জঙ্গল রাজ : পাটনায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খুনের পর বিরোধী তীরে বিদ্ধ নীতিশ সরকার, রাজনৈতিক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিহারে

পাটনা, ৫ জুলাই : কয়েক মাসের মধ্যেই বিহারে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে পাটনায় মগধ হাসপাতালের মালিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোপাল খেমকার নির্মম হত্যাকাণ্ড রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের ঝড় তুলেছে। শুক্রবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে পাটনার অভিজাত গান্ধী ময়দান এলাকায় নিজের বাড়ির কাছে গাড়ি থেকে নামার সময় তিনি অজ্ঞাতপরিচয় বাইক আরোহীদের গুলিতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিরোধী শিবিরে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিহারে জঙ্গল রাজ প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীরা নীতিশ সরকারকে ক্রমাগত নিশানায় নিচ্ছেন।

আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব সরকারকে নিশানা করে বলেন, পাটনার থানার কয়েক পা দূরে এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খুন হয়ে যান! বিহারে মাসে শত শত ব্যবসায়ী খুন হচ্ছেন, তবু এটাকে জঙ্গল রাজ বলা যাবে না? কারণ এটাকে বলে মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ইমেজ ম্যানেজমেন্ট। সামাজিক মাধ্যম এক্স-র নিজ হ্যান্ডেলে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।

পূর্নিয়ার নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদব এই ঘটনার নিন্দা করে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেছেন। তিনি বলেন, আমরা সমস্ত বিরোধী দল একসাথে এই ইস্যু নির্বাচন কমিশনের সামনে তুলব ৯ জুলাই। গোপাল খেমকার হত্যাকাণ্ডে আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।

আরজেডি মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। বিহারে এখন ‘ক্রিমিনাল রাজ’ চলছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে, অপরাধীদের মনোবল বেড়ে গেছে। এই সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই অপরাধী আজ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আজ যারা জঙ্গল রাজ বলে চিৎকার করেন, তারা বলুন – এই শাসন কোন রাজ? ‘গুণ্ডা রাজ’, ‘অপরাধী রাজ’ নয় কি?

জেডিইউ মুখপাত্র নীরজ কুমার ঘটনার গুরুত্ব স্বীকার করলেও সরকারের পদক্ষেপকে সঠিক বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গোপাল খেমকা একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ছিলেন। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড দুঃখজনক। তবে রাজ্য পুলিশ এবং ডিজিপি তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সিটি এসপি সেন্ট্রালের নেতৃত্বে একটি এসআইটি গঠন করা হয়েছে, যারা তদন্তের সব দিক খতিয়ে দেখছে।

খেমকার ভাই শংকর খেমকা অভিযোগ করেন, ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ২:৩০ নাগাদ পুলিশ আসে। গোপাল নিজের বাড়ির সামনে পৌঁছেই গাড়ি থেকে নামছিলেন, ঠিক যেমনভাবে ২০১৮ সালে তার ছেলেও খুন হয়েছিল। আমরা আগেও সতর্ক করেছিলাম, কিন্তু পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি।

২০১৮ সালে গোপাল খেমকার পুত্র গুঞ্জন খেমকাও একই কায়দায় বাইক আরোহীদের হাতে খুন হয়েছিলেন। কিন্তু সেই মামলা এখনও অমীমাংসিত। এবার গোপাল খেমকা নিজেই একই কায়দায় খুন হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে এই ঘটনা নীতীশ কুমার সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Leave a Reply