আগরতলা, ১ আগস্ট।। হাফলং এলাকার চন্দ্রনাথ থেকে আগরতলা হয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম পর্যন্ত ২৪৩ কিলোমিটার রেলপথকে ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তরিত করার প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) সুনীল কুমার ঝা’র নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল আজ মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ওই বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে রেল পরিষেবা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার শ্রী ঝা জানান, রাজ্যের সিঙ্গল লাইন রেল-ট্র্যাককে ডাবল লাইন ট্র্যাকে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হাফলং এলাকার চন্দ্রনাথ থেকে আগরতলা হয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম পর্যন্ত ২৪৩ কিলোমিটার রেলপথকে ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তরিত করার প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগরতলা রেল স্টেশনকে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর ও ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনের জন্য আগরতলা আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পটির কাজ অতি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, চলতি অর্থ বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে এই রেল সংযোগের কাজ শেষ করা হবে। তাছাড়া আগরতলা-ধর্মনগর রুটে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো সহ লোক্যাল ডেমু ট্রেনগুলিতে কোচের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি রেল কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে বলে জেনারেল ম্যানেজার শ্রীঝা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। তিনি জানান, আগরতলা -মুম্বাই, আগরতলা -জম্মু ও আগরতলা – পুরী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুসহ আগরতলা গৌহাটি ইন্টারসিটি ট্রেন পরিসেবা চালুর বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে।
বৈঠকে নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার জানান, বদরপুর থেকে সাম পর্যন্ত রেল ট্র্যাকটিকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিকরণ করা হবে। ৪১.৭৫ কিমি দীর্ঘ পেঁচারথল-কৈলাশহর-ধর্মনগর, ১৭৮.৭২ কিমি দীর্ঘ ধর্মনগর থেকে বিলোনীয়া, এবং ২.৯২ কিমি দীর্ঘ বিলোনীয়া থেকে ফেনী পর্যন্ত তিনটি বিকল্প রেল সংযোগ নির্মাণের প্রস্তাবটি রেল বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। রেল আধিকারিকগণ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন। বৈঠকে জেনারেল ম্যানেজার জানান, আগরতলা রেল স্টেশনটিকে আন্তর্জাতিকমানের রেল স্টেশনে উন্নীত করার জন্য রেল দপ্তর ২৩৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার ডিপিআর তৈরী করে রেল বোর্ডের নিকট ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছে। রাজ্যে ২৩টি রেলওয়ে ওভারব্রীজের মধ্যে ১২টির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এর জন্য রাজ্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় জায়গারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। অবশিষ্ট ১১টি ওভারব্রীজ নির্মাণের জন্য কাজের বরাদ্দ অতি শীঘ্রই দেওয়া হবে। সারুমে রেল ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ এবং বাকী কাজ ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা হবে বলে আলোচনায় রেল প্রতিনিধিগণ মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় রাজ্যের তিনটি রেল স্টেশনকে উন্নীতকরণ ও আধুনিকীকরণের জন্য অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানানো হয়। এই প্রকল্পে ধর্মনগর, কুমারঘাট এবং উদয়পুর মাতাবাড়ি রেল স্টেশনের জন্য মোট ৯০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জওহরনগর, নালকাটা, সেকেরকোট, এস. কে. পাড়া প্রভৃতি রেল স্টেশনগুলিতে টিকিট ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, যাত্রী পরিষেবার ঘাটতি ও ডেমু ট্রেনগুলিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব সম্পর্কে রেল আধিকারিকদের অবহিত করেন। রেল স্টেশনগুলিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রেলওয়ে টানেলগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিষয়টি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রেলের মাধ্যমে মাদক দ্রব্য পাচারের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ জন্য রেলে যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী রেল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী ও রাজ্য পরিবহন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের প্রতিনিধি দলটি সচিবালয়ে মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহার সাথেও সাক্ষাৎ করেন।