করোনা-রোধে যুদ্ধসদৃশ তৎপর অসম, রাতারাতি তৈরি হচ্ছে ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র

গুয়াহাটি, ২৬ মার্চ (হি.স.) : কোভিড-১৯ সংক্রমণ অসমে যাতে বিস্তৃত হতে না পারে সেজন্য যুদ্ধসদৃশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সন্দেহজনক কোনও সংক্রমিত ব্যক্তিকে নিরীক্ষণের আওতায় রাখতে রাতারাতি তৈরি করা হচ্ছে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র। জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। বৃহস্পতিবার সকালে গুয়াহাটির সরুসজাইয়ে ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নির্মীয়মাণ অস্থায়ী কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রের কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।

বৃহস্পতিবার সকাল প্ৰায় ১০টায় স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট আধিকাকিরদের সঙ্গে নিয়ে সরুসজাইয়ে নির্মীয়মাণ কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অসমে করোনা-১৯ প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে তার তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী। জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই কেন্র্ী নিৰ্মাণের কাজ সম্পূৰ্ণ হয়ে যাবে। এখানে সন্দেহভাজন করোনাক্রান্তদের জন্য ল্যাট্ৰিন, বাথরুম সব কিছুর উন্নত সুবিধা থাকবে। গোটা কেন্দ্রকে সম্পূৰ্ণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্ৰী। বলেন, প্ৰথম দফায় ২০০টি ল্যাট্ৰিন ও বাথরুম তৈরি করা হবে। পরবৰ্তীতে রোগীদের কক্ষের সঙ্গে আলাদা করে একেকটি করে ল্যাট্ৰিন বাথরুমের ব্যবস্থা থাকবে।

কথা প্রসঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন ড. শর্মা। তিনি বলেন, গোটা দেশের সঙ্গে অসমে করোনা ভাইরাস যাতে প্রবেশ না করে তার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সতর্কতা। মন্ত্রী এক এক করে জানান, এ মুহূর্তে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেবল করোনা ভাইরাসে আক্ৰান্তদের চিকিৎসা চলবে। এ জন্য নতুন ৩০টি আইসিইউ-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এভাবে, মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী হাসপাতালে (সরকারি) ব্যবস্থা করা হয়েছে ১৫০টি শয্যার। ১০টি আইসিইউ শয্যা তৈরি করা হয়ে গেছে। মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী হাসপাতালে প্ৰসূতি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, সরসজাই স্টেডিয়াম এবং নেহরু স্টেডিয়ামে মোট ১,০০০ শয্যাবিশিষ্ট কোয়ান্টারাইন কেন্দ্ৰও গড়ে তোলা হচ্ছে। সরুসজাইয়ের কেন্দ্রটি তৈরি হয়ে গেলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্য নেহরু স্টেডিয়ামে অনুরূপ টেন্ট তৈরির কাজ শুরু হবে। চতুর্থত, সদর গুয়াহাটির পার্শ্ববর্তী সোনাপুরে অবস্থিত জেলা হাসপাতালকে তৈরি করা হয়েছে কেবল করোনা-আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য৷ এছাড়া ওই হাসপাতালে নতুন ১০টি আইসিইউ শয্যা সংযোজন করা হয়েছে৷ পঞ্চমত, স্থানীয় কালাপাহাড়ে অবস্থিত ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতালেও করোনার চিকিৎসা হবে।

এভাবে কামরূপের শিঙিমারি আদৰ্শ হাসপাতাল, জালুকবাড়ির আয়ুৰ্বেদিক হাসপাতালকে কেবল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া উজান অসমের ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত চাবুয়ায় টাটা রেফারেল হাসপাতালও কেবলমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত৷ মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব জানান, অসমকে ২০০টি ভেন্টিলেটর সরবরাহ করবে টাটা। ইতিমধ্যে এ সম্পর্কে টাটা কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তাছাড়া রাজ্যের বাইরে আছেন এমন সচ্ছল অসমের বাসিন্দাদের ভেন্টিলেটর, পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট যোগান ধরার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে৷

রাজ্যে মোট ছয়টি হাসপাতালকে আইসোলেশন হাসপাতালে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছাড়া অন্য রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধ পেতে নিতে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া দরিদ্ৰ রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে বলে প্ৰস্তাব দেওয়া হয়েছে, জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রাসঙ্গক বক্তব্যে মন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, বেঙ্গালুরু, কেরালা প্রভৃতি বহিঃরাজ্য থেকে আগত হোম কোয়ান্টারাইনে রয়েছেন এমন মানুষজনকে সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে রাখতে এই নিঃসঙ্গ কেন্দ্র গড়া হচ্ছে। আরও জানান, অসম-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী শ্ৰীরামপুর গেট ও বক্সিরহাটে বহিঃরাজ্য থেকে আগত প্ৰায় ৭০০ জন আটকে রয়েছেন। এভাবে গুয়াহাটিতেও বহু মানুষ আটকে পড়েছেন। এ ধরনের বিপদাপন্ন মানুষকে এই সব অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *