গুয়াহাটি, ১৪ ফেব্রুয়ারি, (হি.স.) : অসমের অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা আরএসএসের প্রচারকের আদলে, তাঁদের ভাষায় আজকাল কথাবার্তা বলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন মু্খ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আজ মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঝাল মিটিয়েছেন তিনি। বলেন, অসমে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করছেন হিমন্ত। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর অপব্যাখ্যা করে বিভাদের বাতাবরণ তৈরির খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছেন তিনি।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট-বিতর্কের জবাবি ভাষণে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিশেষ প্রস্তাব রাখা হয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরে মন্ত্রী পালটা প্রশ্ন তোলে বলেছিলেন, আসলে অসমে সংখ্যালঘু কারা ? ধুবড়ি, বরপেটা, হাইলাকান্দি-সহ চার জেলায় কারা সংখ্যা লঘু? এই জেলাগুলিতে হিন্দুরা তো ইতিমধ্যে সংখ্যা লঘুতে পরিণত হয়েছেন। ঠিক সে ভাবে কামরূপ মহানগর, শিবসাগরের মতো জেলাগুলিতে সংখ্যা লঘু বলতে মুসলমানদের বোঝায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বরপেটা বা দক্ষিণ শালমারায় সংখ্যা লঘু কারা বলে জিগ্যেস করলে এর জবাব হয়ত কংগ্রেস বা এআইইউডিএফ বিধায়করা দিতে পারবেন না। অতএব রাজ্যের বর্তমান সরকার সংখ্যা লঘু নামক শব্দটি বাদ দিতে চাইছে। বরপেটায় যদি হিন্দুরা সংখ্যা লঘু, তা হলে সেখানে সংখ্যাল ঘুর সুযোগ-সুবিধা তাঁরাই পাবেন। সে ভাবে কামরূপ মহানগর বা শিবসাগরে মুসলমানরা যদি সংখ্যা লঘু হন তা হলে সেখানেও তাঁরা সংখ্যা লঘুর সুযোগ-সুবিধা পাবেন। অসমের বর্তমান সরকার সংখ্যা লঘু ও সংখ্যা গুরু — সকলের উন্নয়ন চায়।
তিনি বলেছিলেন, সংখ্যা লঘু ও সংখ্যা গুরুর এই কৃত্রিম বিশ্লেষণের বদলে বর্তমান সরকার স্বামী বিবেকানন্দ ও মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে এগিয়ে যেতে চাইছে। এই দুই মহামানব সংখ্যা লঘু ও সংখ্যা গুরুর পরিবর্তে দরিদ্র নারায়ণের উন্নয়নের কথাই বলে গিয়েছেন। তাই, এই সরকার তথাকথিত সংখ্যা লঘুর পরিবর্তে রাজ্যের দরিদ্র নারায়ণের উন্নয়ন সাধনে ব্রতী হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী ড হিমন্তবিশ্ব শর্মার সংখ্যা লঘু ও সংখ্যা গুরু সম্পর্কে এ ধরনের ব্যাখ্যা মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছে না কংগ্রেস বা এআইইউডিএফ। তাই তাঁর ওই ব্যাখ্যার প্রতিবাদ জানাতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে অর্থ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা কৃত যাবতীয় অনিয়মের ঘটনা তাঁর নখদর্পণে। সব জেনেও তিনি না জানার ভান ধরেছিলেন। সেই পাপ এখন তাঁকে পুড়ছে। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে এ ভাবেই তাঁর এককালের সতীর্থ, চোখের মণি ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে তুলোধোনো করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
গগৈয়ের ভাষায়, ‘কখন কার কোলে বসতে হয় তা খুব ভালো জানে হিমন্ত। কখন কাকে তৈলমর্দন করতে তা হিমন্তের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। প্ৰথমে হিতেশ্বরের (প্রয়াত তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের হিতেশ্বর শইকিয়া) গুণগান, তার পর আমার, এখন সৰ্বানন্দের গুণকীর্তন করে বেরাচ্ছে সে।’ বলেন, ‘আমার কার্যকালে যখন সে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিল তখন দেদার অনিয়মের নাটের গুরু ছিল এই হিমন্ত। সব দেখে ও শোনে আমি নীরব ছিলাম। এখন এই হিমন্তই নাকি সবচেয়ে সৎ মানুষ ! সে ভাবে, তাঁর মতো রাজনীতিক ভূ-ভারতে নেই। হিমন্তবিশ্বের টিভি চেনেলের সম্পত্তি কী করে হু হু করে বাড়ছে। তার সব খবর আমার কাছে আছে।’
2017-02-15