আগরতলা, ১৭ এপ্রিল (হি. স.) ৷৷ করোনা-র প্রকোপ সারা দেশের সাথে ত্রিপুরা-তেও বেড়ে চলেছে৷ তাই, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি এখনই সেরে নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ করোনা-র যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রিপুরা সরকার প্রস্তুত রয়েছে, আজ দৃঢ়তার সাথে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তাঁর দাবি, হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর-র পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্যে৷ শুধু তাই নয়, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে ওই আশঙ্কা থেকে চিকিতা-র জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
এদিন তিনি জানান, গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ত্রিপুরায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩৯৩৩৷ তাদের মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৩৷ তবে, সক্রিয় রোগীদের মধ্যে মাত্র ৪৭ জন হাসপাতালে চিকিতাধীন রয়েছেন৷ বাকি-রা বাড়িতে আইসোলেশন-এ রয়েছেন৷ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৬০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷
ত্রিপুরায় করোনা পরিস্থিতির গত এক বছরের পরিসংখ্যান তুলে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, মাঝে একটা সময় করোনা পুরো নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ কিন্ত, সম্প্রতি পুণরায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ তাঁর দাবি, ২০২০ এপ্রিল-এ করোনা আক্রান্তের হার ছিল ০.০৬ শতাংশ৷ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত ওই হার বেড়ে হয়েছিল ১১.৮৪ শতাংশ৷ কিন্ত, অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আক্রান্তের নিম্নমুখী হয়ে দাড়িয়েছিল ০.৩০ শতাংশ৷ তবে, ওই হার এখানেই থেমে থাকেনি৷ ফেব্রুয়ারি থেকে পুণরায় বেড়ে হয়েছিল ০.৪৭ শতাংশ৷ যা মার্চ-এ বেড়ে ০.৫১ শতাংশ এবং গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত আরো বেড়ে হয়েছে ১.৯৭ শতাংশ৷
তাঁর দাবি, করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে৷ কিন্ত, করোনা মোকাবিলায় ত্রিপুরা সরকার সম্পুর্ন ভাবে প্রস্তুত রয়েছে৷ তিনি বলেন, এই মুহুর্তে জি বি হাসপাতালে চিকিতার জন্য শয্যা ৫০৯টি, ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে শয্যা ১৭৫টি, তার মধ্যে অক্সিজেন-র ব্যবস্থা রয়েছে ১২১টি, আইসিইউ-তে শয্যা ৫৪টি এবং ভেন্টিলেটর রয়েছে ৩০টি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, শালবাগান স্থিত বিএসএফ-র ডেডিকেটেড কোভিড হেলথ কেয়ার সেন্টার-এ অক্সিজেন-র সুবিধা যুক্ত ১৫০টি শয্যা এবং আইএলএস হাসপাতালে ২০টি শয্যা রয়েছে করোনা আক্রান্তের চিকিতার জন্য৷
তিনি জানান, এছাড়াও কোভিড কেয়ার সেন্টার আমবাসা-য় ৫০ শয্যা, এডিনগর স্থিত পিআরটিআই-র নতুন ভবনে ৬৪টি শয্যা এবং আইসোলেশন সেন্টার পিআরটিআই মহিলা হোস্টেল-এ ৫০টি শয্যা অতিরিক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ২১০০ শয্যা প্রস্তুত করা-র ব্যবস্থা রয়েছে৷
তাঁর কথায়, বর্তমানে প্রত্যেক রাজ্যিক হাসপাতাল এবং সিপাহীজলা ও পশ্চিম জেলা বাদে সমস্ত জেলা হাসপাতালে, ২২টি সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, ১২টি মহকুমা হাসপাতালে, ১১৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং বিমান বন্দর, রেলওয়ে স্টেশন ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট ও চুরাইবাড়ি গেট-এ করোনা-র নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে৷ পরিকাঠামোগত গত বছরের পরিস্থিতি-র তুলনা টেনে এনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের মার্চ-এ ত্রিপুরায় ১টি মাত্র আরটি-পিসিআর যন্ত্র ছিল৷ এখন ৭টি আরটি-পিসিআর যন্ত্র রয়েছে৷ তার মধ্যে এজিএমসি-তে ৫টি ধর্মনগর-এ ১টি এবং ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি যন্ত্র রয়েছে৷ তিনি জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই যন্ত্রটি চালু হয়ে যাবে৷
সাথে তিনি যোগ করেন, ট্রু-নেট ১০টি এবং সিবি-নেট যন্ত্র ৬টি রয়েছে৷ এছাড়া এন্টিজেন কিট ৪২৩৯২টি এবং আরটি-পিসিআর কিট ২৫২০৩টি রয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৬টি ভেন্টিলেটর রয়েছে৷ তার মধ্যে ১৭টি শুধু মাত্র করোনা চিকিতায় প্রস্তুত রয়েছে৷ এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১৯০৬টি৷ তিনি বলেন, অক্সিজেন সরবরাহ সঠিক ভাবে পরিচালনায় নোডাল অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে৷ বরিষ্ঠ আধিকারিক ডা: বিশাল কুমার-কে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷
তাঁর বক্তব্য, করোনা প্রকোপ-এ গত বছর আমাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না৷ কিন্ত, গত বছর-র অভিজ্ঞতা-কে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুতি এখন থেকেই নিয়ে রেখেছে ত্রিপুরা সরকার৷ পরিস্থিতি যেমন-ই হোক, শক্ত হাতে তার মোকাবিলা করা হবে৷