BRAKING NEWS

রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় ত্রিপুরা পুলিশ গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশ গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা পুলিশের সাফল্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। ত্রিপুরার পুলিশের সাফল্য সারা দেশেই প্রসংশিত হয়েছে। আজ রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে ত্রিপুরা পুলিশের ১৫০ তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ত্রিপুরা পুলিশ ও টি এস আর জওয়ানদের শিল্প ও চিত্রকলার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পুলিশ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে সফলতা পাওয়ার ফলে ২০১১ সালে ত্রিপুরা পুলিশকে মর্যাদাপূর্ণ প্রেসিডেন্স কালার উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। সাফল্যের এই ধারা যাতে আগামীদিনেও বজায় থাকে সে বিষয়ে প্রয়াস জারি রাখতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশ ও টি এস আর জওয়ানদের চিত্রকলায় দক্ষতাও এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।

রাজ্যে আইন শৃখলার উন্নয়নের তথ্য তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বনিম্ন অপরাধের হারের নিরীখে ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আমাদের রাজ্য বর্তমানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এর আগের বছর ত্রিপুরার স্থান ছিল পঞ্চম। রাজ্যে প্রতিলক্ষ জনসংখ্যায় ১১০টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে জাতীয় গড় হচ্ছে ৪২২টি। শারীরিক আক্রমন সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরার স্থান হচ্ছে নিচের দিক থেকে অষ্টম। এক্ষেত্রে প্রতিলক্ষ জনসংখ্যায় ত্রিপুরায় অপরাধের ঘটনা হচ্ছে ৪৩.৮টি, আর জাতীয় গড় হচ্ছে ৮৪টি। তার আগের বছর ত্রিপুরার স্থান ছিল দশম। সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ত্রিপুরায় সব থেকে কম। প্রতিলক্ষ জনসংখ্যায় মাত্র ১১.৯টি এ জাতীয় অপরাধ নথীভুক্ত হয়েছে যেখানে জাতীয় গড় হচ্ছে ২০.৮টি। তার আগের বছর ত্রিপুরার স্থান ছিল ৩য় সর্বনিম্ন। ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নারী সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ত্রিপুরার স্থান সর্বনিম্ন ৮ম। প্রতিলক্ষ জনসংখ্যায় ৩৭টি নারী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ত্রিপুরায়। জাতীয় গড় হচ্ছে ৬৬টি ঘটনা। বিগত বছরে ত্রিপুরার স্থান ছিল ৯ম। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে যৌতুক সংক্রান্ত অপরাধ, ডাকাতি, চুরি, খুন ইত্যাদি সহ সার্বিক অপরাধের চিত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ সালে সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ এবং খুনের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সার্বিক আইন শৃঙ্খলার অবস্থা সন্তোষজনক। বিভিন্ন বড় ধরণের অপরাধের সংখ্যা নিম্নমুখী। বেআইনী অনুপ্রবেশকারী বিশেষ করে বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরা বিধনাসভা নির্বাচন এবং গত সেপ্টেম্বর মসে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও ত্রিপুরা পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এই নির্বাচনে প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে বড় ধরণের কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন উৎসবের সময় বিশেষ করে দুর্গাপূজা, দীপাবলির মতো বড় বড় উৎসব চলাকালেও ত্রিপুরা পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা অভিযানে নেশা বিরোধী কার্যকলাপে ত্রিপুরা পুলিশ কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা ভারতের বিভিন্ন সফল রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারী সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মহিলাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতে প্রতিটি থানায় ২৪ ঘণ্টা কার্যকরী হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। খোয়াই ও আমবাসা আরও দু’টি নতুন মহিলা থানা খোলা হয়েছে। এতে রাজ্যে মোট মহিলা থানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯টি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২৩ এর শুরু থেকে ত্রিপুরা পুলিশ মিশন মুডে ট্রাফিক নিয়ম কঠোরভাবে বলবৎ শুরু করেছে। রাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও ত্রিপুরা পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ এ রাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৬,৮৯,৪০০টি যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৭,৪৬,০৩ ১টি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা রাজ্যে মোট ৩০৩টি স্টুডেন্ট পুলিশ ক্যাডেট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রয়াস-এর মাধ্যমে রাজ্যব্যাপী মোট ৫৯০৩টি সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও আজাদি কা অমরুত মহোৎসবের অঙ্গ হিসেবে পুলিশ এবং টি এস আর জওয়ানদের মাধ্যমে ‘রান ফর ইউনিটি’, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, ফুটবল/ভলিবল টুর্নামেন্ট, স্বাস্থ্য শিবির ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম (ইআরএসএস) প্রকল্পে রাজ্যব্যাপী ইমার্জেন্সি নম্বর ‘১১২’ চালু করা হয়েছে। এটা ২৪X৭ চালু রয়েছে। ইআরএসএস-এর অধীনে গড় রেসপন্সের সময় ২০২২ সালের ১০.৫১ মিনিটের তুলনায় ২০২৩ সালে ৯.৩৯ মিনিটে নেমে এসেছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ১৪১৩ জন টিএসআর জওয়ানের বেসিক ট্রেনিং সম্প্রতি শেষ হয়েছে। দিল্লী এবং ছত্তিশগড়ে দু’টি টি এস আর ব্যাটেলিয়ন মোতায়ন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন গত ৫ বছরে থানার সংখ্যা ৮১ থেকে বাড়িয়ে ১০১টি করা হয়েছে। ১০১টি থানার মধ্যে ৮৭টি বর্তমানে চালু রয়েছে এবং বাকী ১৪টি থানার উদ্বোধন শীঘ্রই করা হবে। ৫টি নতুন জি আর পি এস’র মধ্যে বিলোনীয়া জি আর পি এস’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকী ৪টি জি আর পি এস যেমন, সাব্রুম, উদয়পুর, বিশালগড় এবং বিশ্রামগঞ্জে শীঘ্রই চালু করা হবে। কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমি কনস্টেবলদের সর্বোত্তম মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। এটা গর্বের বিষয় যে, এই প্রথমবারের মতো মনিপুর রাজ্য তাদের কনস্টেবলদের ত্রিপুরা পুলিশ দ্বারা প্রশিক্ষণের জন্য অনুরোধ করেছে। আগরতলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর অফিস খোলার প্রয়োজনীয়তার সুবিধার্থে জ্যাকশন গেটস্থিত এনবিসিসি-এর বর্তমান অফিস ভবনের একটি অংশকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ শিল্প ও কারুশিল্পের প্রদর্শনী স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *