নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারি৷৷ স্বর্ণরাজ্যে বাস করি, একথা সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ দৃঢ়তার সাথে জানালেন, এমন কোন প্রমাণ নেই কেউ কোথাও বলেছেন, যে আমরা স্বর্ণরাজ্যে বাস করছি৷ তাঁর বক্তব্য, সব করে ফেলেছি, এমনটা দাবি করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়৷ অনেক কিছু করা হয়েছে, কিন্তু আরো অনেক কাজ বাকি রয়েছে৷ সে সমস্ত অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চলছে৷ এজন্য তাঁর দাবি, রাজ্য মন্ত্রিসভার কোন সদস্য স্বর্ণরাজ্যে বাস করছি এমনটা বলেছেন তার কোন প্রমাণ নেই৷ বিধানসভায় বিরোধীরা রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক বক্তব্যে শাসক দলীয় নেতা এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের কটাক্ষ করে বলেছিলেন, সভা সমাবেশে ভাষণে বলা হয়ে থাকে আমরা স্বর্ণরাজ্যে আছি৷ বুধবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের এই ভাবেই জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সমালোচনাতেও মুখর হন৷ তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় চলার চেষ্টা করছে৷ রাজ্যগুলির সঙ্গে তারা কোন কথাই বলছেন না৷ প্ল্যানিং কমিশন বাতিল করে দিয়ে রাজ্যগুলিকে প্রচন্ড সমস্যায় ফেলে দিয়েছে৷ অথচ এই প্ল্যানিং কমিশন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করত৷ নীতি আয়োগ কার জন্য কাজ করছে তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছর ধরে আন্তঃ রাজ্য পর্ষদের কোন বৈঠক হচ্ছেনা৷ ৫/৬ মাস আগে যে বৈঠক হয়েছে তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি৷ জাতীয় সংহতি পর্ষদেরও কোন বৈঠক হচ্ছেনা৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও রাজ্য এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে৷ উন্নয়মূলক কাজও বন্ধ রাখা হয়নি৷ রাজ্য সরকার গরীব, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত সহ বিভিন্ন অংশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত রাখার পূর্বশর্তই হচ্ছে শান্তি-সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা৷ সবাই মিলেই এই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে৷ তবে একটা প্রতিক্রিয়াশীলচক্র চেষ্টা করছে শান্তি সুস্থিতির পরিবেশ নষ্ট করার জন্য৷ উন্নয়নমূলক কাজে সবার সহযোগিতা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এুটি দেখলে চিহ্ণিত করুন৷ সেগুলি দূর করে হাত ধরাধরি করেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যপালের ভাষণে দেশের প্রবহমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জটিল পরিস্থিতির প্রধান বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সরকার বলেন, কেন্দ্রের বর্তমান ক্ষমতাশীল দল যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল এখন তার সম্পূর্ণ উল্টো পথে চলেছে৷ কর্পোরেট সংস্থাগুলির স্বার্থে সমস্ত নীতিমালা প্রণীত হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে৷ জিনিষের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে৷ দাম কমাবার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেয়া দরকার তার কিছুই নেয়া হচ্ছেনা৷ মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে৷ টাকার মূল্য স্বাধীনতার ৭০ বছরে এত নীচে আর কখনও নামেনি৷ সব মিলিয়ে এক অরাজক অবস্থা চলছে৷ কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না৷ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে৷ বেকারীত্ব প্রতিনিয়তই বাড়ছে৷ ২২ থেকে ২৩ কোটির মত ছেলে, মেয়ে বেকার৷ লেবার ব্যুরো অব ইন্ডিয়ার তথ্যে দেখা যাচ্ছে গত ২ বছরে কাজের সুযোগ আরও সঙ্কুচিত হয়েছে৷ বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন দরকার৷ অথচ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা৷ ঘটনা হচ্ছে মানুষ এই পরিস্থিতি চুপচাপ বসে মেনে নিচ্ছেন না৷ প্রতিবাদ হচ্ছে৷ গত ২ বছরে ২টি বড় ধরনের ধর্মঘট হয়েছে সারা দেশে৷ কোটি কোটি মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন৷ কিন্তু এই লড়াই সংগ্রামের প্রবণতা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্য ধর্ম-বর্ণ- সম্প্রদায়ের কথা বলে মানুষকে বিভাজিত করার চেষ্টা হচ্ছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিমুদ্রাকরণ করা হয়েছে তার কোনটাই কাজে আসেনি৷ পাঁচশত, এক হাজার টাকার নোট পুরোটাই প্রায় ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে তাহলে কালো টাকা গেল কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কোন অসুবিধা হয়নি৷ সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছেন গরীব অংশের মানুষ৷ তিনি বলেন, বর্তমান কেন্দ্রের সরকার যখন দেখলেন বিমুদ্রাকরণের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে তখন ক্যাশলেস -র স্লোগান আনা হল৷ পৃথিবীর কোন দেশে সবটাই ক্যাশলেস -এ হচ্ছে এমন নিজর নেই৷ অথচ কেন্দ্রের সরকার এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্যই জোর দিচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবটি ধবনি ভোটে গৃহীত হয়৷ এর উপর আনা সংশোধনীগুলি ধবনি ভোটেই খারিজ হয়ে যায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর আগে রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক রমেন্দ্র নারায়াণ দেববর্মা৷
2017-02-23