৩৫তম আগরতলা বইমেলা শুরু, বই এবং মানুষ একে অপরের পরিপূরক ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ ফেব্রুয়ারি ৷৷ বই মানুষের হাতে তুলে দিতে হবে৷ পাঠক সৃষ্ঠি করতে হবে৷ পাঠককে বই পাঠে

শনিবার আগরতলায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল মামুনকে সম্বর্ধনা দেন৷ ছবি তথ্য দপ্তর৷
শনিবার আগরতলায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল মামুনকে সম্বর্ধনা দেন৷ ছবি তথ্য দপ্তর৷

আগ্রহী করতে না পারলে এর প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যাবে৷ এই বিষয়টি একটা বড় আন্দোলন৷ এটা ছাড়া বইমেলার কোন গুরুত্ব নেই, আজ বিকালে উমাকান্ত একাডেমী প্রাঙ্গণে ৩৫তম আগরতলা বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এ কথা বলেন৷ তিনি বলেন, বইমেলা আমাদের কাছে একদিক দিয়ে যেমন উৎসব অপরদিকে দিয়ে আন্দোলন৷ উৎসব হচ্ছে এই কারণে যে, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই প্রাঙ্গণে বার দিন নানা অংশের মানুষের সমাগম ঘটবে৷ কথা, আলোচনা , ভাব-বিনিময় হবে৷ অভিজ্ঞতা, উপলব্ধির আদান-প্রদান হবে৷ একে অপরকে জানার সুযোগ পাওয়া যাবে৷ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় লেখক-লেখিকার সন্ধানও হয়ত এখান থেকেই পাওয়া যাবে৷ আমাদের মধ্যেকার বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন বলা হচ্ছে এই কারণে, যে মানুষের প্রয়োজন আছে বইয়ের প্রয়োজনই আছে মানুষের৷ বই এবং মানুষ একে অপররের পরিপূরক ৷ তাদের পৃথক করে রাখার কোন সুযোগ নেই৷ এই বইকে ভিত্তি করে লেখক, প্রকাশক, বিক্রেতা সর্বোপরি মননশীল পাঠক তাদের সবার সমন্বয়ে এই আন্দোলনকে দিন দিন শক্তিশালী করার প্রয়াসে ব্রতী হওয়া গেছে৷ বইমেলা নিছক মেলার জন্য মেলা নয়৷ সময়ের সাথে সাজুয্য রক্ষা করে মানুষের প্রয়োজনে মানুষকে মানবিক মূল্যবোধে জারিত করে তার প্রকৃত বিকাশে সাহায্য করে এমন প্রাসঙ্গিক বই সৃষ্টি করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে বই মানুষের জন্য৷ তাই বই মানুষের হাতে তুলে দিতে না পারলে সৃষ্টি সুখের উল্লাসকে উপভোগ করার সুযোগ কোথায় পাওয়া যাবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের নবীন প্রজন্ম যারা দেশের ভাবী নাগরিক তাদের সব অর্থে দায়িত্বশীল পাঠক, পাঠিকা হিসাবে গড়ে উঠতে সাহায্যে করতে হবে৷ এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি তার সার্থকতা লাভ করবে৷ এই জায়গায় যথেষ্ট দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে৷ এগিয়ে যাবার পরিবর্তে হয় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি নতুবা স্থবির হয়ে যাচ্ছি৷ সে জায়গায় সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরীর আমাদের প্রয়াস যার যার ঘর থেকেই শুরু করতে হবে৷ ছোটদের মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে৷ লোভ, হিংসা থেকে মুক্ত হয়ে দেশপ্রেমিক চিন্তা-চেতনায় তাদের উদ্ভাসিত হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বই বড় সহায়ক শক্তি হতে পারে৷ বিদ্যালয়গুলির পাঠাগারে শুধু পরীক্ষা পাশের বই ছাড়া জ্ঞানের ভান্ডার পরিপূর্ণ করার প্রয়াসে কেন আমরা নানাবিধ পুস্তক রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেবনা এই প্রশ্ণ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই জায়গায় যেতে ন্তুনা পারলে মানুষের মত মানুষ তৈরীর এই বিনম্র প্রয়াস আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হবে৷ তিনি বলেন, আমরা এমন বই চাইব যা আমাদের শান্তি, সম্প্রীতি, বন্ধুত্বের পরিবেশকে হাত ধরাধরি করে বেঁচে থাকতে পারি, এমন একটা পরিমন্ডল তৈরীতে সাহায্য করতে পারে৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পর দেশের গোটা পরিমন্ডলকে বিষাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা হলেই অসহিষ্ণুতা অত্যন্ত ক্লেদাক্তভাবে তার নখ-তাঁর দেখানোর চেষ্টা করছে৷ এর বিরুদ্ধে সুস্থ সংসৃকতির পরিমন্ডল সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে বই সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারে৷
সভাপতির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রচুর বই প্রকাশিত হয়৷ প্রতি বছর ত্রিপুরায় বই প্রকাশের সংখ্যা বাড়ছে৷ সফটওয়ারের দিকে নব প্রজন্মের আগ্রহ থাকলেও এখনও নিয়মিতভাবে বই প্রকাশিত হয়৷ ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত সমস্ত বইয়ের রেকর্ড রাখার একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী আবুল মোমেন বলেন, আমরা এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার্থী থেকে পরীক্ষার্থীতে রূপান্তরিত হয়েছে৷ এতে তারা খন্ডিত শিক্ষা পাচ্ছে৷ মননশীল লেখাপড়া কমে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বইমেলার আয়োজন সার্থক হবে তখনই যখন আমাদের শিশুরা সত্যিকার অর্থে একটা পূর্ণাঙ্গ বই পড়বে৷ তিনি বলেন, বই থেকে জীবনের সরদ সংগ্রহ করার মত চাহিদা আমরা সৃষ্টি করতে পারছিনা৷ সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিশুদের শিক্ষার্থী থাকতে দিন৷ তারা নানা উৎস থেকে তাদের জীবন সমৃদ্ধ করুক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *