BRAKING NEWS

সিত্ৰাং-এর প্রভাব ত্রিপুরায়ও, সবচেয়ে ক্ষতি সিপাহিজলা জেলায়

আগরতলা, ২৫ অক্টোবর (হি.স.) : ত্রিপুরায় আশঙ্কা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় সিত্ৰাং-এর প্রভাব না পড়লেও, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিপাহিজলা জেলায়, এর পরই স্থান পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার। তবে জীবনজীবিকায় সিত্ৰাং তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ত্রিপুরা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ে রাজ্য লন্ডভণ্ড হবে আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এনডিআরএফ জওয়ানদের বহিঃরাজ্য থেকে বিশেষ বিমানে আনা হয়েছিল। সেদিক দিয়ে অনেকটাই নিরাপদে রয়েছেন ত্রিপুরাবাসী। একজন ব্যক্তি গাছ পড়ে আহত হয়েছেন। এছাড়া হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এমন-কি, বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখিন ত্রিপুরাবাসীকে হতে হয়নি। অবশ্য, প্রচুর ত্রাণ শিবির আগাম খোলা হয়েছে। সাথে খোলা হয়েছে দুর্যোগ সহায়তা কেন্দ্র। তবে, উৎসবের মরশুমে প্রকৃতির রুদ্র রূপ দেখতে হয়নি রাজ্যের মানুষের, এখানেই মিলেছে স্বস্তি।

ত্রিপুরা রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে, সিত্ৰাং-এর প্রভাবে সারা ত্রিপুরায় ১৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ১০৭টি বাড়ি মারাত্মক এবং ৩৮৭টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচুর গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। মহকুমা প্রশাসন, পুলিশ, টিএসআর এবং স্বেচ্ছা সেবকদের সহায়তায় রাস্তার গাছ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর ত্রিপুরা জেলার তিনটি বাগানে প্রায় ৩০টি সুপারি গাছ ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। অধিকাংশ স্থানেই বিদ্যুতের লাইন মেরামতের পর পরিষেবা স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। আগরতলায় একটি কালী পূজা মণ্ডপের বাঁশের তৈরি সুবিশাল গেট ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। তার পাশেই চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের অনশন মঞ্চ ঝড়ে লন্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অনশনকারীরা পালিয়ে পাশের দোকানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জিরানিয়ার মজলিশপুর মণ্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত কালী মণ্ডপ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। ওই মণ্ডপে ৪১ ফুট উঁচু কালীমূর্তি ছিল। ঝড়ের তাণ্ডবে ওই মূর্তি ভুপতিত হয়েছে এবং বৃষ্টিতে মূর্তির সমস্ত মাটি খসে পড়েছে।
ওই রিপোর্টে জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে জানা গেছে, সিত্ৰাং-এর প্রভাবে ধলাই জেলায় ৩৬টি বাড়ি মারাত্মক এবং ২৯টি বাড়ি আংশিকভাবে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় সাতটি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৯৪টি বাড়ি আংশিকভাবে, খোয়াই জেলায় দুটি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে, ৮-টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৫-টি বাড়ি আংশিকভাবে, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৬-টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে এবং ২৯টি বাড়ি আংশিকভাবে, সিপাহিজলা জেলায় ৭-টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে, ৫২টি মারাত্মকভাবে এবং ১৫৪টি বাড়ি আংশিকভাবে, গোমতি জেলায় ৪-টি বাড়ি মারাত্মকভাবে এবং ৪০টি বাড়ি আংশিকভাবে ও উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৩৬টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রিপোর্টে প্রকাশ, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় সিত্ৰাং-এর প্রভাবে ২৪টি গ্রামের ৩,৭০০ জন মানুষ এবং ৭৮১ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের এমডি দেবাশিস সরকার জানান, গতকাল ঝড়ে উত্তর জেলার তুলনায় দক্ষিণ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। বিলোনিয়া, সাব্রুম, অমরপুর, অম্পি, যতনবাড়ি ইত্যাদি জায়গায় বিদ্যুতের খুটি প্রচুর পরিমাণে ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। নিগমের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই মেরামতির কাজ শুরু করায় রাজ্যের বেশিরভাগ অংশে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেছে।

তাঁর দাবি, গতকালের ঝড়ে ২৩১টি এইচটি পোল এবং ৩৪২টি এলটি পোল এবং ৪৫টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এক থেকে দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সাথে তিনি যোগ করেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমস্ত আগরতলা শহরের বিদ্যুৎ পরিবাহী ব্যবস্থা আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবলের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে কাজও এগিয়ে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *