BRAKING NEWS

পঞ্চায়েত উন্নয়নে বরাদ্দ ১০৫.৫৮ কোটি অব্যয়িত, বিধানসভায় তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ফেব্রুয়ারী৷৷ পঞ্চায়েতে খরচ হয়নি বরাদ্দ অর্থ৷ উন্নয়ন খাতে ১০৫ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা অব্যয়িত রয়েছে৷ এরজন্য বিরোধীদের দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ জিলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি কাজ করছে না, তাই উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচ হচ্ছে না৷ এই গুরুতর অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিরোধীদের দখলে থাকা জিলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতগুলি চরম অসহযোগিতা করছে৷ সাথে যোগ করেন, পূর্বতন সরকারের আমল থেকেই পঞ্চায়েত উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থ অব্যয়িত রয়েছে৷ কিন্তু, এই অভিযোগ মানতে অস্বীকার করেন বিরোধীরা৷ তাদের বক্তব্য, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই জিলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি কোনও কাজ করতে পারছে না৷ বিরোধীদের এই অভিযোগে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা তীব্র আপত্তি জানান৷ তাতে আজ বিধানসভায় শাসক ও বিরোধী সদস্যদের মধ্যে তীব্র বাকবিতন্ডা হয়েছে৷ ট্রেজারি বেঞ্চের তরফে পঞ্চায়েত আইন মেনে নতুন করে জনগণের রায় নেওয়ার দাবী তোলা হয়েছে৷ মূলত, আজ পঞ্চায়েত উন্নয়নে বরাদ্দ অব্যয়িত রাখার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা৷

২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯-এর এখন পর্যন্ত পঞ্চায়েত উন্নয়ন তহবিল (পি ডি এফ) এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশনের (এফ এফ সি) ১০৫.৫৮ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছেন৷ কোনও কোনও জিলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক উপদেষ্টা কমিটি স্তরে সভা না হওয়ার কারণে এই টাকা অব্যয়িত রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, পঞ্চায়েত উন্নয়ন তহবিলে জিলা পরিষদে ১৮৭ কোটি, ব্লকস্তরে ৬.৮৭ কোটি এবং গ্রামস্তরে ১৫.৭৫ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে৷ সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত উন্নয়ন তহবিলে অব্যয়িত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ২৪৪৯ কোটি টাকা৷ তিনি জানান, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯-এর এখন পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে চতুর্দশ অর্থকমিশনে (এফ এফ সি) অব্যয়িত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৮১.০৯ কোটি টাকা৷

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ রাজ্য বিধানসভায় জানান, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটির নির্বাচিত সদস্য-সদস্যাদের অধিকাংশের মধ্যে অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন স্তরে সভার কাজ সঠিকভাবে করা যায়নি এবং প্রকল্প রূপায়ণে বিলম্বিত হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা পঞ্চায়েত আইন ১৯৯৩-র ধারা ১৩৯-র (১) উপধারা মোতাবেক প্রত্যেক জিলা পরিষদের প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার সাধারণসভা করার কথা৷ ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি জিলা পরিষদে সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ৩২টি৷ কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯টি৷ খোয়াই ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদে কোনও সাধারণ সভা হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পঞ্চায়েত আইন ১৯৯৩-র ধারা ১৫৬-র (৩) উপধারা মোতাবেক জিলা পরিষদের কার্যনির্বাহী সভা দুই মাসে অন্তত একবার জিলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ ২০১৮ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি জিলা পরিষদে মোট কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ৪৮টি, কিন্তু সভা হয়েছে ১২টি৷ ঊনকোটি, খোয়াই ও সিপাহীজলা জিলা পরিষদে কোনও কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পঞ্চায়েত আইন ১৯৯৩-র ধারা ৮৭-র উপধারা (১) মোতাবেক প্রত্যেক প’ায়েত সমিতির দুই মাসে অন্তত একবার সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ ২০১৮ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ২১০টি৷ কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫৯টি৷ ডুকলি, বক্সনগর, রাজনগর, ঋষ্যমুখ ও পোয়াংবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়নি৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পঞ্চায়েত (প্রশাসন) বিধি ১৯৯৪-র ধারা ৪৪-র (১) উপধারা মোতাবেক পঞ্চায়েত সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা মাসে অন্তত ১টি হওয়ার কথা৷ ২০১৮ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ৪২০টি৷ কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩৮টি৷ কদমতলা, চণ্ডীপুর, সালেমা, দুর্গাচৌমুহনি, খোয়াই, কল্যাণপুর, জিরানীয়া, পুরাতন আগরতলা, মোহনপুর, বক্সনগর, মোহনভোগ, জোলাইবাড়ি, ঋষ্যমুখ, সাতচাঁদ ও পোয়াংবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪০টি ব্লক উপদেষ্টা কমিটিতে মোট সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ৪৮০টি৷ কিন্তু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭৯টি৷ কুমারঘাট, আমবাসা, গঙ্গানগর, মুঙ্গিয়াকামী, লেফুঙ্গা, জম্পুইজলা, মোহনভোগ, কাঁঠালিয়া ও বকাফা ব্লক উপদেষ্টা কমিটিতে কোনও সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়নি৷

মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য এবং বক্তব্যের সাথে একমত হননি বিরোধীরা৷ বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরীর অভিযোগ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, কারণ তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন৷ বিরোধীদের দখলে থাকা জিলা পরিষদ কিংবা পঞ্চায়েত সমিতিতে জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ বিরোধী বিধায়ক তপন চক্রবর্তীও একই সুরে অভিযোগ করেছেন৷ রাজ্য সরকারের কাছে তাঁরা বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন৷ কিন্তু, বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন এবং পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিরোধীদেরই বিঁধেছেন৷ পরিষদীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, ১০৫ কোটি টাকা পঞ্চায়েত উন্নয়নে অব্যয়িত রেখে বিরোধীরা রাজ্য সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণকে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি, এই ঘটনায় পরিষ্কার রাজ্য সরকারের প্রতি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷ নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দিয়ে দায়িত্ব থেকে দূরে সরে থাকছেন বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা৷ তিনি বলেন, আইনগত দিক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত উন্নয়নে কাজ কেন হচ্ছে না তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়৷ এর সমাধানের পথ খঁুজে বের করা উচিত৷ পঞ্চায়েত উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থ অব্যয়িত রাখার জন্য বিরোধীদের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠায় ট্রেজারি বেঞ্চ ও বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে তীব্র বাক বিতন্ডা হয়৷ শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আইনগত সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ কারণ, প্রশ্ণ উঠেছে, পূর্বতন সরকারের আমল থেকেই অর্থ অব্যয়িত রয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *