BRAKING NEWS

বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে আপোশ, ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে চার দিনের বিশ্ব ইজতেমা

বাসুদেব ধর (ঢাকা), ১২ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে আপোশের শুরু হচ্ছে চার দিনের বিশ্ব ইজতেমা | টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্বের মুসলমানদের হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ভোরের নামাজের পরই আম বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এবার ইজতেমা বিরতি না দিয়ে দুই পক্ষের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। স্থির হয়েছে, প্রথম পক্ষ বাংলাদেশের মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের আগামি ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাত শেষে রাতের মধ্যে ময়দান ছেড়ে দিতে হবে আর ভারতের মওলানা সাদ কাদলম্বীর অনুসারীদের ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছরের ইজতেমার নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে। এবারের ইজতেমার নিরাপত্তায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে।


কথা ছিল প্রথম দুদিন এক পক্ষ এবং পরের দুদিন অন্য পক্ষ এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে। কিন্তু কোনও পক্ষই এই সিদ্ধান্ত মানছে না। নিজেদের মতো করে তারা তিন দিনের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। এমনকি আখেরি মোনাজাতও দুই পক্ষ আলাদা করার ঘোষণা দেয়। ইজতেমার তারিখের এই গরমিলের বিষয় সামনে আসে রবিবার বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) থেকে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর। সংগঠনটি তাবলিগ জামাতের মূল আমির ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভীর বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করছে। বেফাকের মজলিশে শুরার অধিবেশনের পর পাঠানো এই বিজ্ঞপ্তিতে তারা ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা সফল করার আহ্বান জানিয়েছে। অথচ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাদবিরোধীরা ইজতেমার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছেন ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি। মওলানা সাদপন্থীরা এমন ঘোষণাকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁদের ইজতেমাও তৃতীয় দিনে গড়াবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ১৭, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিন তাঁরা ইজতেমা করবেন।এদিকে ইজতেমা ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই মাঠের সকল কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এবার যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৩৮ টি ট্রেনের ব্যবস্থা করবে এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) ৩০০ বাস যাতায়াত করবে। মুসল্লিদের পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ৮ হাজার পাকা টয়লেট ও ১ এক হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওজু গোসলের জন্যও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবছর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই সকল প্রস্তুতি শেষ হবে।
দুই পক্ষের এমন অবস্থান এবং বেফাকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, চার দিনের ইজতেমার ব্যবস্থাপনাকে শুধু দুই পক্ষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। বেফাকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ইজতেমা বা তাবলিগ জামাতের সঙ্গে বেফাকের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা একটি পক্ষকে সমর্থন করছে। তাই বলে এমন তারিখ ঘোষণা দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তাবলিগের বিভেদ প্রকাশ্য হয় গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা থেকে। বিরোধিতার কারণে তখন বাংলাদেশে এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কওমি মাদ্রাসার আলেমদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর সাদের পক্ষে আছে তাবলিগ জামাতের নিয়মিত নেতাদের একটি অংশ। ধর্ম নিয়ে সাদের কিছু বক্তব্যের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই দিন ময়দানেই সাদের অনুসারী এক মুসল্লি নিহত হন। গুরুতর আহত আরেক মুসল্লি (সাদের অনুসারী) এক মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জানুয়ারি মারা যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *