আগরতলা, ২৭ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরায় জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। তার যথার্থ প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একাধিক যুক্তি আজ ত্রিপুরা বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে ভাবতে বাধ্য করেছে। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ উদ্বেগজনক বলেই মনে হয়েছে। মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়ের উল্লেখ পর্বে আনা নোটিশের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক সুধাংশু দাস এবং বিধায়ক ডা: অতুল দেব্বর্মা ত্রিপুরায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ জাতিগোষ্ঠী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকে দায়ী করেছেন। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এদিন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় মহিলা প্রতি শিশু জন্মের সংখ্যা ১.৭। তা সত্ত্বেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নে ত্রিপুরা সরকার সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ মুখ্য সচেতক কল্যানী রায় ভারতবর্ষের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা অস্বাভাবিক মাত্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আগামীদিনে জনসংখ্যাজনিত অসহনীয় বহুবিধ সমস্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দূরীকরণের লক্ষ্যে রাজ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উল্লেখ পর্বে নোটিশ আনেন। মুখ্যমন্ত্রী এ-বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমানে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী ত্রিপুরায় মহিলা প্রতি শিশু জন্মের সংখ্যা ১.৭। তাতে গড়ে প্রতি মহিলা পিছু শিশু জন্মের হার ২ জন থেকেও কম। এই অবস্থায় ত্রিপুরায় জনসংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ত্রিপুরা সরকার জন্ম নিয়ন্ত্রণে সকল প্রকার ব্যবস্থায় গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, বিনামূল্যে গর্ভনিরোধক ঔষুধ, বিনামূল্যে নিরোধ বিতরণ, মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে ল্যাপারোস্কপিক লাইগেশন ক্যাম্পের ব্যবস্থা, ইঞ্জেক্টেবল গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা, জন্মের সময় ব্যবধান নিশ্চিত করা, পুরুষদের জন্য এনএসভি ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও জন্মনিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নে ত্রিপুরা সরকার সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি শুনে মুখ্য সচেতক স্পষ্টীকরণ চেয়ে বলেন, ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী ত্রিপুরায় জনসংখ্যা ছিল ৩৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯১৭। অথচ ২০২১ সালে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ত্রিপুরার জনসংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লক্ষ। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ১০ বছরে ৫ লক্ষ জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। শতাংশের ১৩.৫ হারে ত্রিপুরায় জনসংখ্যায় বৃদ্ধি হয়েছে। তাঁর দাবি, এভাবেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে পরিস্থিতি আগামী নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যের জন্য তা ভীষণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। মুখ্য সচেতকের বক্তব্য শুনে অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী জানতে চান তিনি কি এক সন্তান নীতির জন্য সওয়াল করছেন। অবশ্য, শ্রীমতি রায় এক সন্তান নীতি প্রণয়ন হউক চাইছেন না। তবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অন্তত দুই সন্তান নীতি গ্রহণ করুক ত্রিপুরা সরকার।
ওই নোটিশের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক সুধাংশু দাস বলেন, ত্রিপুরায় নির্দিষ্ট কিছু স্থানে মহিলা প্রতি শিশু জন্মের হার কম হতেই পারে। কিন্তু, কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট জাতিগোষ্টির পরিবারে একাধিক সন্তানের জন্ম হচ্ছে। জিহাদের লক্ষ্যেই তাঁরা প্রচুর বাচ্চার জন্ম দিচ্ছেন। এদিকে, বিধায়ক ডা: অতুল দেব্বর্মা জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ত্রিপুরায় অবৈধ অনুপ্রবেশকে দায়ী করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, গত কয়েকবছরে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্রিপুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুকির মুখে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচেতকের দেওয়া তথ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন, জন্মের হার স্বাভাবিক হলে জনসংখ্যায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কিভাবে সম্ভব হয়েছে। তাঁর কথায়, ত্রিপুরা তিন দিক থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঘেরা। সেক্ষেত্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা কোনভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সমস্ত বক্তব্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভেবে দেখা হবে।