BRAKING NEWS

লোকসভার সঙ্গে দেশের ১১ রাজ্যের নির্বাচনের প্রস্তাব বিজেপির, একমত নীতিশেরও, প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিধানসভার অনুমোদনও

নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট (হি.স.) : এক দেশ, এক ভোট। এই দাবিতে তৎপর ভারতীয় জনতা পার্টি। লোকসভার সঙ্গে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলতে চায় ভারতীয় জনতা পার্টি। এ বিষয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের একটি চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বিজেপির মতে, এক দেশ, এক ভোটে খরচ কমবে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার এক দেশ, এক ভোট প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত জানিয়েছেন, ‘আইনে সংশোধন ছাড়া একযোগে নির্বাচন অসম্ভব। কিন্তু, যদি পর্যায়ক্রমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেমন একসঙ্গে ১১টি রাজ্যের নির্বাচন, সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিধানসভার অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে।’

এক দেশ, এক ভোট। এই দাবিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের একটি চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় আইন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। চিঠিতে উল্লেখ, ভিন্ন সময়ে নির্বাচন হওয়ার কারণে সরকারের বিপুল খরচ হয়। এক দেশ, এক ভোটে খরচ কমবে।

আগামী লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে দেশের ১১ রাজ্যেও বিধানসভা নির্বাচন করিয়ে নিতে চায় বিজেপি। এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না বলেও জানা যাচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য

বিজেপি শিবির থেকে ‘ল কমিশনের কাছে একটি প্রস্তাব গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সোমবার ‘ল কমিশনের চেয়ারম্যান বি এস চৌহান বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন। গত কয়েক মাসে একাধিক বিরোধী দলের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠক করেছে ‘ল কমিশন।

সূত্রের খবর, বিজেপি শরিক দলগুলোও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করানোর পক্ষে। তবে ‘ল কমিশন জানিয়ে দিয়েছে একসঙ্গে নির্বাচন করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০১৯ সালেই লোকসভা নির্বাচন। ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তার অনেকটাই পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ নিয়ে বিরোধীদের সুর চড়ছে। গত কয়েক মাসে দেশের একাধিক লোকসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। বিরোধী শিবিরের একাংশ মনে করছে, এটা বিজেপির জন্য একটা ‘ওয়েক আপ’ কল। ফলে বিজেপি লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করিয়ে নিয়ে পারে তা আগে থেকেই অনুমান করছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তারই তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

এদিকে, একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সংসদের উভয় সভাতেই দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন। সেই সমর্থন থাকলেই সংবিধান

সংশোধনের জন্য বিল আনা যাবে। ফলে একসঙ্গে নির্বাচন করানোর প্রক্রিয়া খুব একটা সোজা হবে না সরকারের পক্ষে।

আগামী বছরের মাঝামাঝি বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায়। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মিজোরামে নির্বাচন করাতে হবে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এছাড়াও হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডেও নির্বাচন রয়েছে পরের বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে। ফলে একসঙ্গে নির্বাচন করানোর ক্ষেত্রে সমন্বয় করার কাজটা বেশ কষ্টকর হবে হলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

বিজেপি একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করানোর পক্ষে আদাজল খেয়ে লাগলেও বিরোধী দলগুলি এনিয়ে দুভাগ। দুবছর আগেই এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মোদী। সরকারের যুক্তি ছিল একসঙ্গে নির্বাচন করাতে পারলে খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে। সঙ্গে সময়ও বাঁচবে।

মোদী সরকারের ওই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, তেলুগু দেশম, জেডিএস ও বামেরা। তাদের দাবি একে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ক্ষতি হবে। তবে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন দুদফায় করানোর পক্ষেও প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও মোদী সরকারের এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে বিরোধী শিবির। এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে সহ একাধিক রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের দাবি বিজেপি সরকার যেটা করতে চাইছে সেটা সংবিধান বিরোধী। কয়েকদিন আগেই আইন কমিশন দুই দফায় লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছে। সোমবারও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ একসঙ্গে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধীরা একসঙ্গে নির্বাচনের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে।এদিকে জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এদিন বলেন, ‘এক দেশ এক ভোট তাত্ত্বিক ভাবে সঠিক, কিন্তু বাস্তবে তা অসম্ভব’। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে নীতীশ বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে লোকসভা ও সমস্ত রাজ্যগুলির বিধানসভার জন্য একসঙ্গে ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়। তত্ত্বগতভাবে এটা ঠিক’।

উল্লেখ্য, একসঙ্গে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করে গতকালই জাতীয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এরপর দিনই এই মন্তব্য করেছেন বিহারে বিজেপি-জেডিইউ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, আইনি কাঠামো ছাড়া সারা দেশে একইসঙ্গে সব নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত আজ আইনি কাঠামো বা ফ্রেমওয়ার্কের প্রশ্ন তুলে শীগগিরই একসঙ্গে সব ভোট করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।

গতকালই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একইসঙ্গে করানোর দাবিতে সওয়াল করেছেন। পরদিনই শীঘ্রই দেশে একযোগে যে কোনও সময় সব নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা, জানতে চাওয়া হলে রাওয়াত বললেন, কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ কমাতে বা বাড়াতে হলে সেজন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট (পেপার ট্রেল মেশিন) পাওয়ার ক্ষেত্রে লজিস্টিক অর্থাত্ পরিকাঠামোগত আয়োজন করাও সমস্যা তৈরি করবে।

তিনি বলেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচনে’র ব্যাপারে ২০১৫ সালেই কমিশন তার ইনপুট ও সুপারিশ পেশ করেছিল। বাড়তি পুলিশ, ভোটকর্মীরও প্রয়োজন হবে। একইসঙ্গে যখনই রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদ ফুরোবে, নতুন করে নির্বাচন করানোর দায়িত্ব কমিশন পালন করবে বলে জানান তিনি। গত ১৬ মে আইন কমিশনের সঙ্গে সারা দেশে একইসঙ্গে ভোট করানোর ব্যাপারে আলোচনায় কমিশন কর্তারা জানিয়েছিলেন, ১২ লক্ষ বাড়তি ইভিএম ও সমসংখ্যক ভিভিপ্যাট যন্ত্র কিনতে তাঁদের প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা লাগবে।

‘এক দেশ, এক নির্বাচনে’র ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্যের পর জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সাংবাদিকদের জানান, এক দেশ, এক নির্বাচনের ব্যাপারে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-র মন্তব্য শুধুমাত্র একটা প্রস্তাব মাত্র। এটি ১৯৮৩ সালেও এনিয়ে কথা উঠেছে, ১৯৯৯ সালেও একথা উঠেছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দেশে একটাই নির্বাচন হতো। এনিয়ে নীতি আয়োগ থেকে নির্বাচন কমিশন তাদের মতামত জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। বিজেপির বক্তব্য হল বিষয়টি নিয়ে সহমত হওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *