নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ ফেব্রুয়ারী৷৷ ডিম খাওয়াও এখন দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু, ডিম নিয়ে রাজ্য সরকারকে ফুড সেফটি এন্ড স্টেন্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) সতর্ক করার পর মিড-ডে-মিলে দূষিত খাবারের প্রমাণ মিলেছে৷ সম্প্রতি এফএসএসএআই রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ভারতের বাজারে কৃত্রিম ডিম ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই মিড-ডে-মিল ডিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ সূত্রের খবর, ডিম নিয়ে সতর্ক বার্তা পেয়েই শিক্ষা দপ্তর সমস্ত সুকল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলিকে মিড ডে মিলে ডিম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়৷ এরই মাঝে শিক্ষা দপ্তর বিভিন্ন সুকলের মিড-ডে-মিলের খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য পাঠায়৷ সূত্রের দাবি, জি বি হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ পাঁচটি সুকলের মিড-ডে-মিলের খাবারের নমুনায় দূষণের সত্যতা পেয়েছে৷ বিষয়টি শিক্ষা দপ্তরকে জানানো হয়েছে৷ তাতে, কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷ মিড-ডে-মিলের খাবার নিয়ে সারা রাজ্যেই বহু অভিযোগ রয়েছে৷ গুণমান বজায় রাখা হয় না, এই ধরনের অভিযোগ প্রায়শই অভিভাবকরা করে থাকেন৷ এখন সুকল থেকে সংগৃহিত মিড-ডে-মিলের খাবারের নমুনায় দূষণের প্রমাণ পাওয়ায় অভিভাবকদের অভিযোগ অনেকাংশেই মিথ্যা নয় বলেই মনে হচ্ছে৷
সম্প্রতি এফএসএসএআই চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, কৃত্রিম ডিম চিহ্ণিত করার বিষয়ে সুকল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শিক্ষক শিক্ষকা ও দিদিমনিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সেই উদ্যোগ যেন গ্রহণ করা হয়৷ শিক্ষা দপ্তর প্রথমে ডিম নিয়ে সতর্ক করার সাথে সাথেই শিক্ষক শিক্ষিকারা মহা সমস্যায় পড়ে যান৷ কারণ, কৃত্রিম ডিম সম্পর্কে কোন ধারণাই রাজ্যে কারো কাছেই নেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম ডিম চিহ্ণিত করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে৷ এই কৃত্রিম ডিমগুলি সাধারণত সবগুলি একই মাপের হবে৷ তাছাড়া ডিমের কুসুম অনেকটাই লালচে আবরণের হবে৷ ব্রয়লারের আসল ডিমের কুসুম হলুদ রঙের হয়ে থাকে৷ এছাড়াও কৃত্রিম ডিমের বাইরের অংশটি খুবই মসৃন হবে৷ কৃত্রিম ডিমের ভেতরে কিছুটা বায়ুপূর্ণ স্থান থাকবে৷ এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে কৃত্রিম ডিম সহজেই চিহ্ণিত করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি৷ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার সমস্ত সুকল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে শিক্ষক শিক্ষিকা ও দিদিমনিদের কৃত্রিম ডিম চিহ্ণিত করার বিষয়ে অবহিত করবে৷
এফএসএসএআই’র চিঠি পেয়েই শিক্ষা দপ্তর উদ্ভুত এই সমস্যা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়েছে৷ শিক্ষা দপ্তরের জনৈক আধিকারীক জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের সুষম আহারের লক্ষ্যে মিড-ডে-মিলে সপ্তাহে দুইদিন ডিম দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল দপ্তর৷ কিন্তু, কৃত্রিম ডিম নিয়ে সতর্ক বার্তা পেয়ে এখন মিড-ডে-মিলে ডিম সরবরাহ করা নিয়েই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷
ডিম নিয়ে সমস্যার মাঝে মিড-ডে-মিলে দূষিত খাবার চিহ্ণিত হওয়ায় শিক্ষা দপ্তর আরও চিন্তায় পড়েছে৷ সূত্রের খবর, যে পাঁচটি সুকলের মিড- ডে-মিলের খাবারের নমুনায় দূষণের লক্ষণ মিলেছে সবগুলি রাজধানী আগরতলার৷ স্বাভাবিক ভাবেই সারা রাজ্যে এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায় মিড-ডে-মিলের খাবারের অবস্থা কি তাই এখন ভাবাচ্ছে শিক্ষা দপ্তরকে৷ সূত্রের বক্তব্য, দূষিত খাবারের বিষয়টি নিয়ে অতি গোপনীয়তা অবলম্বন করছে দপ্তর৷ কারণ, যে পাঁচটি সুকলের মিড-ডে-মিলের খাবারের নমুনায় দূষণ মিলেছে সেই সুকলগুলির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যাতে বিষয়টি জনসমক্ষে না আসে৷ কিন্তু, সারা রাজ্যে সুকল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে শিক্ষা দপ্তর৷ শিক্ষা দপ্তরের কাছে আরও চিন্তার বিষয় হল, রাজ্যের অন্যান্য সুকলগুলিতে মিড-ডে-মিলের খাবারে দূষণের নমুনা পাওয়া গেলে একত্রে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও মুশকিল হয়ে পড়বে৷ পাশাপাশি বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে অভিভাবক মহলের রোষের মুখে পড়তে হবে শিক্ষা দপ্তরকে৷ সূত্রের খবর, সমস্ত সুকল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলিতে মিড-ডে-মিলের খাবারের গুণমান বজায় রাখার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছে দপ্তর৷ পাশাপাশি কোন অনিয়ম ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চরম সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে৷
2017-02-11