নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ জানুয়ারি ৷৷ অদ্বৈত মল্লবর্মণ একজন ব্রাত্য শ্রেণীর প্রাণপুরুষ, আমাদের গর্ব ও প্রেরণার উৎস এবং অহংকার৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২নং হলে তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে অদ্বৈত মল্লবর্মণের ১০৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনাচক্রে সভাপতির ভাষণে তপশিলী জাতি কল্যান মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস একথা বলেন৷ তিনি বলেন, এই লেখকের লেখনীর প্রচার বা প্রসার তেমন ভাবে হয়নি৷ কেমতলীর একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে তাঁর জন্মদিন পালনের মধ্যেই তার বিস্তৃত জীবনের কথা বেধে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তার মতো এমন একজন প্রতিভার কথা আজও মানুষ প্রচারের অভাবে জানতে পারেনি৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই অদ্বৈত মল্লবর্মণের অমূল্য প্রতিভার কথা মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় তার জীবনী ও লেখা নিয়ে আলোচনাচক্রের আয়োজন করতে শুরু করে৷ প্রথম দিকে তিনটি জেলায় এই কর্মসূচি শুরু করা হয়৷ এখন প্রতিটি জেলায় এই কর্মসূচি আয়োজিত হচ্ছে৷ তিনি বলেন, নিম্ন বর্ণের সুবাদে তার লেখনীকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু আমাদের সরকার অদ্বৈত মল্লবর্মণের মতো এমন একজন প্রতিভাবান লেখকের লেখাকে ব্যাপক হারে প্রচারে নিয়ে আসতে চায়৷ প্রকাশ্যে আনতে চায় তার সংগ্রামের জীবন কাহিনীও৷ এই প্রচারের মধ্য দিয়ে সাধারণ শ্রেণীর দলিত অংশের ছেলেমেয়েদের মনে সুশিক্ষার প্রেরণাও যোগাতে চায়৷
আলোচনাচক্রের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিধায়ক রেবতী মোহন দাস বলেন, ব্রাত্য জীবনের মহাকাব্য ’তিতাস একটি নদীর নাম’ এর স্রষ্টা কথা সাহিত্যিক হলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ৷ তার লেখায় তিতাস নদীর পাড়ের জালো-মালো, নম:শূদ্র ইত্যাদি নিম্ন শ্রেণীর জাতির কাহিনী ব্যক্ত হয়েছে অত্যন্ত মর্মভ্যাদি ভাষায়৷ এক সময় ছিল যখন নিম্নবর্ণের মানুষেরা রাস্তা দিয়ে গেলে তাদের ছায়াও যদি উচ্চবর্ণের মানুষের গায়ে লাগত তাদের জাত গেছে বলে তাদের গালি দেওয়া হতো৷ এমন কি এজন্য কঠিন শাস্তিও দেওয়া হতো৷ নিজে নিম্ন বর্ণের জাতির হয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণের মনে বড় আঘাত লেগেছিল৷ তাই তিনি নিজ জাতি গোষ্ঠীর হয়ে লড়াইয়ে নামেন তার লেখনীর মধ্য দিয়ে৷ তিনি শুধু একটি উপন্যাস লেখেই শান্ত হন নি৷ তিনি একাধারে প্রাবন্ধিক ও কবিও ছিলেন৷ আর্থিক অভাব, সেই সময়ে সামাজিক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সবকিছু মিলিয়েই তাকে অকালে মৃত্যবরণ করতে হয়েছে৷ কিন্তু জীবনের স্বল্প পরিসরেও আমাদের জন্য তিনি যে সম্পদ রেখে গেছেন তা আমাদের কাছে অমূল্য সম্পদ৷ আমাদের কর্তব্য হবে তার এই অমূল্য সম্পদকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মননে পৌঁছে দেওয়া৷ তবেই তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন সার্থক হবে৷
অনুষ্ঠানে ’জলজীবিদের জীবন যন্ত্রনার সেকাল ও একাল’ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র সরকার৷ আলোচনায় তিনি বলেন, ড. বি আর আম্বেদকর যেমন এই জাত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন তার বিভিন্ন লেখনীর মধ্য দিয়ে তেমনি অদ্বৈত মল্লবর্মণও লড়াই করে গেছেন৷ অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবনের নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নির্মল দাস৷ তিনি বলেন, অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবন ছিল সংগ্রাম মুখর৷ তার অপ্রতুল প্রতিভা নানা প্রতিকুলতা ভেদ করেও প্রকাশিত হয়েছিল৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, বিধায়ক সুুভাষ চন্দ্র দাস, আগরতলা পুর নিগমের এসসি সাব কমিটির চেয়ারম্যান টুটন দাস এবং তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের প্রাক্তন সচিব সন্তোষ চন্দ্র দাস৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা বিপ্লব দাস৷ অনুষ্ঠানে ২০২০ সালের মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী ত্রিশাশ্রী দেওয়ান, ত’তীয় স্থানাধিকারী যশরাজ দাস, অষ্টম স্থানাধিকারী নবোদিত দাস এবং উচ্চমাধ্যমিকে দশম স্থানাধিকারী মৌসুুমী দাসকে ড. বি আর আম্বেদকর মেরিট এওয়ার্ড দেওয়া হয়৷ পুরস্কার হিসাবে অতিথিগণ তাদের হাতে স্বর্ণপদক ও ২৫০০০ টাকা করে তুলে দেন৷