খরচের হিসাব দিতে পারেনি এডিসি, বরাদ্দ কমানোয় ক্ষুব্ধ গণমুক্তি পরিষদ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ ফেব্রুয়ারি৷৷ প্রকল্প বাস্তবায়ন শংসাপত্র না দিলেও বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া নিয়ে প্রতিবাদী হয়েছে গণমুক্তি পরিষদ ও ত্রিপুরা তপশিলী জাতি সমন্বয় সমিতি৷ বিশেষ করে গণমুক্তি পরিষদের বক্তব্য, নীতি আয়োগের সুপারিশে গত বাজেটে যে টাকা পেয়েছে পূর্বোত্তরের স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলি এবারের বাজেটে সেখানেও ছুড়ি চালানো হয়েছে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে জিএমপি’র সম্পাদক রাধারণচরণ দেববর্মা জানান, এবারই প্রথম এসটি, এসসি কল্যাণে সাবপ্ল্যানে কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি৷ ১৯৭৪ সাল থেকে এই খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ রাখা হত৷ কিন্তু এবছর তা হয়নি৷ এমনকি পূর্বোত্তরের স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলির জন্য নীতি আয়োগের সুপারিশে গত বাজেটে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল৷ এবছর তা কমিয়ে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন নজর নেই৷ সে জন্যই বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়নি৷ নীতি আয়োগের বক্তব্য, প্রকল্প রূপায়ণ শংসাপত্র মিলছে না পূর্বোত্তরের স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলির কাছ থেকে৷ এবিষয়ে জিএমপি রাজ্য সম্পাদক তথা ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মা জানান, প্রকল্প রূপায়ণ শংসাপত্র নিয়ে কথা থাকতেই পারে৷ ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ ৪০ শতাংশ প্রকল্প রূপায়ণ শংসাপত্র পাঠিয়েছে৷ তাঁর দাবি, পূর্বোত্তরে ত্রিপুরাই সবচেয়ে বেশি প্রকল্প রূপায়ণ শংসাপত্র পাঠিয়েছে৷ তাঁর যুক্তি, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে৷ যার কারণে, সময় মত প্রকল্প রূপায়ণ শংসাপত্র পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না৷ এদিন তিনি জানান, নীতি আয়োগের ভূমিকা নিয়ে পূর্বোত্তরের সবকটি স্বশাসিত জেলা পরিষদ ভীষণ ক্ষুব্ধ৷ তাই আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শিলংয়ে খাসি জেলা কাউন্সিল হলে পূর্বোত্তরের সমস্ত স্বশাসিত জেলা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ ঐ বৈঠকে নীতি আয়োগের ভূমিকা এবং তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেওয়া উচিত সে বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে৷ তাঁর দাবি, সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিল মোতাবেক স্বশাসিত জেলা পরিষদকে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন সেটা মেনে চলছে না কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷
এদিন তিনি জানিয়েছেন, এসটি এসসি সাবপ্ল্যানে কোন অর্থ বরাদ্দ না করেই থেমে থাকেনি কেন্দ্রীয় সরকার৷ উপজাতি কল্যাণ এবং তপশিলী জাতি কল্যাণে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তাতেও বাজেটে কাটছাট করেছে কেন্দ্র৷ তিনি জানান, উপজাতি কল্যাণে অন্তত ৪৯৯২ হাজার কোটি এবং তপশিলী জাতি কল্যাণে ৯৬ হাজার কোটি বরাদ্দের কথা ছিল৷ কিন্তু তার থেকে অনেক কম বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এরই প্রতিবাদে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা রাজ্যে প্রতিবাদ সভা, মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত করা হবে৷ ঐদিন আগরতলায় দুপুর দুটোয় মিছিল করে প্যারাডাইস চৌমুহনীতে কেন্দ্রীয় সমাবেশ সংগঠিত করা হবে৷
তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্র চরম বঞ্চনা শুরু করেছে৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এসটি, এসসি সংরক্ষণ তুলে দিতে চাইছে৷ তাঁর দাবি, এই ধরনের প্রবণতা ঐক্য সংহতির পক্ষে যেমন সুখকর নয়, তেমনি পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর কল্যাণেও সহায়ক নয়৷
এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি এডিসি এলাকা বন্ধ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাধাচরণ বাবু বলেন, রাজ্যের শান্তি নষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এডিসি এলাকা বন্ধ প্রত্যাখাত হলেও তা থেকে শিক্ষা না নিয়ে ফের গন্ডাছড়া মহকুমায় ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৮ ঘন্টার বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ রাধাচরণবাবুর দাবি, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিভাজনের রাজনীতি যারা করে তাদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দিচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, কিছু দায়িত্বশীল বিরোধী দল ঐক্য নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলছেনা৷ সরাসরি বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে তারা কোন কথা বলছে না৷ সাময়িক রাজনৈতিক লাভালাভের চিন্তা করে রাজ্যের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে৷ তাঁর সাফ কথা, এডিসি এলাকা বন্ধ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৮ ঘন্টার গন্ডাছড়া মহকুমা বন্ধ বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করছে বলেই তারা এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলছে না৷ এর বিরুদ্ধে তিনি রাজ্যবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *