নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি৷৷ চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই তদন্তের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দেখালেন
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/02/CM-TLA-300x200.jpg)
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ জানালেন উচ্চ আদালতের নির্দেশে চিটফান্ড কান্ডে তদন্তে সিট গঠিত হয়েছে৷ সিটের কাজকর্মে এখনো পর্যন্ত উচ্চ আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেনি৷ তাই সিবিআই দেওয়া নিয়ে উচ্চ আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে৷ আদালত সিবিআই নির্দেশ দিলে রাজ্য সরকারের তাতে কোন আপত্তি নেই বলে বিধানসভায় একটি বেসরকারি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
শুক্রবার বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক দিবাচন্দ্র রাংখল ত্রিপুরায় রোজভ্যালি সহ অন্যান্য চিটফান্ডগুলি দ্বারা প্রতারিত আমনতকারীদের অর্থ উদ্ধার ও ফেরতের লক্ষ্যে এবং প্রতারকদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে সিবিআই তদন্তের জন্য ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক এ সংক্রান্ত একটি বেসরকারি প্রস্তাব আনেন৷ এদিন তিনি বিশেষ কারণে বিধানসভায় ঐ সময় উপস্থিত না থাকায় তাঁর বদলে তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ আলোচনায় অংশ নেন৷
সুদীপবাবু এদিন বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য-সদস্যার অংশগ্রহণ নিয়ে সমালোচনা মুখর হন৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিটফান্ড সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা উৎসাহ দিয়েছেন৷ তিনি জানান, তথ্য জানার অধিকার আইন প্রয়োগ করে তিনি জানতে পেরেছেন রোজভ্যালির ২৭মে ২০১৩ পর্যন্ত এরাজ্যের মানুষের কাছে দেনা ছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা৷ শুধু তাই নয়, ২০১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রোজভ্যালি জেলাশাসকদের কাছে প্রতিমাসের হিসেব জমা দিয়েছে এবং তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু ছিল৷ চিটফান্ড সংস্থা রাজ্য থেকে প্রতারণা করে আমানত নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে জানতে পেরেও রাজ্য সরকার রোজভ্যালির একাউন্ট কেন বাজেয়াপ্ত করল না প্রশ্ণ তুলেন সুদীপবাবু৷
এদিন তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতে এডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন, রাজ্যের বাইরে গিয়ে সিটের তদন্তকারী অফিসারদের তদন্ত করা সম্ভব নয়৷ শুধু তাই নয় মুখ্যসচিব থাকাকালীন এস কে পান্ডাও বলেছেন রাজ্য পুলিশের পক্ষে রাজ্যের বাইরে গিয়ে তদন্ত করা কোন মতেই সম্ভব নয়৷ তাহলে চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই হোক উচ্চ আদালতে কেন বলছে না রাজ্য সরকার, প্রশ্ণ ছঁুড়ে দেন সুদীপবাবু৷ এদিন তিনি আরো বলেন, আগেই কৌশলে রোজভ্যালির নাম সিবিআইয়ের কাছে পাঠায়নি রাজ্য সরকার৷ তাঁর দাবি, এর পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে৷
এদিকে, আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ণ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, রোজভ্যালির নাম সিবিআইয়ের কাছে পাঠানোর সাহস দেখাচ্ছেন না কেন৷ এদিন, রতন লাল নাথও চিটফান্ড ইস্যুতে রাজ্য সরকার আসামির কাঠগড়ায় বলে কটাক্ষ করেন৷ তাঁর বক্তব্য, গত অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রোজভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্তে সিবিআই দিতে আইনী জটিলতা না থাকলে কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকার রোজভ্যালির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের ব্যবস্থা করেনি৷ তিনি প্রশ্ণ তুলে বলেন, উচ্চ আদালতে এডভোকেট জেনারেল চিটফান্ড সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চাই বলবে না কেন৷ তিনি মনে করেন, তাতে রোজভ্যালি সহ চিটফান্ড কান্ডে শাসক দলের রাজনৈতিক কর্তারা চিহ্ণিত হয়ে যেতে পারেন৷ তাই হয়ত উচ্চ আদালতে সিবিআইয়ের জন্য বলছে না রাজ্য সরকার৷ এদিন তিনি দাবি করেন সিটের তদন্তে পশ্চিম আগরতলা থানার দুটি মামলা এবং বীরগঞ্জ ও কুমারঘাটের মামলাগুলি উল্লেখ নেই৷ রতনবাবু পরামর্শ দিয়ে বলেন, চিটফান্ডের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি গুলি নিলামের ব্যবস্থা করুন৷ পাশাপাশি বলেন, সোমবারই উচ্চ আদালতে বলুন সিবিআই তদন্তে আপত্তি নেই৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই তদন্ত শুরু হলে শাসক দলের সাংসদ, মন্ত্রী ধরা পড়বেন৷
এদিন এই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবিষয়ে এর আগেও বহুবার বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে৷ রাজ্য সরকার দুইধাপে সিবিআইকে চিঠি দিয়ে চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করার সুপারিশ করেছে৷ ইউপিএ আমলে প্রধানমন্ত্রী ডা মনমোহন সিংকেও চিঠি দিয়ে ৩২টি মামলা সিবিআইয়ের হাতে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু এই মামলাগুলির বিষয়ে যে যুক্তি দিয়ে সিবিআই তদন্ত করতে অনীহা প্রকাশ করেছিল একই কথা প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিটফান্ড কান্ডে মার্চ ২০১৪ সালে জনৈকা দীপ্তি দাস মজুমদার উচ্চ আদালতে মামলা করেন৷ এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে সিট গঠনের নির্দেশ দেয়৷ হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের আইজিপির নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সিটের কাজকর্মে উচ্চ আদালত সন্তুষ্ট৷ সিট ৬২টি চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ ইতিমধ্যে ১৮টি মামলায় উচ্চ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিট৷ ৫৬ টি মামলা এখনো তদন্ত চলছে৷ বাকি ৪টি মামলা সিট উচ্চ আদালতে অনুরোধ জানিয়েছে অন্য মামলার সাথে একত্রিত করার জন্য৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিট প্রতিনিয়ত উচ্চ আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত সিটের কাজকর্মে উচ্চ আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেনি৷ ফলে, উচ্চ আদালতকে টপকে সিবিআইয়ের কাছে যাওয়া সমুচিন নয় বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন৷ তাই তিনি জানান, উচ্চ আদালত যদি মনে করে চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলে তাতে রাজ্য সরকারের কোন আপত্তি নেই৷
এদিকে, সুদীপবাবু রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বোঝাপড়া হয়ে গেছে৷ তাই এরাজ্যে সিবিআই আসছে না৷ এদিন এই বেসরকারি প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়৷