কলকাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি৷৷ মায়ের মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নিচু করে থাকুন৷ সম্পত্তিতে মাথা গলানো যাবে না৷ বাগুইহাঁটিতে বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে ছেলে ও বৌমাকে এভাবেই কলকাতা হাইকোর্ট ভৎর্সনা করেছে৷ পাশাপাশি পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে৷ এদিকে, বৃদ্ধার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছেলে ও তার স্ত্রী৷
বাগুইহাঁটির দেশবন্ধু নগরের তেঁতুলতলার বাসিন্দা বছর ৬৫’র শান্তি মোদক তার ছেলে ও বৌমা মিলে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ৷ ঐ বৃদ্ধা বাগুইহাঁটি থানায় এবিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও হতাশ হয়েছেন৷ শেষে তিনি উচচ আদালতের দ্বারস্থ হন৷ ছেলে ও বৌমার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে তিনি মামলা করেন৷ সোমবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নিচু করে থাকতে হবে৷ শুধু তাই নয়, সম্পত্তিতে মাথা গলানোও যাবে না৷ বরং মাকে ভালোবাসুন৷
বৃদ্ধার অভিযোগ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তাদের বাড়ি ভেঙ্গে ফ্ল্যাট তৈরি করার জন্য এক প্রমোটারের সাথে তার ছেলে ও বৌমা প্রাথমিক চুক্তি করেন৷ এরপর থেকেই তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে৷ এমনকি তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়৷ নিজের বাড়ি থেকে বের হয়েও মেয়ের সংসারে গিয়ে শান্তি পাননি তিনি৷ কয়েকদিন মেয়ে জামাইয়ের থাকার পর সেখান থেকেও তাঁকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে৷ এরপর থেকে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা ছিল কখনো ফুটপাত কিংবা গাছ তলায়৷ উচচ আদালতে ঐ বৃদ্ধা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ করেছেন৷ এদিন শুনানিতে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এদিকে, বৃদ্ধার ছেলে ও বৌমা তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
উল্লেখ্য, দেশে একাংশ বৃদ্ধ পিতা-মাতা সন্তানদের লাঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন৷ এবিষয়ে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন৷ দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার বাড়িতে সন্তান থাকতে পারবে দয়ায়৷ দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে, কোন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের পিতা-মাতার সম্পত্তির ওপর অধিকার নেই৷ দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতিভা রাণী বলেছেন, পিতা-মাতার বাড়িতে প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত ছেলে তাদের অনুমতি ছাড়া থাকার কোন অধিকার নেই৷ দয়াবশত পিতা-মাতার বাড়িতে থাকতে পারবেন ছেলে৷
এদিন, কলকাতা হাইকোর্টও একইভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে পিতা-মাতার বাড়িতে ছেলে সন্তানদের জোর করে থাকার কোন অধিকার নেই৷
2017-02-14