষ আদালতের দরজায় আসতে চান না৷ আবার সচেতনতার অভাবেও মানুষ আইনের অধিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ তিনি বলেন, বিশেষ করে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদালত বিমুখতার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ এই জন্য সকলকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, রাজ্যে নারী সংক্রান্ত অপরাধ ক্রমশ উর্দ্ধমুখী হওয়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি৷ এক্ষেত্রে বৈবাহিক সমস্যা নারী সংক্রান্ত অপরাধের অন্যতম মুখ্য কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর মতে বৈবাহিক সম্পর্কে সমঝোতা খুবই প্রয়োজন৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই সমঝোতা বা বোঝাপড়া নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হয়ে থাকে৷ এর জন্য অবশ্য বর্তমান সময়ের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের যে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে তাও অনেকটা প্রভাব ফেলে৷
এদিন তিনি জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রথম মুখ্য বিচারপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেন৷ গত তিন বছরে ৬ হাজার ৬১৫টি মামলার মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৮০৪টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷ ২ হাজার ১১৩টি মামলা পাঁচ বছরের পুরনো ছিল, যেগুলির নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং বাকি রয়েছে মাত্র ৯০টি মামলা৷ তিনি দাবি করেন, ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রতি রাজ্যবাসীর আস্থা বেড়েছে৷ আগে জনস্বার্থ মামলা মানুষ তেমন একটা জানতেন না৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট স্থাপিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন৷ এদিন তিনি জানান, গত তিন বছরে এরাজ্যে অনেকটা ভাল সময় তিনি কাটিয়েছেন৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট থেকে বদলী হয়ে ছত্তিশগড় হাইকোর্টে যাচ্ছেন৷ আগামী ১৬ মে তিনি ছত্তিশগড় হাইকোর্টে মুখ্য বিচারপতি পদে শপথ নেবেন৷ উল্লেখ্য, ত্রিপুরা হাইকোর্টে নতুন মুখ্য বিচারপতি পদে দায়িত্ব নিতে চলেছেন তিনলিয়াংথাং ভাইপেই৷ আগামী ২৩ মে এর মধ্যে তিনি দায়িত্ব নেবেন৷

