আগরতলা, ১০ সেপ্টেম্বর : রাজ্যে এখন ক্যান্সার রোগের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওনাল ক্যান্সার হাসপাতালে অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসকগণ ক্যান্সার রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। কেবল ক্যান্সার হাসপাতালেই নয় রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালগুলিতে এখন ভালো মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আজ উদয়পুরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মির্জা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী আজ জামজুরিস্থিত আয়ুষ্মান ভারত হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টারের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে রোগী ও তাদের পরিজনদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী পার্টির হাতে আক্রান্ত হন চিকিৎসকরা। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সম্মান করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সবধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মির্জা এলাকার জনসাধারণের অনেকদিনের দাবি ছিল এখানে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হলো তাদের। পাশাপাশি মির্জা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য জমিদাতা অজয় মজুমদার, রাখাল কুন্ডু এবং প্রয়াত ভারতচন্দ্র মজুমদারের ভূমিকার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের প্রাথমিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে ওয়েলনেস সেন্টারে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোভিডকালীন সময়ে রাজ্যের এজিএমসি এবং আইজিএম হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছে অক্সিজেন প্ল্যান্ট। যা উত্তর-পূর্বের মধ্যে বৃহত্তম অক্সিজেন প্ল্যান্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণায় দেশের বিজ্ঞানীরা কোভিডের ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছেন। যেগুলি বিনামূল্যে দেশবাসীকে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যুব সমাজের একটা অংশের মধ্যে ড্রাগস গ্রহণের প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠন করা। যুব সমাজকে নেশার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে অভিভাবকদের আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। প্রশাসনও নেশার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য ভাংমুন, কুমারঘাট, কৈলাসহর ও দামছড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেরাপি সেন্টার খোলা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে দুটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এছাড়া এডিসি এলাকায় আরো একটি মেডিকেল কলেজ খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য আমবাসায় সম্ভাব্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। মেডিকেলে পিজি কোর্সের জন্য আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এই কোর্সের জন্য ৬৩ থেকে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৯টি করা হয়েছে। এতে রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব কমবে। এজিএমসিতে আসন সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫টি করা হয়েছে। আইজিএম হাসপাতালে বিভিন্ন বিষয়ে পিজি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। চিকিৎসক স্বল্পতা মেটাতে ডাক্তারদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা হয়েছে। টিপিএসসি’র মাধ্যমে ১৫৬ জন চিকিৎসক নেওয়া হয়েছে। একইভাবে ৩৫ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, সরকার প্রকৃত অর্থেই মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। কোভিডের সময়েও সরকার সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা বলেন, আগামীদিনে মির্জা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, মির্জা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পূর্ত দপ্তরের পরিচালনায় তৈরি হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকার জন্য আবাসনও তৈরি করা হয়। গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাকড়াবন ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন সুপ্রিয়া সাহা। বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ডা. দেবাশিস বসু, টিআইডিসি’র চেয়ারম্যান টিংকু রায়, গোমতী জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবল দেবরায়, গোমতী জেলার জেলাশাসক গোভেকর ময়ূর রতিলাল, জেলা পুলিশ সুপার শ্বাসত কুমার, সমাজসেবী রতন ঘোষ, অভিষেক দেবরায় প্রমুখ।