নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে বাড়তি সংকট, মন্তব্য বঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারি৷৷ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে বাড়তি সংকট৷ মন্তব্য করলেন

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত৷ ছবি নিজস্ব৷

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অধ্যাপক অসীম দাশগুপ্ত৷ পাশাপাশি তিনি বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারকে চূড়ান্ত স্বৈরাচারী বলেও কটাক্ষ করেছেন৷ রবিবার সরকারি কর্মচারী সমন্বয় সমিতির উদ্যোগে বিমুদ্রাকরণ ও তার নেতিবাচক প্রভাব শীর্ষক আলোচনা সভায় শ্রীদাশগুপ্ত এভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন৷
তাঁর মতে, নির্বাচনের কোন প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে দেশবাসীকে চরম হয়রানি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাই তিনি নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে বাড়তি সংকট বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন, বিকল্প পথ অনুসরণ না করে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত চমক দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কারণ তাঁর ধারণা ভাল জিনিস চমকপ্রদ হয় না৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রীদাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনের আগে কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস এবং কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিযে- ছিলেনপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কিন্তু কালো টাকা উদ্ধার হয়নি, বরং কর্মসংস্থান আরো কমে গেছে৷ এই নোট বাতিলের কারণেও বহু মানুষ চাকুরি হারিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, কিছুদিনের মধ্যেই ধরা পড়বে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে কত ক্ষতি হয়েছে৷ এদিন তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কারোর উপর আস্থা রাখেন না৷ যদি আরবিআই’র উপর আস্থা রাখতেন তাহলে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে দেশবাসী হয়রানির সম্মুখীন হতেন না৷ তাঁর বক্তব্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নতুন নোটের পর্যাপ্ত যোগানে সংকট এড়ানো যেত৷ তিনি দাবি করে বলেন, আজ পর্যন্ত কোন দিন আরবিআই থেকে কোন তথ্য ফাঁস হয়নি৷ তাই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরবিআই’র সাথে পরামর্শক্রমে গৃহীত উদ্যোগ দেশবাসীকে হয়রানির হাত থেকে বাঁচাত৷ অথচ দেখা গেছে, এই নোট বাতিলের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নূ্যনতম দুঃখ প্রকাশ করারও কোন প্রয়োজনীয়তাবোধ করেনি৷ কেন্দ্রের এই মনোভাব চূড়ান্ত স্বৈরাচারী বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন৷ কারণ, তিনি নিশ্চিত নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়নি৷
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কালো টাকা উদ্ধার করা এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন৷ এবিষয়ে শ্রীদাশগুপ্ত কটাক্ষের সুরে বলেন, কত কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে এখনো পর্যন্ত তার হিসেব মিলেনি৷ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল৷ তার অধিকাংশই ফিরে এসেছে৷ তাই তিনি প্রশ্ণ তুলে বলেন, কালো টাকা কোথায় গেল৷ তাঁর দাবি, বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করার বদলে কেন্দ্রীয় সরকার দেশে কালো টাকা নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, ল্যাটিন আমেরিকার মত দেশ সুইচ ব্যাঙ্কে দাবড়ানি দিয়ে কালো টাকা উদ্ধার করে নিয়ে গেছে৷ আমাদের দেশেও কালো টাকার মালিকদের পুরো তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রয়েছে৷ আয়কর দপ্তর চাইলেই তাদের ফৌজদারি আইনের ভয় দেখিয়ে কালো টাকা দেশে ফেরত আনতে পারে৷ তিনি জানান, কালো টাকার মালিকরা নগদে টাকা রাখেন না৷ বড় বড় অট্টালিকা, অলঙ্কারে লুকিয়ে থাকে কালো টাকা৷ সেই হিসেবও আয়কর দপ্তরের কাছে রয়েছে৷ কিন্তু সেদিকে কোন নজরই দেওয়া হচেছ না৷ তার বদলে বলা হচ্ছে, নগদহীন অর্থনীতি৷ শ্রীদাশগুপ্তের কটাক্ষ আমেরিকার মত দেশে ৫৫ শতাংশ নগদে লেনদেন হয়৷ আমাদের দেশে ৯৮ শতাংশ নগদে লেনদেন হয়৷ যেখানে ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো আমাদের দেশে পর্যাপ্তভাবে গড়ে উঠেনি সেখানে নগদহীন লেনদেন নতুন বৈষম্য তৈরি করেছে বলে তিনি মনে করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *