নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারি৷৷ কড়াকড়ি শুরু হতেই গভীর চিন্তায় শাসক দল৷ তাই রেগায় স্বচ্ছতার নামে জিও
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/02/Bijan-Dhar-300x201.jpg)
ট্যাগিংয়ের কারণে বহু মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দাবি, সততা রক্ষার বিরুদ্ধে নয় সিপিএম৷ যদি কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকছে কিনা তা যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা হয় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে নিজেদের লোক বসিয়ে রাখুক৷ প্রয়োজনে অফিস খুলে তদারকি করুক৷ কারণ, জিও ট্যাগিংয়ের ফলে এখন রেগা শ্রমিকদের মজুরি পেতে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় সরকার রেগা সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে জিও ট্যাগিং বাধ্যতামূলক করেছে৷ এখন শুধু কাজের হিসেব দিলেই যথেষ্ট নয়৷ তার সাথে জিও ট্যাগিংও করতে হচ্ছে৷ রেগার কাজের ক্ষেত্রে এমন বহু অভিযোগ রয়েছে যেখানে একই কাজ একাধিকবার দেখানো হয়েছে৷ এই দুর্নীতি আটকানোর উদ্দেশ্যেই জিওট্যাগিং শুরু করা হয়েছে বলে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রকে জনৈক আধিকারিক জানিয়েছেন৷ রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশেই এখন রেগার কাজে জিও ট্যাগিং বাধ্যতামূলক৷
এরাজ্যেও রেগার কাজ নিয়ে দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে৷ একাধিকবার রেগায় সেরা পুরস্কার মিললেও বিজেপি রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধরের বক্তব্য গত দুই বছর ধরে রেগা প্রকল্পে কোন পুরস্কার পায়নি ত্রিপুরা৷ এই রেগা প্রকল্পের কাজ নিয়ে সস্তা রাজনীতিরও বহু অভিযোগ রয়েছে৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে রেগা প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে জিওট্যাগিং শুরু হওয়ায় চিন্তিত দেখা গেছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদককে৷ তবে, এই চিন্তার পেছনে তাঁর যুক্তি স্বচ্ছতার নামে প্রকল্প রূপায়িত করতে এখন বহু কাঠর পোড়াতে হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছে৷ তাতে, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মজুরি সহ অন্যান্য প্রকল্পের অর্থ পাঠানোর বিষয়ে কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু এখন জিও ট্যাগিং রেগা সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, সততা রক্ষার বিরুদ্ধে নই আমরা৷ রাজ্যের উপর বিশ্বাস না থাকলে কেন্দ্র নিজেদের আধিকারিক এখানে বসিয়ে রাখা উচিত৷ শুধু তাই নয়, অফিস খুলে প্রতিদিন নজরদারি রাখা হোক৷ কিন্তু, রেগার মজুরি সহ বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা পেতে যে হয়রানি হচ্ছে তা কাম্য নয়৷ তাঁর দাবি, রেগা সহ বিভিন্ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পদ্ধতি সহজ করা হোক৷
এদিন বিজনবাবু রাজ্যের একাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে এক আসনে বসিয়ে বঁিঁধেছেন৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, রাজ্যের শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিজেপির অদৃশ্য মদতেই পাহারে গঠিত হয়েছে চারদলীয় ফোরাম৷ তাঁর মতে, সিপিএমের সাথে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হেরে গেলে বিজেপি রাজ্যের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে উদ্ধত আইপিএফটিকে মদত জুগাচ্ছে৷ তাঁর অভিযোগ, শান্তি মিছিল বয়কট করেছে বিজেপি, আইপিএফটি এবং তৃণমূল কংগ্রেস৷ এই তিন রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ করে বিজনবাবু বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হতেই পারে৷ কিন্তু রাজনৈতিক লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়ে উন্নয়নকে মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা চলছে৷ কেউ আইন অমান্য আন্দোলন করছে, আবার কেউ পাহাড় বন্ধের ডাক দিচ্ছে৷ তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষ এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করতে পারছেন৷ তাই তিনি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন জানান, আন্দোলন হোক তাতে আপত্তি নেই৷ কিন্তু এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে৷
এদিন তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি ফ্যাসিস্ট সুলভ মনোভাব নিয়ে তারা তাদের কতগুলি সংগঠন তৈরি করেছে এবং এরাজ্যেও ঐ সংগঠনগুলি প্রসার বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ বিজনবাবুর দাবি, বিজেপি সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বামফ্রন্ট সরকারের উন্নয়নের যে ধারা বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতি নষ্ট করছে৷ পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনাতেও মুখর হন৷ তাঁর অভিযোগ, উস্কানিমূলক এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক কাজকর্মের মাধ্যমে রাজ্যে শান্তি বিনষ্টের যে প্রচেষ্টা চলছে তা কেন্দ্রের পরিকল্পনাতেই হচ্ছে৷ পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রের সমালোচনায় আরো বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি মোদি সরকার৷ উপরন্তু এবছর বাজেটে এসসি, এসটি সাব প্ল্যান বাতিল করে দিয়েছে৷ যার কারণে এসসি, এসটি খাতে যে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা তার অনেকটাই কম বরাদ্দ হয়েছে৷ এসমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় ছোটবড় জমায়েত সংগঠিত করা হবে বলে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন৷