আগরতলা, ২১ এপ্রিল (হিঃসঃ)৷৷ ‘শখে বের হইনি বাবু, পেটের তাগিদে, ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি৷ কিন্ত, রোজগার হল কোথায়?’ মঙ্গলবার আগরতলায় রোজগারের জন্য বের হয়ে অসহায় রিকশা চালকদের মধ্যে শুধুই অন্ধকার৷ সত্যিই কি করোনা মোকাবিলায় গরিব মানুষগুলি লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে পরবে? আজ সেই প্রশ্ণ ভারতবর্ষকে নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷ লকডাউন চলাকালীন কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ তাতে, রিকশা শ্রমিকদের রোজগারের ধান্দায় বাড়ি থেকে বের হয়ে শূন্য হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে৷ কারণ, গণ-পরিবহণে ছাড় দেওয়া হয়নি৷ অবশ্য করোনা মোকাবিলায় এই কঠোর অবস্থান নেওয়া খুবই জরুরি৷ কিন্ত রোজগারহীন মানুষ কতদিন এই ধাক্কা সহ্য করতে পারবেন, তা আজ থেকে নতুন করে ভাবতে হবে বলেই মনে হচ্ছে৷
আজ আগরতলাকে দেখে মনে হচ্ছিল না লকডাউন জারি রয়েছে নাকি প্রত্যাহৃত হয়েছে৷ কারণ, সকালের দিকে মানুষের গতিবিধি ছিল মারাত্মক৷ বিশেষ করে প্রচুর রিকশা শ্রমিক আজ পথে নেমেছেন৷ ছোট গাড়ি, টমটম (ই-রিকশা) ইত্যাদিও রোজগারের ধান্দায় কিছু পথে নেমেছে৷ কিন্ত প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে তাঁদের রোজগার সম্ভব হয়নি৷ কারণ, রিকশায় যাত্রী তুলেও নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ৷ ফলে যে আশায় রিকশা শ্রমিকরা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, কার্যত হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের৷
নাগেরজলা, মহারাজগঞ্জ বাজার এলাকায় আজ প্রচুর রিকশা এবং কিছু টমটম দেখা গিয়েছে৷ কিন্ত পুলিশি হস্তক্ষেপে কেউই রোজগার করতে পারেননি৷ এ-বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জনৈক রিকশা শ্রমিক বলেন, লকডাউন চলছে, তাই এতদিন আমরা বাড়ি থেকে বের হয়নি৷ কিন্ত, এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে৷ কারণ, সরকার থেকে শুধু চাল দেওয়া হচ্ছে৷ বাচ্চাদের শুধু ভাত কী করে খাওয়াই? তাঁর এই সহজ প্রশ্ণের উত্তর হয়ত কারোর কাছে থাকার কথা নয৷ কারণ, করোনা মোকাবিলায় সরকার থেকে দুস্থদের যতটা সম্ভব সহায়তার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না৷ কিন্ত, এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সরকারি সহায়তা জীবনজীবিকার প্রশ্ণে যথেষ্ট নয়৷
এক রিকশা শ্রমিকের দাবি, দিল্লি-মুম্বাইয়ে করোনা-র প্রকোপ দেখা দিয়েছে৷ ত্রিপুরা সেই তুলনায় অনেক ভালও অবস্থায় রয়েছে৷ তবে কেন ত্রিপুরায় লকডাউন বাতিল করা হচ্ছে না৷ ওই রিকশা শ্রমিকের কথায়, সন্তানের জন্য ওষুধ কিনতে হবে৷ কিন্ত, আজ রোজগার হয়নি৷ তাই ভেবে পাচ্ছি না, রিকশার মালিককে ভাড়া কীভাবে মিটিয়ে দেব এবং ওষুধই-বা কীভাবে কিনব৷ তিনি বলেন, যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলাম, কিন্ত পুলিশ এসে রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে৷
তাঁরাও বুঝতে পারছেন, করোনা মোকাবিলায় সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে৷ কিন্তু পেটের তাগিদে তাঁদের রোজগারের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়া ছাড়াও কোনও উপায় নেই৷ আপাতত ৩ মে পর্যন্ত সারা দেশেই লকডাউন চলবে৷ কিন্ত করোনা মোকাবিলায় ভবিষ্যতে নতুন কী সংকট বয়ে আনবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না৷