নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জানুয়ারি৷৷ পেইড নিউজের সংজ্ঞা নিয়েই বিতর্ক চলছে৷ কারণ, নির্বাচন কমিশন এবং প্রেস
![মঙ্গলবার আগরতলায় পেইড নিউজের ভীতি ও উত্তরণ নিয়ে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ নিজস্ব ছবি৷](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/02/Governor-PCI-300x200.jpg)
কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া পেইড নিউজ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছে৷ আবার এই পেইড নিউজ বন্ধ করার ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যাগুলি নিয়ে নানাজন নানা মত এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সংবাদ মাধ্যম নাকি সাংবাদিক, পেইড নিউজের ক্ষেত্রে দায়ী কে এ নিয়েই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে৷ মঙ্গলবার আগরতলায় পেইড নিউজের ভীতি ও উত্তরণ নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সদস্যরাই এবিষয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন৷ একদিকে ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সহ সভাপতি প্রভাত দাসের দাবি, পেটে ক্ষুদা থাকলে পেইড নিউজ বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ অন্যদিকে, আউটলুকের সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসাদের মতে, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র উভয়কেই সংবাদ বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে হবে৷ সাংবাদিকরা যদি পেইড নিউজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তাহলে সংবাদপত্র এই পথে হাঁটতে হোঁচট খাবে৷ প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সাংবাদিকতাকে দুর্নীতির উর্দ্ধে রাখতে হবে৷ কারণ, সংবাদ মাধ্যমের উপর মানুষের আস্থা ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে৷ এই পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নেওয়ার আগেই সামলানো না গেলে আগামীদিনে সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্রের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে৷ রাজ্যপাল তথাগত রায় পেইড নিউজ বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত উল্লেখ করে সাংবাদিকদের কাছে আহ্বান জানান, খবর লেখার সময় তারা যেন নিউজ এবং ভিউজ একসাথে মিশিয়ে না ফেলেন৷
এদিন এই সেমিনারে উঠে আসে পেইড নিউজ নতুন কিছু নয়৷ দীর্ঘকাল ধরে পেইড নিউজ চলছে৷ কিন্তু এখন সময় এসেছে পেইড নিউজকে ভয়াবহ রূপ নিতে আটকে দেওয়ার৷ বর্তমান সময়ে বড় সংবাদপত্রগুলি কেবল বাণিজ্যিক ধান্দায় পত্রিকার প্রকাশনা করে চলেছেন৷ এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পিসিআই সদস্য এসএন সিনহা বলেন, বড় সংবাদপত্রগুলি কেবল টাকা কামাচ্ছে৷ তারা সংবাদপত্রকে শিল্পে পরিণত করেছে৷ তাঁর মতে, সংবাদপত্র শিল্প নয়, সংবিধানের চতুর্থস্তম্ভ হিসেবেই এর আসল পরিচিতি৷ যার মূল উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে রক্ষা করা৷
রাজ্যপাল অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে তার সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, কথা বলার অধিকার আছে বলেই যা কিছু করা যায় না৷ সবকিছুরই নির্দিষ্ট গন্ডি রয়েছে৷ গন্ডির বাইরে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়৷ তিনি বলেন, স্বচ্ছ সাংবাদিকতার বহু নিদর্শন রয়েছে এদেশে৷ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেকের চরম মাশুল গুণতে হয়েছে৷
এদিন, সেমিনারে পেইড নিউজের ভয়াবহতার হাত থেকে মুক্তি পেতে শক্তিশালী সম্পাদকীয় নীতির যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন পিসিআই চেয়ারম্যান জাস্টিস প্রসাদ৷ পেইড নিউজ যেখানে সাংবাদিকদের নীতি নিয়েই প্রশ্ণ তুলছে সেখানে সম্পাদকীয় নীতি শক্তিশালী হলে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন৷ সংবাদ মাধ্যমের সাথে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, কিছু সুপরিচিত সংবাদপত্র বিভিন্ন কারণে লোকসানে চলছে৷ কয়েকটি সংবাদপত্রের মালিকরা তার সাথে দেখা করে দুটি বিকল্প খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ অর্থরোজগার সঠিকভাবে হলে পত্রিকার প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে৷ অন্যথায় প্রেস বন্ধ করে দিতে হবে৷ বিষয়টি খুবই অনুতাপের বলে মন্তব্য করেন পিসিআই চেয়ারম্যান৷ পাশাপাশি কোন কর্মরত সাংবাদিক খবরের জন্য হুমকির সম্মুখীন হন কিংবা খবর করার জন্য বাধ্য করা হয় তাহলে পিসিআই এর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে৷ এককথায় এদিন তিনি সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন সমস্যা সম্মুখীন হলে পিসিআই তাদের সাথে সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে৷