নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): নরেন্দ্র মোদী সরকারের `ঐতিহাসিক’ বাজেটে জোর দেওয়া হল গ্রাম, গরিব, পরিকাঠামো ও কর্মসংস্থানে| পাশাপাশি একশো দিনের কাজে বরাদ্দ করা হল ৪৮ হাজার কোটি টাকা| বুধবার সকাল ১১.০৯ মিনিট নাগাদ ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের সাধারণ বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি| সাধারণ বাজেটের সঙ্গেই এদিন ঘোষণা করা হয়েছে রেল বাজেট-ও| এদিন বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী| জেটলি বলেছেন, নোট বাতিলের সময় সরকারের পাশে থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে অসংখ্য ধন্যবাদ| প্রথমেই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, `সরকারের মূল লক্ষ্য হল কর্মসংস্থান তৈরি করা|’
এরপরই গ্রামোন্নয়ন এবং দারিদ্রদূরীকরণে জোর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন জেটলি| অর্থমন্ত্রী বলেছেন, `আমাদের মূল লক্ষ্যই হল গ্রামোন্নয়ন এবং দারিদ্রদূরীকরণ|’ বাজেটের শুরুতেই এদিন ১০টি থিম ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী| ১০ দফায় বাজেটের থিম হল, কৃষি, গ্রামীন মানুষদের উন্নতি, দেশের যুব সমাজের উন্নতি, গরিব ও বঞ্চিত মানুষের উন্নতি, অর্থনৈতিক সেক্টর, ডিজিটাল অর্থনীতি, জনসাধারণের জন্য কাজ, পরিকাঠামো, কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ও গরিব মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা| জেটলির দাবি, এই ১০টি ক্ষেত্রে জোর দিয়েই এগোবে দেশ| গ্রামোন্নয়ন এবং দারিদ্রদূরীকরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের উপরও জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী| জেটলি বলেছেন, `তরুণদের জন্য কাজের বন্দোবস্ত, পরিকাঠামো উন্নতি, ডিজিটাল ভারত এবং রাজকোষ ঘাটতি বাড়তে না দেওয়া হল বাজেটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য|’ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ফসল বিমা যোজনায় বরাদ্দ করা হল ৯ হাজার কোটি টাকা| অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ করা হল ২৩ হাজার কোটি টাকা| দারিদ্রদূরীকরণের উদ্দেশ্যে জেটলি এদিন বলেছেন, দরিদ্রসীমার বাইরে আনা হবে ১ কোটি পরিবারকে| জেটলির বাজেটে গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা| প্রান্তিক মানুষরা সমবায় থেকে লোন পাবেন| ২০১৯ সালের মধ্যে ১ কোটি মানুষের জন্য পাকা ঘরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বাজেটে| এছাড়া প্রতিটি গ্রামে তৈরি করা হবে মহিলা শক্তি কেন্দ্র| গোটা দেশজুড়ে দেড় লাখ হেলথ সেন্টার তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী| মহিলা শক্তি কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ করা হল ৫০০ কোটি টাকা| মহিলা ও শিশুকল্যাণ ক্ষেত্রে বরাদ্দ হল ১ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা| মোদী সরকারের `ঐতিহাসিক’ বাজেটে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা| প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের বাজেটে একশো দিনের কাছে বরাদ্দ ছিল ৩৮,৫০০ কোটি টাকা|
সাধারণ বাজেটের সঙ্গেই এদিন ঘোষণা করা হয়েছে রেল বাজেট-ও| বাজেটে এদিন একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী| যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে প্রধান্য দিতে চাইছে মোদী সরকার সেগুলি হল, আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে ই-টিকিট কাটলে কোনও সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না| সেই সঙ্গে জেটলি জানিয়েছেন, রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং আর থাকবে না| ২০২০ সালের মধ্যে রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং বন্ধ করা হবে| `ঐতিহাসিক’ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সাড়ে ৩ হাজার নতুন রেলপথ তৈরি করা হবে| এখানেই শেষ নয়, জেটলি আরও বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে সমস্ত ট্রেনে থাকবে বায়ো টয়লেট| ২০১৯ সালের মধ্যে সব ট্রেনে থাকবে কোচ-মিত্র পরিষেবা| কোচ সম্বন্ধে যাবতীয় সমস্যার কথা সেখানে জানানো যাবে| ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে রেলের জন্য বাজেট বরাদ্দ হল ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা|
রেল ভাড়া নিয়ে এদিন কোনও শব্দই খরচ করেননি অর্থমন্ত্রী| বলেননি রেল মাসুলের বিষয়েও| আরও যে সমস্ত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে মোদী সরকার সেগুলি হল, দেশে ২৫টি নতুন রেল স্টেশন তৈরি করা হবে| ৫০০টি স্টেশনে প্রতিবন্ধীদের জন্য লিফট ও চলমান সিঁড়ি বসানো হবে| দেশে মেট্রো রেল নিয়ে নয়া নীতি তৈরি করা হবে|
বাজেটে জেটলি এদিন ঘোষণা করেছেন, তফসিলি জাতির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৫৫ হাজার কোটি| প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আসবে স্মার্ট কার্ড| ব্যবস্থাটি কার্যকর করবে জীবন বিমা নিগম| ঢেলে সাজানো হবে শ্রম আইন| প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়ে হল ২ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা| অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের পেনশন এই বরাদ্ধে ধরা নেই| প্রধানমন্ত্রীর মুদ্রা প্রকল্পে বরাদ্দ দ্বিগুণ করে হল ২ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি| কর ফঁাকি বা ঋণ ফঁাকি দিয়ে কেউ বিদেশে পালিয়ে গেলে তঁার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী| ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের মোট বাজেট বরাদ্দ করা হল ২১ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা|