বিধানসভার অধিবেশনে নজীরবিহীন ঘটনা, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা, রাজ্য সরকারের তৈরী করা ভাষণের অংশ বিশেষ পাঠ না করে বিদ্রোহই করলেন রাজ্যপাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি৷৷ প্রথা ভেঙ্গে রাজ্যপাল তথাগত রায় বুঝিয়ে দিলেন তিনি তোতাপাখী হতে রাজি

শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণ চলাকালে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা৷ ছবি নিজস্ব৷

নন৷ রীতি অনুযায়ী ইংরেজি বছরের প্রথম বিধানসভা অধিবেশনে উদ্বোধনী ভাষণ দেন রাজ্যপাল৷ এই ভাষণ তৈরি করে রাজ্য সরকার৷ পছন্দ হোক বা না হোক এযাবৎ ত্রিপুরার প্রায় সব রাজ্যপালই রাজ্য সরকারের তৈরি করা ভাষণই পাঠ করেছেন বিধানসভায়৷ ভাষণে কেন্দ্র বিরোধী বক্তব্য থাকলেও সেই স্তবক বা পাতাগুলি পাঠ না করার নজির নেই৷ কিন্তু রাজ্যপাল তথাগত রায় অপছন্দের অর্থাৎ কেন্দ্র বিরোধী ভাষণের অংশ পাঠ না করে নজির গড়লেন৷ আর এই ঘটনা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের অনাস্থা বা বিদ্রোহই প্রকাশ পেল বলে মনে করা অসংগত নয়৷
শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় ভাষণের পুরোটা পড়লেন না রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ রাজ্যপালের ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বহু কথা রয়েছে৷ তাই ধারণা করা হচ্ছে, এজন্যই রাজ্যপাল ভাষণের ঐ অংশগুলি এড়িয়ে গেছেন৷ রাজ্যপালের ভাষণ মূলত রাজ্য সরকারই তৈরি করে দেয়৷ তাতে, কোন জায়গায় অপছন্দ হলে বাদ দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন রাজ্যপাল৷ তবে, রাজ্যপালের সে প্রস্তাব মেনে নেওয়া হবে কিনা সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রাজ্য সরকারের উপর৷ তাই এদিন রাজ্যপাল তথাগত রায় কার্যত রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া ভাষণের বিরোধিতা করলেন বলেই মনে হচ্ছে৷ রাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন বলেও মনে করা হচ্ছে৷
এদিকে, ভাষণের কিছুটা অংশ বিধানসভায় না পড়ায় বিরোধীরা এদিন ওয়েলে নেমে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন৷ কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকলেও রাজ্যপাল ভাষণের বাকি অংশটুকু পড়া শেষ করে তারপর চলে যান৷ এদিন রাজ্যপালের ভাষণকে ঘিরে কয়েক মুহূর্তের জন্য বিধানসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷
রাজ্যপালের ভাষণে বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি, পরিকল্পনা কমিশনের অবলুপ্তি, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দূরত্ব, উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া থেকে কৃষকরা বঞ্চিত এবং রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ কমিয়ে দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাষণের সাথে সহমত পোষণ না করতে পেরে রাজ্যপাল ভাষণের এই অংশগুলি এড়িয়ে গিয়েছেন৷ নানা কারণে এর আগেও অনেক রাজ্যপালই ভাষণের পুরোটা পড়েননি৷ আবার কখনো কখনো রাজ্যপালের ভাষণের বিরোধিতায় বিরোধীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে৷ কিন্তু এদিন রাজ্যপাল তথাগত রায় ভাষণের পুরোটা না পড়ায় প্রতিবাদী হন বিরোধীরা৷ এই ঘটনাকেও নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে৷
এদিন, রাজ্যপালের ভাষণ শেষে বিধানসভার বাইরে তৃণমূল কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার নিজ কক্ষে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গালমন্দ করা হয়েছে তাই রাজ্যপাল ঐ অংশগুলি এড়িয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, এমন যদি হত বিরোধীরা রাজ্যপালের ভাষণের বিরোধিতায় হৈ চৈ শুরু করেছেন তাহলে মেনে নেওয়া যেত যে রাজ্যপাল এই কারণে ভাষণের পুরোটা পড়েননি৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, যাদের বক্তব্য পাঠ করতে রাজ্যপাল অনীহা প্রকাশ করেছেন তারাই এদিন বিধানসভারভেতরে চুপ ছিলেন৷ এবিষয়ে কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথ বলেন, ইংরেজি বছরের প্রথম বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যপাল রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে থাকেন৷ এটাই সংসদীয় রীতি৷ তাই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল ভাষণের পুরোটা পড়তে বাধ্য৷ তবে, যদি রাজ্যপাল অসুস্থতা অনুভব করেন কিংবা বিধানসভায় বিরোধীরা হইহট্টগোল করে থাকেন তাহলে বিশেষ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল ভাষণের অনেকটাই অংশ পড়ার সময় বাদ দিতে পারেন৷ এদিন তিনিও কটাক্ষের সুরে বলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার তৈরি করা ভাষণে রাজ্যপাল দ্বিমত পোষণ করেন, তাই তিনি পুরোটা পড়েননি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *