ইম্ফল, ৪ জুলাই : মণিপুরের পাহাড়ি জেলাগুলিতে চালানো যৌথ তল্লাশি অভিযানে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনীর একটি দল। মণিপুর পুলিশ, আসাম রাইফেলস, ভারতীয় সেনা ও কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ওই অভিযানে অংশ নিয়েছে।
মণিপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই তল্লাশি অভিযান ৪ জুলাই সকাল পর্যন্ত চলেছে। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তেঙনৌপাল, কাঙপোকপি, চানদেল ও চুরাচাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত ও অরণ্যাঞ্চলে একযোগে অভিযান চালানো হয়েছে।
তল্লাশি অভিযানে ২০৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২১টি ইনসাস রাইফেল, ১১টি একে সিরিজের রাইফেল, ২৬টি এসএলআর, ২টি স্নাইপার রাইফেল, ৩টি কারবাইন, ১৭টি পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল, ২টি ৫১মিমি মর্টার, ২টি এমএ অ্যাসল্ট রাইফেল ও ৩টি এম৭৯ গ্রেনেড লঞ্চার। এছাড়া একটি স্কোপযুক্ত রাইফেল, ১৮টি সিঙ্গল-শট ব্রিচ-লোডেড গান, ১১টি সিঙ্গল-ব্যারেল বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল, ৬টি পিস্তল, একটি পয়েন্ট ২২ রাইফেল, ৩টি লাথোড, ৩১টি সিঙ্গল-বোর গান, ৩টি দেশীয় পিস্তল, ৪টি মুজল-লোডেড রাইফেল এবং ৩৮টি ‘পম্পি গান’ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া গুলির মধ্যে রয়েছে ২৯ রাউন্ড ৫.৫৬ মিমি, ৮০ রাউন্ড ৭.৬২ মিমি, ৩০টি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ১০টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৯টি পম্পি শেল এবং ২টি লাথোড গ্রেনেড।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই উদ্ধার অভিযান মণিপুরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় একটি বড় সাফল্য। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমন ও অবৈধ অস্ত্রচক্র ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লহারি দর্জি লাতো জানান, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মণিপুর পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, কেউ অবৈধ অস্ত্র বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু জানতে পারলে নিকটবর্তী থানায় অথবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তা জানাবেন। সাথে তিনি যোগ করেন, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করে পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও স্থায়ী শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট।
উল্লেখ্য, মণিপুর সহিংসতার পরবর্তী রাজ্য অস্ত্রাগার থেকে ৬,০০০-র বেশি অস্ত্র লুট হয়, প্রাণ হারান ২৫০-রও বেশি মানুষ এবং ৬০,০০০-রও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তাবাহিনী ৩০৭টি অস্ত্র উদ্ধার করেছিল, যার মধ্যে ২৪৬টি মেইতেই গোষ্ঠীর ‘আরামবাই তেনগল’ দ্বারা জমা দেওয়া হয়। এরপর ১৪ জুন দ্বিতীয় দফায় ৩২৮টি অস্ত্র ও ১০,৬০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়, যা মণিপুরের উপত্যকা অঞ্চল থেকে সংগৃহীত।