রাজ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগী বাড়ছে, আট বছরে হল দ্বিগুন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ গত আট বছরে তা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে৷ ফলে, সারা দেশের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যায় ত্রিপুরা চতুর্থ স্থানে রয়েছে৷ শনিবার আগরতলায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন ত্রিপুরা শাখার উদ্যোগে ৪৮তম অল ত্রিপুরা মেডিক্যাল কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের উপস্থিতিতে রাজ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে এই তথ্য তুলে ধরেন ডাঃ বি বি রেওয়ারি৷ তিনি এইচআইভি সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচীর দায়িত্বে রয়েছেন৷ ডাঃ রেওয়ারির দেওয়া তথ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন কোন মন্তব্য করেননি৷ তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতীয় মেডিক্যাল বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন৷

এদিন ডাঃ রেওয়ারি বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে ভারত এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷ বর্তমানে ২১ লক্ষ মানুষ সারা দেশে এইচআইভি সংক্রমিত৷ গত দশ বছরে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমেছে৷ কিন্তু, মৃত্যুর হার আগের তুলনায় কমেনি৷

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তা প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে৷ ফলে, সারা দেশের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যার নিরিখে ত্রিপুরা এখন চতুর্থ স্থানে রয়েছে৷

তিনি জানান, এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ে সারা দেশে কর্মসূচী চলছে৷ প্রতিটি রাজ্যই এই কর্মসূচীর অন্তর্গত৷ কিন্তু, আশানুরূপ ফল মিলছে না৷ তিনি বলেন, এইচআইভি নিয়ে সচেতনা জনমনে বাড়াতে হবে৷ কিন্তু, তাতে ঘাটতি রয়েছে৷

তাঁর কথায়, এইডস কিংবা এইচআইভি রোগ নির্ণয়ে রোগীরা সুযোগ হারাচ্ছেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মা কিংবা ভিষণ জ্বর হয়েছে বলে রোগ নির্ণয়ের ফলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরো যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷

তাঁর মতে, এইচআইভি রোগের চিকিৎসা কঠিন নয়৷ কিন্তু, রোগ নির্ণয় কঠিন৷ সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হলে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা কোনভাবেই কমবে না বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷

ডাঃ রেওয়ারির দেওয়া তথ্য রাজ্যের জন্য চিন্তার বিষয় হলেও মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে এবিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি৷ শুধু জাতীয় মেডিক্যাল বিল নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ প্রসঙ্গক্রমে জানিয়েছেন, এমসিআই যে দুর্নীতিগ্রস্থ তা তিনি রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলার সময় অনুভব করেছেন৷

তিনি বলেন, এমসিআই পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে ত্রুটি থাকতে পারে তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দুর্নীতিতেও যুক্ত সেই অনুভব রাজ্য সরকারের হয়েছে৷ কারণ, রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ শুরু করার সময় এমসিআই’র কাছে রাজ্য সরকারের যেতে হয়েছে৷ তখন যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে এমসিআই দুর্নীতিতে যুক্ত, সেবিষয়ে সন্দেহ বেড়েছে৷

তাঁর কথায়, এমসিআই’র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ণ আছে ঠিকই৷ কিন্তু, কিছু লোকের জন্য যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে এমসিআই গঠিত হয়েছে, তা ভুলে যাওয়া চলবে না৷ তাঁর মতে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত যারা তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদ্ধতি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ কিন্তু, সে পথে না গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা একটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ তিনি জানান, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করি না৷ শুধু তাই নয়, জাতীয় মেডিক্যাল বিল নিয়ে দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে তার প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি, কেন্দ্র যদি এই বিল নিয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চায়, তাহলে এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বলবে রাজ্য সরকার, জানান মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *