Student died tragically in Kamalpur : চিকিৎসার নামে বুজরুকির বীভৎসতায় কমলপুরে মর্মান্তিক মৃত্যু সুকলছাত্রের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ অক্টোবর৷৷ চিকিৎসার নামে বুজরুকির বীভৎসতায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রের৷ ঘটনাটি ঘটেছে কমলপুরের নোয়াগাওয়ে৷ অভিযোগ সেখানে নিজেকে চিকিৎসক বলে দাবি করা সুজিত দেবনাথের ভুল চিকিৎসাতেই মৃত্যু হল ওই ছাত্রের৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷


সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের বাড়ি বিশালগড়ের নেতাজিনগরে৷ নাবালক সুকলছাত্রের নাম দেবাশীষ নমঃ৷ সে দশম শ্রেণীর ছাত্র৷ তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, দেবশীষ হাটাচলা করতে পারত না৷ বসেই থাকতে হত তাকে৷ তারপরও সে পড়াশুনা চালিয়ে যেত৷ দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রকে রাজ্যে ও বহিঃরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে৷ কিন্তু, কোন উন্নতি হয়নি৷ তারপর একজনের সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে কমলপুরের নোয়াগায় এলাকার চিকিৎসক সুজিত দেবনাথের নাম৷ চিকিৎসক নামধারী সুজিত দেবনাথের সাথে ওই সুকলছাত্রের পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করেন৷ চিকিৎসক জানিয়েছেন দেড় বছরের মধ্যে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলবেন৷ এমনকি রোগী হাটাচলাও করতে পারবে৷ তবে সেজন্য ছয় লক্ষ টাকা ওই চিকিৎসককে দিতে হবে৷ চিকিৎসকের এই আশ্বাসে রোগীর পরিবারের লোকজন যেন মরুভূমিতে জলের সন্ধান পেলেন৷ আগেপিছে কোন চিন্তা ভাবনা না করেই ছয় লক্ষ টাকা দিতে রাজী হয়ে যান তারা৷


সেই মোতাবেক গত ২৮ সেপ্ঢেম্বর রোগী তথা সুকলছাত্র দেবাশীষ নমঃকে বিশালগড় থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কমলপুরের নোয়াগাওয়ের চিকিৎসক সুজিত দেবনাথের কাছে৷ সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে দেখে বলেন তাকে অন্তত পাঁচদিন তার হেফাজতে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে৷ পরিবারের লোকজন তাতেও রাজী হয়ে যান৷ সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় চিকিৎসা৷ রোগীকে দুটি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়৷ দুটি ইঞ্জেকশনের মূল্য ধরা হয় আটত্রিশ হাজার টাকা৷ তাছাড়া ইঞ্জেকশন পুশ করার জন্য মূল্য ধার্য্য করা হয় পনের হাজার টাকা৷ সেদিন রোগীর পরিবার নগদে ত্রিশ হাজার টাকা চিকিৎসককে দিয়েছেন৷ তারপর থেকে শুরু হয় ওই চিকিৎসকের বুজরুকি৷ সুকলছাত্র দেবাশীষ নমঃকে সুজিত দেবনাথের একটি ঘরে রেখে চিকিৎসার নামে চলে নানা ধরনের বীভৎসজনক কর্মকান্ড৷ কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীর শরীরে উপর রেখে দেওয়া হয় সিমেন্ট ভর্তি বস্তা, কখনো ভাড়ি ইট পাথর ইত্যাদি৷ এমনকি সূঁচ দিয়ে আঘাত করা হত৷ কিশোর দেবাশীষ এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারত না৷ আর্তনাদ করত৷ কিন্তু, পরিবারের লোকজন ওই চিকিৎসকের কথায় ভরসা করে দেবাশীষকে সহ্য করার জন্য বলত৷ গত কদিন ধরে চলতে থাকে ওই সুকলছাত্রের উপর চিকিৎসার নামে বুজরুকি৷ একসময় ছেলেটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে৷

পরিবারের লোকজনের মনে আশঙ্কা দেখা দেয়৷ তারা বুঝতে পারে যে ছেলেটির অবস্থা সংকটজনক৷ রবিবার সকালে দেবাশীষ নমঃকে কমলপুর থেকে আগরতলায় জিবি হাসপাতালে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের লোকজন৷ সেই মোতাবেক তারা গাড়িতে করে কমলপুর থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে খোয়াই হয়ে আসছিল৷ কিন্তু, পথেই ঘটে গেল বিপত্তি৷ খোয়াই পৌঁছার আগেই দেবশীষ নমঃ গাড়িতে প্রাণ হারায়৷


দেবাশীষের মৃত্যুর জন্য ওই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসাকেই দায়ী করেছেন পরিবারের লোকজন৷ জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক নামধারী সুজিত দেবনাথ দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবার নামে বুজরুকি করে চলেছেন৷ ইতিপূর্বেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে৷ আশ্চর্য্যের বিষয় হল মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেবের বাড়ির খুব কাছেই চিকিৎসক নামধারী সুজিত দেবনাথের আখড়া৷ এখন দেখার এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুলিশ কিংবা প্রশাসন কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে কি না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *