ভিলেন শিক্ষক

TEACHER BEAT STUDENTপশ্চিমবঙ্গ হইতে প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রকাশিত সংবাদ যেকোনও হৃদয়বান মানুষকে আঘাত করিবে সন্দেহ নাই৷ প্রকাশিত সংবাদে বলা হইয়াছে ঃ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার ডাকবাংলা গ্রামের একটি আবাসিক সুকলের অষ্টম শ্রেণীর এক কিশোর শামিম মল্লিককে (১৪) এক শিক্ষক পিটাইয়া হত্যা করিয়াছেন৷ শুধু শিক্ষক নহেন সুকলের এক কর্তাও ওই কিশোরের উপর হাতের সুখ মিটাইয়াছে৷ নৃশংস মারে এই কিশোর ছাত্র শামিম মৃত্যুর কোলে লুটাইয়া পড়ে৷ কিশোর ছাত্রের অপরাধ সুকলের নিয়ম ভাঙ্গিয়া, সুকল কর্তৃপক্ষকে না জানাইয়া বা অনুমতি না নিয়া সুকল গেইটে বাবার সঙ্গে দেখা করা৷ এই ‘চরম অপরাধের’ শাস্তি হিসাবে কিশোরকে বেদম প্রহার করে শিক্ষক ও অন্য এক কর্তা মিলিয়া৷ নিহত কিশোর ছাত্রের বাড়ী বড়ঞা থানার মজলিশপুর গ্রামে৷ শনিবার সুকল ছুটির পর বাড়ী চলিয়া যায় এই কিশোর ছাত্র শামিম৷ সোমবার সকালে বাবা বা মা বোর্ডিংএ দিয়া যান৷ তখনই বেসরকারী বাস চালক বাবার সঙ্গে কথা হয় শামিমের৷ সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরিবার সময় আবার ছেলের সঙ্গে দেখা করে যান বাবা৷ আর তখন বাবা আসিলে কাউকে না জানাইয়াই সুকল গেইটে বাবার সঙ্গে দেখা করে৷ আর এই ‘অপরাধে’ শিক্ষক নামরূপী খুনীরা কিশোর ছাত্রকে বেধরক মারিয়া খুন করিয়া ফেলিল৷ পুলিশ অবশ্য শিক্ষক সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করিয়াছে৷ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে এবং বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে৷ এই পরিস্থিতিতে ওই আবাসিক সুকলে তালা পড়িয়াছে৷
সুকলে যে শিক্ষকরূপী জল্লাদরাও আছে তাহাই আবার চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল মুর্শিদাবাদের এই ঘটনা৷ এই ঘটনা যেকোনও শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি, হৃদয়বান মানুষ, যাহাদের ন্যুনতম বিবেক আছে তাহারা আহত হইবেন৷ দেশের শিক্ষক সমাজের মাথা হেট করিয়া দেয় এই শিক্ষকরূপী নরপশুরা৷ ছাত্রদের মারধোর করা এখন আইনত শাস্তি যোগ্য অপরাধ জানা সত্বেও কোনও কোনও শিক্ষক এই বেআইনী কাজ চালু রাখার ঘটনা আছে৷ এই ত্রিপুরাতেও শিক্ষকের মারে ছাত্রদের আহত হইবার ঘটনা আছে৷ মুর্শিদাবাদের ওই আবাসিক সুকলের কিশোর ছাত্র তো সুকলের বাহিরে যায় নাই৷ বাবার সঙ্গে দেখা করিয়াছে সুকল গেইটে৷ তর্কের খাতিরে ধরিয়া নেওয়া গেল সুকলের অনুশাসন লংঘন করিয়াছে৷ এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যু দন্ড? লঘু পাপে গুরু দন্ড? এই সব জল্লাদরূপী শিক্ষকদের কঠোর শাস্তির সংস্থান রাখার তাগিদ বাড়িয়াছে৷ সুকল গেইটে বাবার সঙ্গে দেখা করিয়া হয়তো ওই কিশোর ছাত্র অপরাধ করিয়াছে৷ কিন্তু এমন শাস্তি? এমন ভয়ানক ক্রোধ? ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক সুকলে পাঠাইতেই তো এখন অভিভাবকদের মনে ভীতির সঞ্চার হওয়া খুব স্বাভাবিক৷ শিক্ষকরূপী পশুদের শনাক্ত করাও তো কঠিন৷ মুর্শিদাবাদের ওই কিশোর ছাত্রের এই খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে দেশ জুড়িয়াই ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদে গর্জিয়া উঠাই কাম্য৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের হইলেও ইহাই সত্যি যে, পরীক্ষার হলে নকল করিবার দাবীতে ছাত্ররা সহিংস আন্দোলন করিতে পারে৷ ছাত্ররাও আজ আদর্শের প্রতি কতখানি অবিচল থাকিতেছে? তাহাদের মধ্যে চরম অবক্ষয় গ্রাস করিয়াছে৷
ভারতের যেকোনও গণআন্দোলনের সামনের সারীতে ছাত্রছাত্রীরাই আগাইয়া আসিত৷ আজ ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতিগত ভাবে বিভাজিত হইয়া আছেন৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের অবদান তো কেউ অস্বীকার করিতে পারিবে না৷ সেই ছাত্ররাই দেশের সুনাগরিক হিসাবে উঠিয়া আসিলে দেশ বড় হইবে৷ আগামী দিনের দেশ চালাইবে এই নৌ জওয়ানরাই৷ একথা আজ বুঝিতে হইবে৷ সুতরাং এই কিশোর যুবকরাই আগামী দিনের দেশের সম্পদ৷ তাহারা যাহাতে বিপথগামী না হয়৷ দেশের মুখ উজ্জল করে সেই লক্ষ্যই তো থাকিবার কথা৷ কোনও অবস্থাতেই কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপর শারীরিক ভাবে শাস্তি দেওয়ার খবর থাকে সেখানেই পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হইবে৷ এজন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন সংশোধন করিতে হইবে৷ শিক্ষকের মারে আর একজন ছাত্রেরও যাহাতে মৃত্যু না হয় সেই নিশ্চয়তা পুলিশকে দিতেই হইবে৷ বিশ্বাস করা যাইতে পারে, দেশের শিক্ষানুরাগী ও সংবেদনশীল মানুষ এই ব্যাপারে নিশ্চয়ই নতুন পন্থা উদ্ভাবন করিবে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও রকম বাড়াবাড়ির বা গুন্ডামীর প্রচেষ্টাকে কঠোর হাতে মোকাবিলা করিতে হইবে৷ এক্ষেত্রে কোনও রকম সমঝোতা চলিতে পারে না৷ একশ্রেণীর শিক্ষকের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজেরই মাথা হেট হইতেছে৷