কাঞ্চনপুর ও গন্ডাছড়ায় অশান্তির কালো ছায়া, দুঃশ্চিন্তায় প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ ডিসেম্বর ৷৷ রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে৷ কিন্তু, কাঞ্চনপুর এবং গন্ডাছড়া রাজ্যবাসীকে চিন্তায় রেখেছে৷ কাঞ্চনপুরে আজকেও কার্যত বনধের পরিস্থিতি ছিলো৷ কারণ, সকালে ও বিকালে এক ঘন্টা করে বাজার খোলা ছিল৷ এদিকে, গন্ডাছড়ায় ফসল নষ্ট করে ফেলায় প্রশাসন থেকে পরিস্থিতি সামলাতে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হচ্ছে৷ তবুও, গন্ডাছড়ায় পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি৷ স্বাভাবিক ভাবেই কাঞ্চনপুর ও গন্ডাছড়া মূল স্রোতে কবে ফিরবে প্রশাসন তার কিনারা করতে পারছে না৷ এরই মধ্যে আজ ফের কাঞ্চনপুরে নাগরিক মঞ্চ রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের দাবিতে সরব হয়েছে৷ কাঞ্চনপুর এবং রাইমাভ্যালির বিধায়কদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে৷


গতকাল থেকে কাঞ্চনপুরে নাগরিক মঞ্চ বনধ পালন করছে৷ বাজারহাট খুলছেন না ব্যবসায়ীরা৷ আজ সকালে এবং বিকালে ১ ঘন্টার জন্য বাজার খুলেছিল৷ তবে, গোটা রাজ্যের সাথে কাঞ্চনপুর রীতিমতো বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে৷ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আজ কাঞ্চনপুরে রেভিনিউ ডাকবাংলোতে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আধিকারীকরা বৈঠক করেছেন৷ মূলত, রিয়াং শরণার্থীদের বিরুদ্ধেই কাঞ্চনপুরবাসীর ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে৷ কারণ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধীতায় বনধ চলাকালীন রিয়াং শরণার্থীদের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন কাঞ্চনপুরবাসী৷ গতকাল দশদায় শান্তি বৈঠকেও রিয়াং শরণার্থীদের নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে৷


সূত্রের খবর, আজ উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক, উত্তর ত্রিপুরার জেলা পুলিশ সুপার, কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক সহ পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারীকরা দীর্ঘ বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে কাঞ্চনপুরের চলমান অচলাবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে৷ সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকে কাঞ্চনপুরের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি৷ নাগরিকমঞ্চের জনৈক সদস্য জানিয়েছেন, রিয়াং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে কাঞ্চনপুরে এই অচলাবস্থা জারি থাকবে৷ তিনি হতাশার সুরে বলেন, কাঞ্চনপুরবাসীর পিঠ দেয়ালে ঠেঁকে গেছে৷ কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, স্থানীয় বিধায়কের এই ভয়ংকর সমস্যা নিয়ে উদাসীনতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তার বক্তব্য, রিয়াং শরণার্থীদের জন্য স্থানীয় বিধায়ককে ছঁুটে আসতে দেখা যাচ্ছে৷ অথচ, বনধ চলাকালীন উদ্বাস্তু পরিবার গুলি এখনও বাড়ি ঘড় ছেড়ে শরণার্থীর মতো জীবন যাপন করছেন৷ তারা আনন্দ বাজার থানা এবং পাশ্ববর্তী দুটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তাতে স্থানীয় বিধায়কের কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷


এদিন নাগরিক মঞ্চের ডাকা বনধে কাঞ্চনপুরে যানবাহন চলাচল প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল৷ টানা দুই দিন ধরে এই পরিস্থিতিতে কোনও বদল হচ্ছে না৷ বরং মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ প্রশাসন অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করছে না৷ পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তাও জানা যাচ্ছে না৷
এদিকে গন্ডাছড়াতেও একই পরিস্থিতি কায়েম হয়েছে৷ বনধের ভয়াবহতায় প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে৷ আজ ডিসিএম ও মহকুমা শাসক এবং কৃষি দপ্তরের আধিকারীকরা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে গিয়েছিলেন৷ অন্তত, ২৫ জন কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ গন্ডাছড়ায় ২০কার্ড এলাকায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে গিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেড়েছেন প্রশাসনিক আধিকারীকরা৷ তবে, কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়ে এসেছেন৷


কাঞ্চনপুর এবং গন্ডছড়ার উদ্ভুত এই পরিস্থিতি সহসা স্বাভাবিক করা না হলে সমস্যা জটিলাকার ধারন করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, রিয়াং শরণার্থীদের ত্রিপুরায় পুর্নবাসনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কৌশল অবলম্বন করতে হতে রাজ্য সরকারের৷ গুচ্ছ গ্রামে তাদের পুর্নবাসনের বদলে রিয়াং শরণার্থীদের সারা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে হবে৷ নইলে কাঞ্চনপুরে রিয়াং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *