সোনাই (অসম), ৯ জানুয়ারি (হি.স.) : কাবুগঞ্জ এসবিআই ব্রাঞ্চ থেকে ম্যানেজার কুলদীপ দাশগুপ্তের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার কাণ্ডের নয়া মোড় নিতে চলেছে। প্রথম থেকেই ঘটনাটি সন্দেহের আবর্তে ছিল। আত্মহত্যা না-পরিকল্পিত হত্যা, এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল জেলা জুড়ে। মোমবাতি মিছিল করে প্রতিবাদী কার্যসূচি পালন করে ঘটনার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানানো হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে ছেলে কুলদীপ দাশগুপ্ত আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে খুন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে গতকাল রবিবার সোনাই থানায় এজাহার দায়ের করেছিলন শিলচর দুর্গাশঙ্কর লেনের বাসিন্দা অলোকা দাশগুপ্ত। ছেলের মৃত্যুর পিছনে এসবিআই অডিট অফিসার যোগেন্দ্র পাণ্ডে এবং কাবুগঞ্জ শাখার কর্মী শিবু নাথকে দায়ী করেন কুলদীপের মা অলোকা দেবী।
এজাহারের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করে সোনাই পুলিশ তদন্তে নেমে গতকাল সন্ধ্যায় শিলচর রেলস্টেশন থেকে এসবিআই-এর অডিট অফিসার যোগেন্দ্র পাণ্ডেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর আটক যোগেন্দ্র পাণ্ডেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁদের সন্দেহ গাঢ় হলে আজ সোমবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কাছাড় জেলার পুলিশ সুপার নোমাল মাহাতো জানান, প্রাথমিক তদন্তের পর আজ অডিট অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুলদীপ দাশগুপ্তের আত্মহত্যা কাণ্ডের পিছনে বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার হয়েছে। এতে স্পষ্ট, অত্যধিক চাপ এবং প্ররোচনার দায়ে কুলদীপ বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, যোগেন্দ্র পাণ্ডে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে বরাক উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। কাবুগঞ্জ শাখার পাশাপাশি বরাক উপত্যকার বিভিন্ন শাখায় অডিটের দায়িত্ব ছিলেন তিনি।
জানান, অডিটর কুলদীপের কাছে থেকে আগামীকাল গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠেয় ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এক দিবসীয় ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট সহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। কিছু তথ্য তার মোবাইল থেকে উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলি মুছে দিলেও সেগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলেন, তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বরাক উপত্যকার এখন অবধি তিনটি শাখা থেকে লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে। বরাক উপত্যকা ছাড়া অসমের বাইরের অন্যান্য রাজ্য থেকে পুলিশের কাছে ফোন যোগে এই অডিট অফিসারের বিরুদ্ধে নালিশ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন শাখায় অডিট চলাকালীন শাখা প্রবন্ধকদের মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতেন তিনি। বেআইনি ভাবে অর্থ দাবি করতেন। যার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি কাছাড় জেলার সোনাই বিধানসভা কেন্দ্রের কাবুগঞ্জ এসবিএই শাখা কার্যালয়ে ব্যাংক ম্যানেজার কুলদীপ দাশগুপ্তের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল দশটা নাগাদ শিলচর শহরের দুর্গাশঙ্কর লেনের বাসিন্দা কুলদীপ দাশগুপ্তের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত অবধি সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন শাখার অন্যান্য কর্মচারীরা। কিন্তু নিজের কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে থাকে যান প্রবন্ধক কুলদীপ দাশগুপ্ত। শনিবার সকাল আনুমানিক দশটার দিকে চতুর্থ শ্রেণির জনৈক কর্মচারী ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ দেখেন।