পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে না পার্কের জমি, নিচ্ছে না বিনোদন কর, রোজভ্যালীর সাথে এখনও সখ্যতা রাজ্য সরকারের, তোপ দাগলেন রতন নাথ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জানুয়ারী৷৷ রোজভ্যালীর সাথে এখনও সখ্যতা আছে, ফের জোর গলায় দাবি করেন বিধায়ক

শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রতন নাথ৷ ছবি নিজস্ব৷
শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রতন নাথ৷ ছবি নিজস্ব৷

রতন লাল নাথ৷ তাঁর যুক্তি, গত ১৭ মাস ধরে রোজভ্যালী পার্ক থেকে কোন বিনোদন কর নিচ্ছে না রাজ্য সরকার৷ ২০১৩ সালে ৯ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে ১২ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা এবং ২০১৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা রোজভ্যালী বিনোদন কর হিসেবে সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছে৷ আশ্চর্যজনক ভাবে ১৭ মাস ধরে কোন বিনোদন কর সংগ্রহ করছে না রাজ্য সরকার রোজভ্যালী পার্ক থেকে৷ এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা খঁুজে পেয়েছেন বলে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে রতনবাবু জানিয়েছেন৷ তাই তিনি প্রশ্ণ তুলেছেন, রোজভ্যালীকে কর ছাড় কেন দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ তাঁর দাবি, এরও তদন্ত হওয়া দরকার৷

এদিন তিনি বলেন, শুরু থেকেই রোজভ্যালীকে নানা ভাবে মদত দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ খাস জমি এবং তিনজন উপজাতির জমি দখল করে গড়ে উঠেছে এই বিনোদন পার্ক৷ অথচ রাজ্য সরকার আজ পর্যন্ত সেই জমি পুনরুদ্ধারের কোন উদ্যোগ নেয়নি৷ উপর্যুপরি এখন তাদের কাছ থেকে বিনোদন কর নেওয়াও ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রতনবাবুর মতে, চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হতেই তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গ এবং ভুবনেশ্বরে রোজভ্যালীর বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে৷ বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রোজভ্যালীর বিনোদন পার্ক বন্ধ করে দিয়েছে৷ অথচ এই রাজ্যে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে চলেছে রোজভ্যালী৷

রতনবাবুর দাবি, সিট গঠিত হওয়ার পর এখন রোজভ্যালীর আমানতকারীদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করার যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে তা মূলত সিবিআই আটকানোর কৌশল৷ তিনি বলেন, ইচ্ছে করে রাজ্য সরকার রোজভ্যালীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত যাতে না হয় সেই পন্থা পদ্ধতি অবলম্বন করে চলেছে৷ এই বিষয়ে তিনি জানান, চিটফান্ড সংক্রান্ত ৩৭ টি মামলা সিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ তাও বিরোধীদের প্রবল চাপে পড়ে৷ সেই ৩৭ টি মামলার মধ্যে সিবিআই মাত্র ৫ টি মামলা গ্রহণ করেছে৷ তাতে রোজভ্যালীর নাম নেই৷ রতনবাবুর দাবি, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে রোজভ্যালীর বিরুদ্ধে মামলাগুলিতে টাকার অংক কম দেখানো হয়েছে৷ কারণ, সিবিআই মামলার গুরুত্ব বুঝেই তা গ্রহণ করে থাকে৷ স্বাভাবিক ভাবেই ডেফোডিল, কসমিক, প্রগতী শিল্ড সহ পাঁচটি চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করতে রাজি হলেও রোজভ্যালীর বিরুদ্ধে তদন্তে আগ্রহ দেখায়নি৷ এদিন তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্ত নিয়ে চিটফান্ড সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মামলা হয়েছিল৷ সেখানে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই তদন্ত দেওয়ার সাথে আসাম ও ত্রিপুরায় দেওয়ার বিষয়েও জোরালো সওয়াল হয়৷ তাতে, আসামের তরফে জানানো হয়, রোজভ্যালীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে তাদের কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু, রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেল সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারই সিবিআইকে তদন্ত করতে বলেছে৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার খুবই চতুরতার সাথে রোজভ্যালীকে বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টেও মিথ্যা বলেছে৷

এদিন, রোজভ্যালী পার্ক সম্পর্কে এক তথ্য তুলে ধরে শ্রীনাথ জানান, মোট ১০০ কানি জমির উপর পার্কটি গড়ে উঠেছে৷ এর মধ্যে ৩৩৫ কানি খাস জমি৷ তিনজন উপজাতির সম্পত্তি ১৭৫ কানি৷ সব মিলিয়ে মোট ৫১ কানি জমি রোজভ্যালী সরকারী সহায়তায় ভোগ করছে৷ এর পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ রাজ্য থেকে যতগুলি চিটফান্ড সংস্থা আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে গিয়েছে তাদেরকেও রাজ্য সরকার পালাতে সহায়তা করেছে৷ তাই এদিন তিনি রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে আবেদন জানান কাল বিলম্ব না করে চিটফান্ড সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সিবিআই যাতে গ্রহণ করে সেই ব্যবস্থা করা হোক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *