ভাড়ারে টান পড়েছে, লগ্ণিকারীদের থেকে হাত পেতে টাকা আনতে হচ্ছে রাজ্যকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি৷৷ ভাড়ারে টান পড়েছে৷ তাই অর্থলগ্ণিকারী সংস্থার কাছ থেকে হাত পেতে টাকা

রবিবার ত্রিপুরা সিভিল সার্ভিস অফিসার্স এসোসিয়েশনের ২৪তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ছবি নিজস্ব৷

আনতে হচ্ছে রাজ্যকে৷ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের জন্য বিভিন্ন বরাদ্দখাতে ১৫’শ থেকে ১৭’শ কোটি টাকা কম দিয়েছে৷ ফলে, উন্নয়ন কাজ চালু রাখার ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই বলে ক্ষোভের সুরে বলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ রবিবার ত্রিপুরা সিভিল সার্ভিস অফিসার্স এসোসিয়েশনের ২৪তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেন৷
এদিন তিনি বলেন, কেন্দ্রে নতুন সরকারের চতুর্থ বাজেট সম্প্রতি সংসদে পেশ হয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, বাজেট জনগণ বিরোধী এবং ধনীর পক্ষে৷ মূলত, ধনীদের মধ্যেও যারা সর্বাধিক ধনী তাদের স্বার্থেই বাজেট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, রাজ্যগুলিকে শক্তিশালী করে তোলার দরকার ছিল, কিন্তু তা হচ্ছে না৷ যোজনা কমিশন থাকাকালীন বিশেষ খাতে বরাদ্দ মিলত৷ এখন সে সব প্রায় বন্ধ৷ তিনি জানান, বিশেষ ক্যাটাগরির রাজ্য হিসেবে যে সুযোগ সুবিধাগুলি মিলত তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চল দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত৷ তাঁর দাবি, আমাদের দেশে খুব কম এমন রাজ্য রয়েছে যাদের কেন্দ্রের সাহায্যের খুব একটা প্রয়োজন নেই৷ তারা নিজেদের আয় উপার্জন করে উন্নয়নকর্মসূচী তৈরি এবং রূপায়ণ করতে পারে৷ কিন্তু দেশের অধিকাংশ রাজ্যেরই কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, সেটাই স্বাভাবিক কারণ আমাদের যে রাজস্ব তার বেশিরভাগটাই কেন্দ্রের হাতে চলে যাচ্ছে৷ চতুর্দশ অর্থকমিশনে যে ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা গেছিল হয়তবা এতে রাজ্যের পক্ষে সুফল হবে৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, ১০ শতাংশ বাড়ালেও যোজনা কমিশন থাকাকালীন অনেকগুলি বিষয় বরাদ্দ মিলত সেখানে কাঁটছাঁট করা হয়েছে৷ যার কারণে রাজ্যের ১৫’শ থেকে ১৭’শ টাকা ঘাটতি৷ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, একদিকে ঘাটতি, অন্যদিকে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল সেটাও পাচ্ছি না৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের রাজ্যের রাজস্ব আয় তাদের মত হিসেব করেছে৷ কিন্তু সেই মত রাজস্ব আয় সম্ভব হচ্ছে না৷ যার কারণে ঐ ঘাটতি রাজ্যের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷ তিনি বলেন, তিন বছর আগে যোজনা কমিশন থাকাকালীন বিভিন্ন খাতে পরিকাঠামোর উন্নয়নে যে কাজ শুরু হয়েছিল তার প্রথম কিস্তির টাকা মিললেও যোজনা কমিশনই বাতিল হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী পর্যায়ের অর্থ মিলছে না৷ ফলে, আর্থিক সীমাবদ্ধতা আমাদের সামনে এসে তৈরি হয়েছে৷
তবে, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও কাজের অনেক জায়গা রয়েছে৷ রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ বন্ধ করতে চাইছে না৷ যার কারণে ধার করতে হচ্ছে৷ এদিন তিনি জানান, এখনো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে রাজ্যের অভার ড্রাফট হয়নি৷ কিন্তু বাজার থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে৷ এবিষয়ে তাঁর যুক্তি, রাজ্যের জনগণের আর্থিক অবস্থার চিন্তা করে রাজ্য সরকার কর বাড়াচ্ছে না৷ ফলে, এরকম পরিস্থিতিতে ঋণ নেওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই৷ তিনি জানান, অর্থলগ্ণিকারী সংস্থার কাছে রাজ্য সরকারকে যেতে হচ্ছে ঋণ নেওয়ার জন্য৷ কেন্দ্র রাজ্যের চাহিদামত অর্থ বরাদ্দ করছে না, তাই নিরূপায় মুখ্যমন্ত্রী হতাশার সুরে বলেন, ঋণ নেওয়া ছাড়া রাজ্যে বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের আর কোন উপায় নেই৷
তবে, অফিসার্সদের উদ্দেশ্যে তাঁর অনুরোধ সময়ের কাজ যেন যথা সময়ে সমাপ্ত হয়৷ কারণ, ধারের টাকায় অপব্যয় করার চলবে না৷ এরই সাথে তিনি অফিসার্সদের উদ্দেশ্যে বলেন, কাজের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়ার সমান৷ এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে৷ এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, অনেক অফিসার্সদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন৷ শুধু তাই নয়, এমন ফাইল আসে যেখানে কোন মতামত থাকে না৷ মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা যে কোন কাজেই মন্তব্য করতে হবে৷ ভুল হবে এই ভেবে কিছু বলবেন না সেটা হতে পারে না৷ এজন্য তিনি অফিসার্সদের অভয় দিয়ে বলেন, কাজের ক্ষেত্রে সৃজনশীল চিন্তা আনতে হবে৷ সে মোতাবেক সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে৷ শুধু তাই নয়, সেই প্রস্তাব বিবেচিত হয়েছে কিনা তার খোঁজখবর নিয়ে প্রশ্ণ করতে হবে৷ কারণ তিনি মনে করেন আধিকারিক এবং সরকারের মধ্যে যে সেতু রয়েছে তার মাধ্যমেই রাজ্যের এবং রাজ্যবাসীর উন্নতি সম্ভব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *