নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ মার্চ৷৷ ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আদা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে৷ বিজেপি যুব মোর্চার পক্ষ থেকে আজ পশ্চিম আগরতলা থানায় বেআইনীভাবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী সহ যারাই এই বেআইনী নিয়োগের সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে৷ এদিন, তৃণমূল এবং কংগ্রেস শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে৷ পাশাপাশি যারা দোষী তাদের শাস্তি এবং ঐ শিক্ষকদের পূণর্বাসন সহ বঞ্চিতদের বঞ্চিতদের চাকুরী পাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷ আগামীকাল তৃণমূল এবং কংগ্রেস সারা রাজ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা দিয়েছে৷ সবমিলিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় শাসকদলকে ক্রমাগত চাপে রাখার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা৷ শাসকদল অবশ্য এসমস্ত কিছু নিয়ে কোন কথা বলছে না৷ ফলে, ধারণা করা হচ্ছে এই ইস্যুতে অনেকটাই চাপে রয়েছে শাসক দল৷
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন রাজ্য মন্ত্রিসভার উদ্দেশ্যে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাদের চাকুরী বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে কতজন শিক্ষক নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকুরী পাওয়া ক্ষেত্রে যোগ্য সেটা জানিয়ে দিক৷ পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুক যারা যোগ্য নন এবং ৩১ ডিসেম্বরের পর চাকুরী খোয়াবেন তাদের কিভাবে সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার৷ সুদীপবাবুর বক্তব্য, সরকার সমস্ত চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবে তা কেবল মুখে বললে চলবে না৷ কিভাবে তাদের সহযোগিতা করা হবে তা শ্বেতপ প্রকাশ করে জানাতে হবে৷ এদিন তিনি দাবি জানান, যারা ২০১৪ সালের উচ্চ আদালতের রায়ের পর এই সময়ের মধ্যে চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সোত্তীর্ণ হয়ে গেছেন তাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দিতে হবে৷ এদিন আরো দাবি করেন উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার তিনবার নিয়োগ নীতি সংশোধন করেছে৷ অথচ ত্রুটিমুক্ত নিয়োগ নীতি করতে পারেনি৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, বর্তমানে রাজ্য সরকারের যে নিয়োগ নীতি রয়েছে সেটাও ভুলে ভরা৷ আর এই ভুলে ভরা নিয়োগ নীতির মাধ্যমে এযাবৎকালের মধ্যে যতগুলি চাকুরী হয়েছে সমস্ত চাকুরীই বেআইনী৷ তাঁর দাবি, উচ্চ আদালতে মামলা হলে আবারও রাজ্য সরকার পরাজিত হবে এবং সমস্ত চাকুরী বাতিল হবে৷ এদিন তিনি বলেন, এই ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ৷ সুদীপবাবু জানান, শুক্রবার বিকালে সারা রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করবে৷
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক আশীষ কুমার সাহার বক্তব্য, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান সহ এখন যতগুলি ক্ষেত্রে যাদেরই চাকুরী গেছে তাদের পুণর্বাসন দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ ১০৩২৩ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রেও যারা অযোগ্য তাদের পুণর্বাসন দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না৷
এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সাংবাদিক সম্মেলনে এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে৷ পাশাপাশি ঐ শিক্ষকদের মধ্যে যোগ্যতার নিরিখে চাকুরী পাবেন না তাদের পুণর্বাসন, যারা পুণরায় আবেদন জানাবেন তাদের জন্য আইন শিথিল করার জন্য এনসিটিই’র কাছে আবেদন যারা বঞ্চিত তাদেরকেও সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস৷ প্রদেশ কংগ্রেসের লিগ্যাল সেল’র পক্ষ থেকে আইনজীবী হরেকৃষ্ণ ভৌমিক বলেন, এই রায়ে রাজ্য সরকার ও শাসক দলের মুখোস খুলে গেছে৷ সরকারের ভূল নীতির কারণে ১০৩২৩ জন শিক্ষক এখন বিপদের মুখে৷ তাই তাদের জন্য রাজ্য সরকারকেই ভাবতে হবে৷ পাশাপাশি যারা চাকুরী বঞ্চিত তাদেরকেও সহযোগিতা করতে হবে৷ এদিন কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা বিধায়ক গোপাল রায় বলেন, শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস সারা রাজ্যে আন্দোলন গড়ে তুলবে৷
এদিকে, বিজেপি যুব মোর্চা এই ইস্যুতে রাজধানী আগরতলায় সুবিশাল মিছিল সংগঠিত করে৷ মোর্চার তরফে পশ্চিম থানায় মামলাও করা হয়েছে৷ মোর্চার পক্ষ থেকে পশ্চিম থানার ওসি’তে দেওয়া এজহারে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় পরিস্কার যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগে অন্যায় এবং বেআইনী নিয়োগগুলি করা হয়েছিল৷ তদানিন্তন সরকারের কিছু স্নেহধন্য আমলা এবং মন্ত্রিদের অশুভ চক্রান্তের ফলে নিয়োগগুলি বাতিল হয়৷ উচ্চ আদালতের রায়ের পড়ে ঐ শিক্ষকদের মধ্যে একজন চরম অবশাদে আত্মহত্যা করেছেন এবং আরও কিছু অবাঞ্চিত মৃত্যু ঘটে৷
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, যেকোন মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃজনক ও বেদনাদায়ক৷ উপরন্তু যদি কোন মৃত্যুর পেছনে অন্যায় ষড়যন্ত্র ও উস্কানি থাকে তবে তা সংবিধান অনুসারে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা হয়৷ এই ক্ষেত্রেও ঐ মৃত্যুগুলির পেছনে ষড়যন্ত্রকারী রাজ্যশক্তির অশুভ ছায়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ তাই কিভাবে ও কার বা কাদের প্রভাবে ঐ শিক্ষকের পদগুলি অনৈতিকভাবে পূরণ করা হয়েছিল তা যথাযথ তদন্তক্রমে প্রকাশ পাওয়া আবশ্যক৷ উচ্চস্তরের দূর্ণীতির কারণে প্রাণহানীর জন্য অসৎ, অনৈতিক ও বেআইনী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির যথাযথ ধারার প্রয়োগে দোষী ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মোর্চা৷ এবিষয়ে বিজেপি যুব মোর্চা সভাপতি টিংকু রায় জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের কাছ থেকে পাঁচ দিন সময় চেয়েছে৷ পাঁচদিনের মধ্যে তদন্তক্রমে জানাবে পুলিশ৷ তবে, পাঁচদিনের মধ্যে এবিষয়ে কোন কিছু পুলিশ না জানালে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেবে মোর্চা৷ প্রয়োজনে আদালতের দরজায় কড়া নাড়া হবে, বলেন তিনি৷