নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জুলাই।। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে ত্রিপুরা। কারণ, ওই সেতু নির্মাণ হলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। পশ্চিমবঙ্গের সাথে খুবই অল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ত্রিপুরা ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে সহজেই জুড়ে যাবে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর কথায়, পদ্মা সেতু নির্মান হয়ে গেলে ত্রিপুরার পাশাপাশি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলও খুব উন্নত হবে। সবই সম্ভব হবে রেল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে।
আজ আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে একান্ত সাক্ষাতকারে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে রেলের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে ১৯৬৫ সালের ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রচুর সংযোগ ছিল। যা সময়ের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন পুণরায় চালু করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, রেল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় আরও দৃঢ় হবে। বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে যাত্রী পরিবহনেও নতুন দুয়ার খুলে যাবে।
তিনি বলেন, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা অনেক পুরনো। কিন্ত, বাস্তবায়নে অনেকটা বিলম্ব হয়ে গেছে। কারণ, অতীতে সম্পর্ক ততটা মধুর ছিল না, যত মাধুর্যে এখন ভরে রয়েছে। তাঁর মতে, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ স্থাপন খুব শীঘ্রই সম্ভব হবে। কোভিডের জন্য অনেকটা বিলম্ব হয়েছে। কিন্ত, চলতি বছরের শেষে কিংবা ২০২২ সালের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে ওই রেল সংযোগ স্থাপন হয়ে যাবে।
এদিন তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে ত্রিপুরা খুবই উপকৃত হবে। কারণ, খুবই অল্প সময়ে ত্রিপুরা থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া যাবে। তাঁর মতে, পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ সমাপ্ত হওয়া অনেকটা সময় সাপেক্ষ। কারণ, প্রথমে রোড ব্রিজ নির্মান হবে। তারপর রেল ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হবে। এরই মধ্যে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ স্থাপন হয়ে যাবে। তাতে, ত্রিপুরা থেকে খুবই অল্প সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌছে যাওয়ার পাশাপাশি রেলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল অনেকটা উন্নত হবে।
দোরাইস্বামী বলেন্, বাংলাদেশে সর্বত্র ব্রডগেজ নেই। অনেক জায়গায় এখনো মিটার গেজে চলছে ট্রেন। তাঁর কথায়, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ডুয়েল গেজ পুরোপুরি নেই। অধিকাংশ স্থানে রয়েছে মিটার গেজ। ফলে, সিলেট, কুমিল্লা এই অঞ্চলগুলি এখনো মিটার গেজে যুক্ত রয়েছে। সেই তুলনায়, পশ্চিমাঞ্চলে ডুয়েল গেজ রয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ সমাপ্ত হলে বাংলাদেশেও পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলে যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে। তাতে, পূর্বাঞ্চলের দিকেও অধিক নজর দেওয়া হবে। ফলে, সিলেট, কুমিল্লা ওইসব অঞ্চলগুলিও ব্রডগেজে যুক্ত হয়ে যাবে। তাতে, উপকৃত হবে ত্রিপুরাও।
তাঁর দাবি, বাংলাদেশে রেল যোগাযোগে উন্নতির সরাসরি প্রভাব পড়বে ত্রিপুরায়। বাড়বে বাণিজ্য, সাথে বাড়বে যাত্রী পরিবহনও। তাতে, দুই দেশেরই খুব উপকার হবে। কারণ, ত্রিপুরা বাংলাদেশে রফতানি বাড়াতে চাইছে। ত্রিপুরার আনারস, কাঠাল সহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টায় রয়েছে ত্রিপুরা সরকার। বাংলাদেশও ত্রিপুরায় রফতানি বৃদ্ধির জন্য দারুনভাবে আগ্রহী। দোরাইস্বামীর মতে, আগামী দিনে রেল সংযোগের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।