চোরাচালানে অভিনবত্ব, সিলিন্ডারে ভরে ইয়াবা বিএসএফের পোশাকে জিপসিতে গাঁজা, ধৃত ৪

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি/ চড়িলাম/ তেলিয়ামুড়া, ১ মার্চ৷৷ অবৈধ নেশা কারবারীদের পাচার বাণিজ্য অব্যাহত৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে দিন রাত পুলিশ প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নেশা মুক্ত ত্রিপুরা করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক৷কিন্তু অবৈধ নেশা কারবারিরা তাদের নেশার পাচার বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে নিত্যদিন নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে যাচ্ছে৷ বহিঃ রাজ্য থেকে নেশা জাতীয় ফেনসিডিল ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইন রাজ্যে প্রবেশ করছে৷ তবে রাজ্য পুলিশ শক্ত হাতে নেশা কারবারি ও নেশাজাতীয় সামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হচ্ছেন৷


অপরদিকে রাজ্য থেকে নেশাজাতীয় গাঞ্জা বহি রাজ্যে প্রচার হচ্ছে৷ কখনো পন্যবাহী লড়ি ভেতর, কখনো ওয়েল ট্যাংকি গাড়ির ভেতর, কখনো এম্বুলেন্সের ভেতর করে অবাধে গাঞ্জা বহিঃ রাজ্য পাচার হলেও রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন গাঞ্জা প্রাচার রোধে শক্ত হাতে নেশা বিরোধী অভিযান চালিয়ে গাড়িসহ নেশাজাতীয় গাঞ্জা আটক করছেন৷কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগের নেশা কারবারিরা এক ধাপ এগিয়ে৷ এবার নতুন পন্থা অবলম্বন করে সীমান্ত সুরক্ষা সেনাবাহিনীর সাজে নেশা জাতীয় গাঞ্জা পাচার করছে৷ তবে কথায় আছে না চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন৷ অবশেষে গতকাল উত্তর জেলার ১৬৬ নং জি ব্রাঞ্চের বিএসএফ জওয়ানরা গোপন তথ্যের উপর ভিত্তি করে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর নকল পোশাক ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর নিলামের জিপসি গাড়ির ভেতর থেকে গাঁজাসহ দুই গাঁজা কারবারিকে আটক করতে সক্ষম হয়৷ নতুন কায়দায় গাঁজা পাচার করতে গিয়ে কদমতলা থানাধীন কদমতলা বাজার সংলগ্ণ এলাকা থেকে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর ১৬৬ নং জি ব্রাঞ্চের বিএসএফ জওয়ানদের হাতে আটক সোনামুড়া ও মেলাঘর এলাকার দুই যুবক৷ ধৃত দুই গাঞ্জা পাচারকারী নাম মোহাম্মদ আলম মিয়া ও জুটন ভৌমিক৷তাদের কাছ থেকে মোট ৩০ প্যাকেটে ৯৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে বিএসএফ জওয়ানরা৷ উদ্ধারকৃত গাঞ্জার বাজারমূল্য প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা৷


এদিকে ধর্মনগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজিব সুত্রধর জানান, ১৬৬ নং জি ব্রাঞ্চের বিএসএফ জওয়ানরা গোপন সূত্রের উপর ভিত্তি করে কদমতলা বাজার এলাকা থেকে ভুয়া বিএসএফ জওয়ান সেজে গাঁজা পাচারের সময় ৯৪ কেজি গাঁজাসহ ২ গাঞ্জা পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়৷ তাদের কাছ থেকে বিএসএফের নিলামের একটি গাড়িও উদ্ধার হয়৷ ওই জিপসি গাড়ি দিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঞ্জাগুলি আগরতলা থেকে নিয়ে বহিঃ রাজ্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল৷বিএসএফ জওয়ান সেজে গোটা রাজ্যও পেরিয়ে এসে গিয়েছিলো তারা৷ কিন্তু ত্রিপুরা অসম সীমান্ত কদমতলা এলাকায় আসার পর ১৬৬ নং জি ব্রাঞ্চের বিএসএফ জওয়ানরা ভুয়া বিএসএফ সাজে দুই গাঞ্জা পাচারকারীসহ বিপুল পরিমাণ গাঞ্জা আটক করতে সক্ষম হন৷তারপর ১৬৬ নং জি ব্রাঞ্চের বিএসএফ জওয়ানরা ধর্মনগর থানার হাতে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ দুই গাঞ্জা কারবারি ও জিপসি গাড়িটি হস্তান্তর করে৷ অপরদিকে ধর্মনগর থানার পুলিশ একটি এনডিপিএস মামলা হাতে নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে৷


এদিকে, ত্রিপুরায় এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় মাত্রায় নেশা সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে আজ৷ বিএসএফ ও ত্রিপুরা পুলিশের যৌথ অভিযানে দেড় লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে৷ যার বাজারমূল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা৷ সাথে পাচারে ব্যবহৃত গাড়ি ও গাড়ির চালককে আটক করেছে যৌথ বাহিনী৷
বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক অরুন কুমার ভর্মা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা খবরের ভিত্তিতে অসম থেকে সোনামুড়া সীমান্তে ইয়াবা পাচারের সময় ওই ইয়াবা ৮উদ্ধার হয়েছে৷ তিনি বলেন, পাচারের বিষয়ে ত্রিপুরা পুলিশকেও জানানো হয়েছিল এবং তাদের সহযোগিতায় ওই সাফল্য মিলেছে৷ তাঁর কথায়, বিএসএফ গোকুলনগর সেক্টর হেড কোয়ার্টার, ১৩০ নম্বর ব্যাটালিয়ান এবং বিশালগড় মহকুমা আধিকারিক বিশালগড় থানার ওসি, আমতলী থানার ওসি এবং মধুপুর থানার ওসি-কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নাকা পয়েন্ট তৈরি করা হয়৷ দুপুর ১২টা নাগাদ একটি মারুতি ইকো ভ্যান থেকে ওই ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে৷


তিনি বলেন, বিএসএফ-র গকুলনগরস্থিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার মেইন গেইটের কাছে জাতীয় সড়কে ওই ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে সিএনজি সিলিন্ডারের ভেতরে ১টি প্যাকেটে ১ লক্ষ ৫০ হাজার উদ্ধার হয়েছে৷
তিনি বলেন, সিএনজি সিলিন্ডারে চার কোন ছিদ্র করে ইয়াবাগুলো রাখা হয়েছিল৷ তাঁর দাবি, ওই ইয়াবার বাজারমূল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ইয়াবা পাচারে ব্যবহৃত গাড়ি এবং গাড়ির চালক জাহিদ হোসেন(২৭)-কে আটক করা হয়েছে৷ ইয়াবা ট্যাবলেট, গাড়ি ও গাড়ির চালককে বিশালগড় থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি৷
অন্যদিকে, তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রচুর নেশা সামগ্রী সহ দুই নেশা পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে৷ তেলিয়ামুড়ার এসডিপিও সোনাচরণ জমাতিয়া, ওসি স্বপন দাস সহ পুলিশ কর্মীরা সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে তেলিয়ামুড়া থানাধিন গৌরাঙ্গটিলাতে অজয় সরকারের বাড়িতে হানা দেন ঐ বাড়িতে হানা দিয়ে ২৫২ কোটা ড্রাগস, ৫ বোতল কোরেক্স এবং নগদ ৪৮,৫০০ টাকা উদ্ধার করেন৷


তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রে জড়িত থাকা আরও কয়েকজনের নাম জানতে পারে৷ তার স্বীকারোক্তি মূলে তাকে সঙ্গে নিয়ে চাকমাঘাটে মিঠন নাথের বাড়িতে হানা দিয়ে ২৬ গ্রাম ড্রাগস এবং নগদ ১৭ হাজার টাকার সহ আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্ধার করে পুলিশ৷ এছাড়া, আরও এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়৷


এব্যাপারে এনডিপিএস ধারায় মামলা গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷ দুটি জায়গা থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা নেশা সামগ্রী এবং নগদ ৬৫,৫০০ টাকার সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ দীর্ঘদিনবাদে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেয়েছে৷ নেশার কবলে পড়ে যুব সমাজ ধবংসের পথে এগোচ্ছে৷ রাজ্যসরকার রাজ্যকে নেশামুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ রাজ্য সরকারের নেশামুক্ত রাজ্য গঠনের অঙ্গ হিসেবেই এই সফল অভিযান বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *