BRAKING NEWS

পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলে আঞ্চলিকতাবাদের অবসানের ইঙ্গিত, জাতীয়তাবাদের সগৌরব উত্থান, অপ্রতিহত বিজেপি, দুই দেবভূমিতে বাজিমাৎ, পাঞ্জাবে মুখ রক্ষা কংগ্রেসের, গোয়া ও মণিপুরে ত্রিশঙ্কু

নয়াদিল্লি, ১১ মার্চ৷৷ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনী ফলাফলে আঞ্চলিকতাবাদের অবসানেরই ইঙ্গিত মিলল৷ সেই সাথে জাতীয়তাবাদের

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফলাফলে দলীয় কর্মী সমর্থকদের বিজয়োল্লাস আগরতলায়৷ নিজস্ব ছবি৷

সগৌরব উত্থান শুরু হয়ে গেল৷ পাঞ্জাব বাদে বাকি চার রাজ্যেই বিজেপি আঞ্চলিক এবং জাতীয় দলকে জোর ধাক্কা দিতে পেরেছে৷ দেবভূমি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ডে জাতীয় দল কংগ্রেস বিজেপির কাছে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হয়েছে৷ সেই সাথে উত্তরপ্রদেশে আঞ্চলিক শক্তির কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে গেরুয়া শিবির৷ ১৫ বছর ধরে হিন্দি বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে পালা করে শাসন করেছে সমাজবাদী পার্টি ও বহু সমাজবাদী পার্টি৷ কিন্তু এবার বিজেপি এই দুই আঞ্চলিক দলকে পর্দার আড়ালে ঠেলে দিয়েছে৷ নিঃসন্দেহে এর অনেকটা কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই দিচ্ছে বিজেপি৷ স্বাভাবিকভাবে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে সারা দেশেই অপ্রতিহত হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির৷ পাঞ্জাবে পালা বদল করে শতবর্ষ প্রাচীন জাতীয় দল কংগ্রেস মুখ রক্ষা করতে পেরেছে৷ কিন্তু, গোয়া এবং মণিপুরে ত্রিশঙ্কু ফলাফল কংগ্রেসকে চিন্তায় রেখেছে৷ কারণ, বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি দৃঢ়তার সাথে দাবি [vsw id=”pV85u7S1bRc” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]করেছেন চারটি রাজ্যেই দল সরকার গঠন করবে৷ সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে জোট বেঁধে গোয়া এবং মণিপুরের গদিতে বসতে চলেছে বিজেপি৷ কংগ্রেস এই ফলাফল সাদরে মেনে নিয়েছে৷ সমাজবাদী পার্টির মুখ অখিলেশ যাদবও উত্তরপ্রদেশে জনাদেশ মাথা পেতে নিয়েছেন৷ শুধু বহুজন সমাজপার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী ভোট যন্ত্রে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন৷
বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল পাঞ্জাব বাদে বাকি চার রাজ্য বিজেপির দখলে যাবে৷ এরই সাথে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেন৷ কারণ, বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশে কোন রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছিল না৷ ফলে, আগে ভাগেই মায়াবতীকে টোপ দিয়ে রেখেছিলেন যাদবকুলের যুবরাজ অখিলেশ যাদব৷ কিন্তু শনিবার ভোট গণনা শুরু হতেই একে একে ছবি পরিষ্কার হতে শুরু করে উত্তরপ্রদেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হবে গেরুয়া শিবির৷ মোদি ঝড় এতটাই প্রবল ছিল যে উত্তরপ্রদেশে ৪০৩ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই দখল করে নেয় ৩১২টি আসন৷ লজ্জাজনক ফলাফল হয় জাতীয় দল কংগ্রেসের৷ পাশাপাশি দেশে শক্তিশালী আঞ্চলিক দল হিসেবে পরিচিত সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টিও ভীষণ ধাক্কা খায়৷ সমাজবাদীর ঝুলিতে ৪৭টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির দখলে ১৯টি আসন যায়৷ এই ফলাফল স্মরণাতীত কালের মধ্যে বিজেপির অন্যতম বড় জয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷ হিন্দি বলয়ের আরেক রাজ্য উত্তরাখন্ডে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে৷ ৭০ আসন বিশিষ্ট উত্তরাখন্ড বিধানসভায় বিজেপির ঝুলিতে গেছে ৫৭টি আসন৷ গত নির্বাচনে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল৷ একটি আসনের ব্যবধানে কংগ্রেস সরকার গঠন করেছিল৷ কিন্তু এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত পরাজিত হয়েছেন৷ এরই সাথে দলেরও ভরাডুবি হয়েছে৷ জাতীয় দল কংগ্রেস উত্তরাখন্ডে মাত্র ১১টি আসন ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে৷
দুই দেবভূমি যেখানে বিজেপির দখলে, সেখানে পাঞ্জাব কংগ্রেসের মুখ রক্ষা করেছে৷ শিরোমণি আকালি দল-বিজেপি জোট পাঞ্জাবে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে৷ কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে৷ ১১৭ আসন বিশিষ্ট পাঞ্জাব বিধানসভায় একা কংগ্রেস দখল করেছে ৭৭টি আসন৷ কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, বুথ ফেরত সমীক্ষায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পাটিকে পাঞ্জাবে অনেকটাই এগিয়ে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল মাত্র ২০টি আসন দখল করতে পেরেছে কেজরিওয়ালের দল৷ অবশ্য নতুন দল হিসেবে দিল্লি ছেড়ে পাঞ্জাবে খাতা খুলতে পেরে মুখ রক্ষা হয়েছে কেজরিওয়ালের, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল৷
হিন্দি বলয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নজর পূর্বোত্তরের দিকেও রয়েছে৷ ফলে, মণিপুরেও বিজেপি সরকার গঠন করবে বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ মণিপুরে কংগ্রেসের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে বিজেপির৷ আসনের নিরিখে কংগ্রেস বিজেপির থেকে এগিয়ে রয়েছে৷ ৬০ আসন বিশিষ্ট মণিপুর বিধানসভায় কংগ্রেস ২৮টি আসন দখল করেছে৷ অন্যদিকে, বিজেপির ঝুলিতে গেছে ২১টি আসন৷ সরকার গঠন করতে নূ্যনতম ৩১টি আসনের প্রয়োজন৷ স্বাভাবিকভাবেই জোট গঠন ছাড়া সরকার গঠন করা মণিপুরে কোনমতেই সম্ভব হচ্ছে না৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির দাবি অনুযায়ী, মণিপুরে নাগা পিপলস ফ্রন্ট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টিকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার জোর চেষ্টা চালানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ মণিপুরে কংগ্রেসের সাথে তৃণমূল কংগ্রেস জোট বাঁধবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে৷ তাতে, তৃণমূলের একটি আসন সহ জোটের আসন সংখ্যা হবে ২৯৷ তাতে নাগা পিপলস ফ্রন্ট কিংবা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মধ্যে কোন একটিকে জোট শরিক করতে পারলেই কংগ্রেস অনায়াসে মণিপুরে আবারও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে৷ কারণ, এই দুই দলের দখলে চারটি করে আসন রয়েছে৷ নতুবা, লোক জনশক্তি পার্টি এবং নির্দলকে সাথে নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার গঠনের প্রয়াস নেবে৷ অবশ্য, বিজেপিও মণিপুরে সরকার গঠন করার জন্য কোন ধরনের খামতি রাখবে না বলেই মনে হচ্ছে৷ কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে শরিক দল হিসেবে কাছে পেতে মরিয়া চেষ্টা করবে বিজেপি, এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে৷
এদিকে, গত নির্বাচনে গোয়া গেরুয়া শিবিরের দখলে ছিল৷ কিন্তু এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারশেকর পরাজিত হয়েছেন৷ তবে, তাতে বিজেপির ফলাফলে খুব একটা প্রভাব পড়েনি৷ গোয়াতে কংগ্রেসের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে বিজেপির৷ ৪০ আসন বিশিষ্ট গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ১৭টি আসনে এবং বিজেপির দখলে গেছে ১৩টি আসন৷ গোয়াতেও ফলাফল ত্রিশঙ্কু৷ ফলে, জোট বাঁধা ছাড়া এই রাজ্যেও সরকার গঠন বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ এনসিপি একটি আসন পেয়েছে৷ কিন্তু তাতেও ম্যাজিক ফিগার ২১ কংগ্রেস জোটের হচ্ছে না৷ ফলে, মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক, গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি এবং নির্দল প্রার্থীর সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে বিজেপি-কংগ্রেস উভয়েরই৷এই তিন দল তিনটি করে আসন দখল করেছে৷
সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড দুই দেবভূমিতে বিজেপি সরকার গঠন নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর এখন মণিপুর এবং গোয়াতে কোন দলের সরকার গড়বে তা এখন সময়ের অপেক্ষা৷ তবে, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট বিজেপি অপ্রতিহত৷

 

ফলাফল জানতে নীচে লিঙ্কে ক্লিক করুন –

http://eciresults.nic.in/PartyWiseResult.htm?st=
সৌজন্যে ঃ নির্বাচন কমিশন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *