BRAKING NEWS

প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রমে ত্রিপুরায় ২২৭টি প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে

আগরতলা, ১৮ আগস্ট (হি. স.) : ত্রিপুরার ওবিসি ও সংখ্যালঘু জনগণের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পসমূহ রূপায়িত হচ্ছে। উভয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নের সমস্ত ক্ষেত্র ও সম্ভাবনাগুলির উপর ত্রিপুরা সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ওবিসি ও সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের সচিব তাপস রায় একথা জানান। তিনি জানান, ওবিসি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়মুখী করে রাখার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি ওবিসি কল্যাণ দপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে জানান, ২০১৯-২০ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত ১,১৫,২৭৭ জন ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীকে প্রিমেট্রিক স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৫২ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ৫০,৩৪৩ জন ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীকে পোস্টমেট্রিক স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে।
সচিব জানান, ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত যেসকল ছাত্রছাত্রীগণ একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত বা পাশ করে টেকনিক্যাল, মেডিক্যাল, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্স করছেন তাদেরকে মাসিক স্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব ছাত্রছাত্রী হোস্টেল থেকে মেডিক্যাল, টেকনিক্যাল, কৃষি বিষয়ক কোর্স করছেন তাদেরকে মাসিক ৭৫০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা হোস্টেল থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করছেন তাদেরকে যথাক্রমে মাসিক ৫১০ টাকা এবং ৪০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। হোস্টেল থেকে পাঠরত একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ২৬০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত যেসকল ছাত্রছাত্রী হোস্টেলে না থেকে পঠনপাঠন করছেন তাদেরকেও পোস্টমেট্রিক স্কলারশিপের অন্তর্গত মাসিক স্টাইপেন্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি জানান, ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষার্থী যারা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন তাদেরকে ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ৯,৪৮৪ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার এবং ৩৯ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। সচিব আরও জানান, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে আর্থিকভাবে দুর্বল ১৫৫ জন মেধাবী ওবিসি ছাত্রছাত্রীকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সচিব জানান, হালহালিতে ৭০ আসন বিশিষ্ট মেয়েদের হোস্টেল এবং কুলাইতে ৫০ আসন বিশিষ্ট ছেলেদের হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ধর্মনগরে মেয়েদের জন্য একটি ১৫০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিস্টোরেড এবং ছেলেদের জন্য একটি ১৫০ আসনের হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাবও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আগরতলায় উইমেনস পলিটেকনিক কলেজ চতুরে ২০০ আসনের মেয়েদের হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তাঁর দাবি, সামাজিক কাজে যুক্ত ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিদ্যাসাগর সোসিও কালচারাল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবর্ষে যথাক্রমে ২ জন এবং ৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মোহনপুরে ওবিসি কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে ২ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি মার্কেট স্টলের উদ্বোধন করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের এখন পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে ২৫৭ জন, পরিবহণ ক্ষেত্রে ১২১ জন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে ৬১২ জনকে ওবিসি কোঅপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ১০০ জন রাবার চাষীকে জীবিকা নির্বাহে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রাণীরবাজারে কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণ, অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ধলাইয়ে ২৮টি বিদ্যালয়ে স্যানিটারি প্যাড ভ্যানডিং / ডিসপোজাল মেশিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সচিব জানান।
সচিব সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ৩৯,২৬১ জন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে প্রিমেট্রিক এবং পোস্টমেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। এছাড়াও আবুল কালাম আজাদ মেরিট অ্যাওয়ার্ড, বেগম রুকিয়া গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, চিফ মিনিস্টার গার্লস গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। ১,৬৬৬ জনকে বোর্ডিং হাউজ স্টাইপেন্ড দেওয়া হয়েছে। এরজন্য ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। ত্রিপুরা মাইনোরিটিজ কোঅপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড থেকে ১,২৫৯ জন সুবিধাভোগীকে টার্ম লোন এবং এডুকেশন লোন দেওয়া হয়েছে। ৫৯৪ জন ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স করার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ১,২১৫ জন মেধাবী সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে প্রফেশনাল কোর্স করার জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরজন্য ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। নিউক্লিয়াস বাজেট প্রকল্পে ৮৪৫ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এরজন্য হয়েছে ৪৯ লক্ষ টাকা। সচিব আরও জানান, ৫৫টি ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়ন করা হয়েছে। এরজন্য ১১২.১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে দপ্তরের উদ্যোগে ১০০ জনকে হজ যাত্রায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আগরতলার মেলারমাঠে নজরুল ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ চলছে।
সচিব জানান, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রকল্পে (সিএসএস) ২৫,০০৩ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রিমেট্রিক এবং পোস্টমেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। ২,২৫০ জন বেকার সংখ্যালঘু যুবাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রমে রাজ্যে গত ৪ বছরে ২২৭টি প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। এই কার্যক্রমে অতিরিক্ত ক্লাস রুম, স্কুল বিল্ডিং, হোস্টেল নির্মাণ, ডিপটিউবওয়েল বসানো, স্কুলে ডাইনিং হল, সায়েন্স ল্যাবেরোটরি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।তাঁর দাবি, ২০২১-২২ সালে রাজ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য ৫টি হোস্টেল নির্মাণে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক থেকে ৫৪৩.১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাশাপাশি খেলাধুলার জন্য ৩টি সিন্থেটিক ফুটবল টার্ফ মাঠ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *