লখনউ, ৮ অক্টোবর (হি.স.): উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের শাসনের সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি। ২০১৭ সালে বিজেপির সংকল্প পত্রের প্রতিশ্রুতির কী হল? তালিবান ইস্যুতে সরকার কী ভাবছে? হিন্দুত্বের মুখ যোগী আদিত্যনাথ সরকার মুসলমানদের নিয়ে কী ভাবছে? বিরোধীদের মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা রয়েছে? সরকার কতটা প্রস্তুত? এই সমস্ত বিষয়ে, যোগী সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মহসিন রাজা হিন্দুস্থান সমাচারের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথোপকথনের মুখ্য বিষয়:-
প্রশ্ন : আপনাদের সরকারের সাড়ে ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। বিজেপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন প্রাপ্তি নিয়ে জনগণের কাছে যাবেন। জনগণকে কী বলবেন?
উত্তর: জনগণ সবকিছু জানেন। ২০১৭ সালে জনগণকে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমরা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এবং উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি তা সম্পন্ন করেছে। যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে এই সাড়ে চার বছরে অভূতপূর্ব কাজ করেছে বিজেপি সরকার। পূর্ববর্তী সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির সরকারের সময় তা হয়নি। আমরা গ্রাম, দরিদ্র, কৃষক, নারী, সম্মান, নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করেছি। জনগণ সমস্ত কিছু দেখছে। দেড় বছর ধরে গোটা বিশ্ব করোনার প্রকোপে জর্জরিত, সেই সময় আমাদের সরকার জীবন এবং জীবিকা বাঁচাতে কাজ করেছিল। আমরা বলতে পারি, যোগী সরকার উত্তর প্রদেশকে দেশের সেরা রাজ্য হিসেবে উন্নীত করেছে। অর্থনৈতিক অবস্থানগত দিক থেকেও আমরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছি। শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বে যোগী সরকারের প্রশংসা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট যোগী সরকারের করোনা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছে। আমাদের সরকার কৃষকদের ইস্যুতে আরও ভালো কাজ করেছে। প্রথম মন্ত্রিসভায় ঋণ মকুব যোজনা বাস্তবায়িত হয়েছিল। এর মাধ্যমে ৮৬ লক্ষ কৃষকের ৩৬ হাজার কোটি টাকা মকুব করা হয়েছে। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয় না, সঙ্কল্প করে এবং তা পূরণ করে।
প্রশ্ন : বিরোধীদের অভিযোগ আপনাদের সরকার কোনও কাজ করেনি। সমস্ত দাবি মিথ্যে। তাঁরা বলেন, বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভেদের মাধ্যমে ভোট পেতে চাইছে?
উত্তর : কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ৭ বছর এবং রাজ্যে যোগী সরকারের সাড়ে ৪ বছরের শাসনকালে কোন প্রকল্পে বৈষম্য করা হয়েছে। সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপক সুবিধা পেয়েছেন, কারণ পূর্ববর্তী সরকার তাঁদের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রেখেছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। সংখ্যালঘুদের লুট করা হয়েছে, তাঁরা শোষণ করা হয়েছে। আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর মূল মন্ত্র নিয়ে কাজ করেছি। এটা আমাদের সরকারের স্বীকারোক্তি হল এই যে, আমরা যে সমস্ত প্রকল্প তৈরি করি তাতে আমরা জাত ও ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করি না। আপনারাই দেখুন হায়দরাবাদ থেকে আসা তিনি (ওয়াইসি) অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন পার্টির নাম রাখলেন, সরাসরি ধর্মের নামে রাজনীতি করছেন, আমরা জানতে চাই গুলাম নবী আজাদ, সমলম খুরশিদ, আহমেদ প্যাটেলকেও তো নেতা বানানো হয়েছিল, তাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কী করেছিল?
প্রশ্ন- বিরোধীরা তো বলছেন ওয়াইসি বিজেপির ‘বি’ টিম ?
উত্তর : কোনও দল কীভাবে আমাদের ‘বি’ টিম হতে পারে? যাঁদের পূর্বপুরুষ দেশ ভাগ করেছিল। ব্রিটিশদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই ধরনের মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে আসতে পারে না এবং ভারতীয় জনতা পার্টিও তাঁদের সঙ্গে যেতে পারে না। যারা দেশের স্বার্থে কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য আমাদের দরজা সর্বদা খোলা থাকবে।
মহসিন রাজার অভিযোগ, সকলের দোকান একই ভোট ব্যাঙ্কে চলে। দেশ অথবা রাজ্য নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যাথা নেই। আমরা ভারতীয়। এ জন্যই ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতীয় জনগণের চিন্তা করে। যাঁরা ভারতীয় তাঁরা আমাদের। যাঁরা তোষণের রাজনীতি করেন, তাঁরা মনে করেন তাঁদের মুসলিম ভোট কেটে যাচ্ছে। সেই জন্য তাঁরা এ ধরনের কাজ করতে থাকে। কীভাবে দেশ এগিয়ে যাবে, কীভাবে দেশ সুরক্ষিত হবে, উন্নয়ন প্রকল্প কীভাবে পরিচালিত হবে, কীভাবে মানুষের সমৃদ্ধি হবে, কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে সেই সমস্ত বিষয়ে আমরা কাজ করি।
প্রশ্ন: তালিবান সম্পর্কে আপনার কি মত? কী এমন কারণ যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তালিবান সম্পর্কে বিবৃতি দিচ্ছেন?
উত্তর : তালিবান একটি নিষ্ঠুর সংগঠনের নাম। এর মধ্যে কোনও মানবতা নেই। তালিবানকে নিয়ে গোটা বিশ্ব চিন্তিত। তাই আমাদেরও উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। ভারতীয় জনতা পার্টি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উদ্বেগও স্বাভাবিক। আমাদের রাজ্যের ২৪ কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখতে হবে। এই ধরনের কট্টরপন্থীদের থেকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। তালিবানি ভাইরাসকে এখানে ছড়াতে দেওয়া যাবে না। কারণ পূর্ববর্তী সরকারগুলিতে অবৈধ ধর্মান্তরের যে ইস্যু ছিল, বর্তমানে আমরা যখন অবৈধ ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে একটি আইন নিয়ে এসেছি, সেই বিরোধীরাই সংসদের ভিতরে প্রতিবাদ করছে। তাহলে এটা তো তালিবানি ভাবনাই হল? কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা, প্রলোভন বা অর্থের প্রস্তাব দিয়ে ধর্মান্তরিত করা তালিবান মানসিকতারই প্রতিফলন। এটি দেশের নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি সমস্যা। আমরা এই ষড়যন্ত্র বানচাল করেছি।
প্রশ্ন : আপনার দফতর কী এমন করেছে, যাতে আপনি সংখ্যালঘুদের মাঝে গিয়ে তাঁদের বিশ্বাস পর্যন্ত করতে পারবেন?
উত্তর : আমি মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, মোদীজির জন্যই সংখ্যালঘুরা স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো তাঁদের মাথার উপর ছাদ পেয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার স্তর, এমএসএমই-এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান দেওয়ার কাজ করা হয়েছে। আমাদের সরকার মাদ্রাসায় চলতে থাকা দুর্নীতি বন্ধ করেছে। সমস্ত মাদ্রাসা পোর্টালে করা হয়েছে। ৭ হাজার মাদ্রাসা ছিল শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবে অস্তিত্ব ছিল না। ওই সব মাদ্রাসার নামে সরকারি কোষাগার লুট করা হচ্ছিল। এই কারণে দরিদ্র মুসলিম পরিবারের শিশুদের ক্ষতি হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা মুসলিম সম্প্রদায়কে মূলস্রোতের নিয়ে এসেছে। এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম মাদ্রাসায় লাগু করা হয়েছে, যাতে শিশুরা বিনয়ী শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা লাভ করতে পারে। এতে সমাজের উন্নতি হবে।

