BRAKING NEWS

সিল বিতৰ্কিত ‘মিঞা মিউজিয়াম’, জবাব দিতে হবে উদ্যোক্তাদের, প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্ৰীর

গুয়াহাটি / গোয়ালপাড়া (অসম), ২৫ অক্টোবর (হি.স.) : নিম্ন অসমের গোয়ালপাড়া জেলার অন্তর্গত লক্ষ্মীপুর থানাধীন দাপকরভিটায় গত রবিবার (২৩ অক্টোবর) উদ্বোধিত ‘মিঞা মিউজিয়াম’টি সিল করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ‘মিঞা মিউজিয়াম’টি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (পিএমএওয়াই)-র ঘরে খোলা হয়েছিল। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, যারা এই ‘মিঞা মিউজিয়াম’ খুলেছেন, তাঁদের সরকারের কাছে জবাবদিহি হতেই হবে। এদিকে ‘মিঞা মিউজিয়াম’-এর উদ্যোক্তা অসম মিঞা পরিষদ-এর বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোৰ্চার জনৈক কাৰ্যনির্বাহী সদস্য।

গোয়ালপাড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দাপকরভিটায় প্ৰধানমন্ত্ৰী আবাস যোজনার টাকায় তৈরি ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল মিয়াঁ মিউজিয়াম। জনৈক সোমেশ আলির ছেলে এম মোহর আলি নামে রয়েছে ঘরটি। মোহর আলি অসম মিঞা পরিষদ-এর কেন্দ্ৰীয় সভাপতি। এ সম্পর্কে অসম মিঞা পরিষদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের সার্কল অফিসার রাজীব গগৈ বলেন, ‘জাদুঘরটি পিএমএওয়াই-এর অধীনে সরকার–বরাদ্দ টাকায় তৈরি ঘরে খোলা হয়েছিল। পিএমএওয়াই-এর ঘরে মিঞা মিউজিয়াম উদ্বোধনের খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমরা তা সিল করে দিয়েছি।’।

এদিকে, মিঞা মিউজিয়ামের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ অসম মিঞা পরিষদ-এর কেন্দ্ৰীয় সভাপতি তথা জাদুঘরটি যে বাড়িতে উদ্বোধন করা হয়েছিল ওই বাড়ির মালিক এম মোহর আলি বলেন, ‘আমি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে কথা বলি এবং চিন্তা করি। অসমে মিঞা (মুসলমান) সম্প্রদায়ের প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত পুরানো সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য এই জাদুঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের কোনও আপত্তি থাকলে জাদুঘরে রাখা জিনিসগুলো নষ্ট করে দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে বাড়ির বাইরে রাখার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছি। আমি সরকারকে সিল ভাঙতে অনুরোধ করছি, না হলে আমাকে ধরনায় বসতে হবে।’
মোহর আলি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার বাড়ির ভিতরে জাদুঘর খোলা হয়েছিল। সরকার লক্ষ লক্ষ পিএমওওয়াই-এর ঘর তৈরি করতে পারে। তবে অন্যরা যেমন করছে, তেমনই আমি যদি আমার ঘর ভাড়া দেই তা-হলে আপত্তি কোথায়? তাছাড়া আমি বিপিএলভুক্ত, তাই আমাকে পিএমএওয়াই-এর এই ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, তিনি সরকারি সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করে ঘরটি তৈরি করেছেন। এমন-কি ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার নাম এই ঘরের ফলকে তার ঠিকানা লেখা রয়েছে। তাই সরকার তার বিরুদ্ধে চরম অন্যায় করছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে তার ঘর সিল করার বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছেন, বলেন মোহর আলি।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০২০ সালে শংকরদেব কলাক্ষেত্রে একটি ‘মিয়াঁ মিউজিয়াম’ স্থাপন করতে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শেরমান আলি আহমেদ প্রস্তাব রেখেছিলেন। শেরমানের ওই প্রস্তাব অসমিয়া ঐতিহ্য-পরম্পরা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র বলে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তদানীন্তন কংগ্রেস বিধায়ক শেরমান আলির ওই প্রস্তাবকে তাঁর ঔদ্ধত্য বলে অসমে এখনও বিতর্ক চলছে।
ওই সালের ১৮ অক্টোবর জাদুঘর পরিচালকের কাছে একটি চিঠিতে শেরমান আলি আহমেদ চর-চাপরি (নদীর চর) এলকায় বসবাসকারীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে কলাক্ষেত্রে একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছিলেন। এর পর রাজ্য বিধানসভায়ও শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে এ সম্পর্কে সুপারিশ করেছিলেন শেরমান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়কের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, অসমের চর অঞ্চলে কোনও আলাদা পরিচয় বা সংস্কৃতি নেই। কারণ সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাংলাদেশ থেকে আগত। তাছাড়া শংকরদেব কলাক্ষেত্র হল অসমিয়া সংস্কৃতির প্রতীক, সরকার এর কোনও ধরনের বিকৃতি হতে দেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *