আগরতলা, ১৭ এপ্রিল : সুযোগসন্ধানীরা ত্রিপুরায় বোঝাপড়া করলেও কেরলে জাত শত্রু হিসেবেই পরিচিত। আজ স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় কংগ্রেস ও সিপিএমকে এভাবেই নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ঘোষণা, ১০ বছরে ত্রিপুরা বিকাশের ট্রেলর দেখেছে। আগামী পাঁচ বছরে এই রাজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এদিন তিনি ত্রিপুরায় এসে জনস্রোত দেখে আবেগতারিত হয়ে পড়েন। তাতে তিনি প্রত্যয়ের সুরে বলেন, এই জনস্রোত চিৎকার করে বলছে, ত্রিপুরা কোনভাবেই পেছনে তাকাবে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে ত্রিপুরায় উৎসাহ, উন্মাদনায় কখনোই খামতি দেখা যায়নি। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জড়ো হাজার হাজার মানুষের ভিড় প্রমাণ করেছে, নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় কমেনি, বরং বেড়েছে। তাই এদিন ভাষণের শুরুতে মোদী বলেন, এই রাজ্যে যখনই এসেছি আগের থেকে বেশি উৎসাহ দেখেছি। প্রতিবার আপনারা আগের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, আজ রাম নবমীর পুণ্য মুহুর্তে মা কামাখ্যার ভূমি পরিদর্শন করেছি এবং এখন মাতা ত্রিপুরা সুন্দরীর কাছে প্রণাম করছি। তিনি আবেগের সুরে বলেন, ৫০০ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে আজ সেই রামনবমী এসেছে যখন ভগবান শ্রী রাম তাবু থেকে অযোধ্যার বিশাল মন্দিরে স্থাপিত হয়েছেন। আজ সেই মন্দিরে সূর্য কিরণ তাঁর মস্তকে অভিষেক করেছে।
এদিন মোদী দাবি করেন, বিকশিত ত্রিপুরা সংকল্পের সাথে এগিয়ে চলেছে। এই জনস্রোত চিৎকার করে বলছে, ত্রিপুরা কোনভাবেই পেছনে তাকাবে না। কারণ, বিমানবন্দর থেকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান পর্যন্ত সারা রাস্তায় মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা ত্রিপুরা এবং দেশের মেজাজের পরিচয় দিচ্ছে। তাতে, ঠকবাজদের রাতের ঘুম উড়ে যাবে, কটাক্ষ করে বলেন তিনি।
মোদীর কথায়, একুশ শতকের ভারতকে বিকশিত করতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কংগ্রেস শাসনে এই অঞ্চলের সামর্থের সাথে অন্যায় হয়েছে। এদিকে, কমিউনিস্ট ত্রিপুরার মানুষের শুধুই সর্বনাশ করেছে। তাঁর দাবি, দিল্লিতে এখন এমন সরকার রয়েছে যাঁরা ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিষয়ে ভাবছে। কারণ, এই অঞ্চল শুধু রাজনীতি নয়, প্রেম এবং প্রাথমিকতা প্রধান বিষয়। তিনি চাইছেন, এখানের মানুষের সমস্যা কম এবং রোজগারের সুযোগ বেশি হোক। তাই, যোগাযোগ ব্যবস্থা শোধরাতে জোর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় জল জীবন মিশনে ৫ লক্ষের বেশি ঘরে পানীয় জল পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমিশন ছাড়া আড়াই লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক একাউন্ট-এ কিষান সন্মান নিধি পৌছে গেছে। ৩ লক্ষের অধিক মহিলা গ্যাস সংযোগ পেয়েছেন। জনজাতি বাচ্চাদের শিক্ষায় একলব্য স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, অতীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবনের জরুরী সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাই যখন কাজের সমস্ত সাফল্য তুলে ধরি, তখন কংগ্রেস এবং সিপিএমের বিকাশ বিরোধী রাজনীতির আয়না সামনে চলে আসে।
তাঁর ঘোষণা, বিজেপি সংকল্প নিয়েছে আগামী পাঁচ বছরে দেশে ৩ কোটি নতুন ঘর বানানো হবে। তাতে, ত্রিপুরাও উপকৃত হবে। তিনি প্রত্যয়ের সুরে বলেন, গত ১০ বছরে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিকাশের ট্রেলর দেখেছে। আগামী পাঁচ বছরে ত্রিপুরা সহ সমগ্র অঞ্চলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, বিজেপি সংকল্প পত্রে ঘোষণা দিয়েছে, সত্তরোর্ধ সকলের চিকিৎসার ব্যয়ভার মোদী সরকার বহন করবে। আয়ুষ্মান প্রকল্পের অধীনে প্রবীণদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে।
এদিন জোর গলায় বলেন, ত্রিপুরার হীরা মডেলের চর্চা সারা দেশ জুড়ে হচ্ছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরায় হীরা প্লাস মডেলে কাজ চলছে। আজ মোদী কংগ্রেস এবং ইন্ডি জোটকে নিশানা করে বলেন, অতীতে পূর্বোত্তরে লুট ইস্ট পলিসি ছিল। ১০ বছর আগে তাতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন লুট ইস্ট পলিসির বদলে এক্ট ইস্ট পলিসি কাজ করছে। তাঁর দাবি, কংগ্রেস জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিরা জানতেন না দেশের মানচিত্রে ত্রিপুরা কোথায় রয়েছে।
মোদীর কথায়, ত্রিপুরায় কমিউনিস্টের ইতিহাসে শুধুই বিনাশ, কংগ্রেসের দুর্নীতি এবং একমাত্র বিজেপিই বিকাশের রাজনীতি করছে। তাঁর কটাক্ষ, ত্রিপুরায় যতদিন কংগ্রেস ও সিপিএম পক্ষে-বিপক্ষে ছিল, দুর্নীতি ফুলেফেঁপে উঠেছিল। আজ লুটের দোকান বাঁচাতে একজোট হয়েছে। তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, সুযোগসন্ধানীরা ত্রিপুরায় সমঝোতা করলেও কেরলে জাত শত্রু হিসেবে পরিচিত। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের যুবরাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেই তিনি পাল্টা দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন। মোদীর কটাক্ষ, কেরলে যাঁদের জেলে পাঠাতে আওয়াজ তুলছেন ত্রিপুরায় তাঁদেরই প্রাসাদে বসাতে চাইছেন।
তিনি এদিন সুর চড়িয়ে বলেন, তদন্তকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিলেই চিৎকার শুরু হয় মোদী ভুল করছেন। কারণ, আমরা চাইছি দুর্নীতিবাজদের হটাতে এবং তাঁরা তাঁদের বাঁচাতে চাইছেন। মোদীর আবেদন, কংগ্রেস এবং সিপিএমকে দেওয়া ভোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু, বিজেপিকে দেওয়া আপনার ভোট বিকশিত ভারত বানাবে। আপনার একটি ভোট ত্রিপুরাকে সমৃদ্ধির মোদীর গ্যারান্টিকে আরও মজবুত করবে।