নয়া দিল্লি, ৯ জুন: ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতের কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে “অন্ত্যোদয়” দর্শনের মাধ্যমে, যার মূল লক্ষ্য দেশের প্রতিটি ব্যক্তির উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। কেন্দ্র সরকার প্রতিটি মিশনে শতভাগ উপকারভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। গত এক দশকে কোটি কোটি বঞ্চিত পরিবার প্রথমবারের মতো পেয়েছে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, শৌচাগার, রান্নার গ্যাস, বিমা ও ডিজিটাল পরিষেবা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ভারতে চরম দারিদ্র্য কার্যত নির্মূল হয়েছে বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ২০২৩ সালের গ্লোবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, দেশের দশটি সূচকে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের ২০২৫ সালের স্প্রিং পভার্টি অ্যান্ড ইকুইটি ব্রিফ অনুযায়ী, গত এক দশকে ১৭১ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। দৈনিক ২.১৫ মার্কিন ডলারের কম আয় করা মানুষের সংখ্যা ২০১১-১২ সালে যেখানে ছিল ১৬.২ শতাংশ, তা ২০২২-২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২.৩ শতাংশে। অন্যদিকে ৩.৬৫ ডলারের সীমায় দারিদ্র্য হার ৬১.৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২৮.১ শতাংশ, যার ফলে প্রায় ৩৭৮ মিলিয়ন মানুষ এই সীমার ওপরে উঠে এসেছেন।
গ্রামীণ ভারতে গড় মাসিক মাথাপিছু খরচ ২০১১-১২ সালে যেখানে ছিল ₹১,৪৩০, তা ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ₹৪,১২২। শহরে এই হার ₹২,৬৩০ থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ₹৬,৯৯৬-এ। খাদ্য খাতে ব্যয় কমে যাওয়ার অর্থ হল মানুষ এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও অন্যান্য সেবায় বেশি ব্যয় করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ইপিএফও-র তথ্য অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫-এ নিট সদস্যসংখ্যা বেড়েছে ১৪.৫৮ লক্ষ।
অবকাঠামো উন্নয়নের দিক থেকে জল জীবন মিশনের আওতায় ১৫.৫৯ কোটি গ্রামীণ পরিবার এখন পানীয় জলের সংযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১২ কোটির বেশি সংযোগ শুধু গত পাঁচ বছরে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৪ কোটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে ২.৭৭ কোটি গ্রামীণ ও ৯২.৭২ লক্ষ নগরাঞ্চলে। সৌভাগ্য প্রকল্পের মাধ্যমে ২.৮৬ কোটি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে এবং গ্রামে গড় বিদ্যুৎ সরবরাহ ১২.৫ ঘণ্টা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২.৬ ঘণ্টা।
স্বাস্থ্য খাতে, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫৫ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা পাচ্ছে, যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ। ইতিমধ্যেই ৭৭ কোটির বেশি হেলথ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। জীবন ও দুর্ঘটনা বিমা যোজনার আওতায় কোটি কোটি মানুষ আর্থিক সুরক্ষা পাচ্ছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দিক থেকে, ৫৫.১৭ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০.৮০ কোটি মহিলাদের নামে। মুদ্রা যোজনায় ৫২.৭৭ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার ৬৮ শতাংশই মহিলাদের হাতে গেছে। পিএম সভ্যানিধি প্রকল্পে ৬৮ লক্ষ পথ বিক্রেতা ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা পেয়েছেন এবং পিএম বিশ্বকর্মা যোজনায় ২৩.৭ লক্ষ কারিগর নিবন্ধিত হয়েছেন।
মহিলা ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘লাখপতি দিদি’ প্রকল্প চালু হয়েছে, যার আওতায় ১০ কোটির বেশি মহিলা সেল্ফ-হেল্প গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং সরকার ৩ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ১.৫৭ লক্ষ স্টার্টআপকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ভারতে বর্তমানে ১১৮টি ইউনিকর্ন রয়েছে, যা দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে পরিণত করেছে।
প্রতিবন্ধী ও ট্রান্সজেন্ডার নাগরিকদের কল্যাণেও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এডিআইপি প্রকল্পে ৩১.১৬ লক্ষ প্রতিবন্ধীকে সহায়তা করা হয়েছে। ১৮,০০০-এর বেশি ক্যাম্প আয়োজিত হয়েছে এবং ১০টি গিনেস রেকর্ড গড়া হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (সুরক্ষা) আইন, ২০১৯ কার্যকর হওয়ায় এই সমাজকেও সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
এইভাবে অন্ত্যোদয়-ভিত্তিক শাসনের মাধ্যমে ভারত এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে উন্নয়নের আলো পৌঁছেছে সমাজের শেষ ব্যক্তির ঘরেও। এই সাফল্য শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, কোটি কোটি মানুষের জীবনের বাস্তব রূপান্তরের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
2025-06-09