পূর্বোত্তরের বর্ণময় মিশ্র সংস্কৃতিকে সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশনের সুযোগ দিতে হবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জানুয়ারি৷৷ ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে এক বর্ণময় সমৃদ্ধ মিশ্র সংসৃকতির ধারা রয়েছে৷

মঙ্গলবার আকাশবাণী আগরতলা’র ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ নিজস্ব ছবি৷
মঙ্গলবার আকাশবাণী আগরতলা’র ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ নিজস্ব ছবি৷

আকাশবাণী ও দুরদর্শনে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে তা নানা ভাবে উপেক্ষিত৷ এই মিশ্র সংসৃকতিকে সমান গুরুত্ব দিঃেয় পরিবেশনের সুযোগ করে দিতে হবে৷ আজ সন্ধ্যায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২নং প্রেক্ষাগৃহে আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্রের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকেই আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্র ও রাজ্যের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি৷ মানু, আগ্রহ হারাচ্ছেন৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ৫০তম বর্ষপূর্তিতে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও মানুষের প্রত্যাশা পূরণ আগামী দিনে সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে৷ তা না হলে মানুষ এই শক্তিশালী গণমাধ্যমের উপর থেকে আস্থা হারাবেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আকাশবাণী একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা হলেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত সরকার৷ তিনি আকাশবাণী ও দূরদর্শনের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহানির্দেশকের ও ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শুধু আগরতলা কেন্দ্র নয় সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে ভাবতে হবে৷ এই অঞ্চলের সমস্যার কথা, মানুষের জীবন ধারার কথা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে হবে৷ আসাম-ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের উগ্রবাদী সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে অনুন্নয়ন৷ পেছনে পড়ে থাকা৷ অথচ প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে এই অঞ্চলে৷ রয়েছে সমৃদ্ধ মানব সম্পদ৷ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়েওে একটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে৷ চার-পাঁচটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে এই অঞ্চলে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশ দ্বার৷ তিনি বলেন, ব্রিটিশরা ১৯০ বছর ভারত শাসন করলেও এই অঞ্চলের দিকে কোন নজরই দেয়নি৷ তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও ছিলনা৷ বাণিজ্য করতে এসে দেশের শাসক হয়ে শাসনের নানে লুন্ঠন করে গেছে৷ কিন্তু স্বাধীনতার পরও কেন এই উদাসীনতা৷ এই অঞ্চলের মৌলিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে ভারত সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও অখন্ডতা যারা খুশি নয় তারাই এর সুযোগ নিচ্ছে৷ আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে মূলস্রোত থেকে বিছিন্ন করছে৷ স্বাধীন আসাম, স্বাধীন নাগাল্যান্ড, স্বাধীন ত্রিপুরার শ্লোগান উঠছে৷ এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাখীর চোখ হচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন-উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন দেশের সমৃদ্ধি৷ দেশকে উন্নতির পথে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে উত্তর পূর্বাঞ্চল এখ বলিষ্ঠ অবদান রাখতে সক্ষম৷ তিনি বলেন, আকাশবাণী ও দুরদর্শনে সঠিক ভাবে এই অঞ্চলের সমস্যার কথা উঠে আসছে না৷ অনেক সময় নিরপেক্ষাতাও বজায় থাকছে না৷ এটা পরিকল্পিত ভাবেই করা হচ্ছে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷ এই অঞ্চলের সমস্যাকে গঠনমূলক ভাবে মিডিয়ায় তুলে ধরতে তিনি আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, এই অঞ্চলে বোদ্ধাজনের, কুশলী শিল্পীর অভাব নেই৷ মনন ও চিন্তনে সমৃদ্ধ মানুষ রয়েছে এখানে৷ তিনি বলেন, দুরদর্শন ও আকাশবাণীর উন্নয়নে রাজ্য সরকারের কাছে কোন প্রত্যাশা থাকলে সরকার সামর্থ্যের মধ্যে কুন্ঠাহীন ভাবে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসবে৷
আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্রের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এদিন আকাশবাণী ও দূরদর্শনের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহানির্দেশক ডি এন বসুমাতারি আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্রের সুবর্ণজয়ন্তী যাত্রা পথের শিল্পী, কলাকুশলী -গবেষক ও শ্রোতাদের অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানান৷ অনুষ্ঠানে আকাশবাণী আগরতলা কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত ৫জন আধিকারিক ও কর্মীকে সংবর্ধনা জানানো হয়৷ সংবর্ধনা প্রাপক কে কে মুখোপাধ্যায়, লক্ষ্মণকুমার বণিক, চন্দন বাসফোর, সরস্বতী দে ও মনোহর বিশ্বাসের হাতে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরীয়, পুষ্পাস্তবক ও উপহার হিসেবে রেডিও তুলে দেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *