নিউ ইয়র্ক, ৩০ জুন : নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির চমকপ্রদ বিজয়ী প্রার্থী জোহারান মামদানি তাঁর বামঘেঁষা প্রচারাভিযান ও বিতর্কিত নীতিগত অবস্থান নিয়ে উদ্ভূত দলীয় অস্বস্তি এবং রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কটাক্ষের পরও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।
৩৩ বছর বয়সী মামদানি, যিনি বাংলাদেশী-মূলের এক মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান, সম্প্রতি এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, “আমার মতে, সমাজে কেউই শত শত কোটি ডলারের মালিক হওয়ার মতো অবস্থানে থাকা উচিত নয়, বিশেষ করে যখন এক চতুর্থাংশ নিউ ইয়র্কবাসী দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।”
নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র পদপ্রার্থী জোহারান মামদানি তাঁর প্রচারে শহরের সম্পত্তি কর ব্যবস্থাকে “বৈষম্যমূলক ও অবিচারপূর্ণ” বলে উল্লেখ করে একটি বিতর্কিত কর সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। তাঁর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, শহরের ধনী এবং “সাদা জনবসতিপূর্ণ” এলাকাগুলোর উপর করের বোঝা বাড়িয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সরকারি সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। এই প্রস্তাব জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে বলে সমালোচকরা মন্তব্য করলেও, মামদানি তা নাকচ করে বলেন, “আমি কেবল বাস্তবতাকেই নাম দিচ্ছি।”
তাঁর প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, সার্বজনীন শিশুসেবা, প্রতি ঘণ্টায় ৩০ ডলার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, ভাড়ার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং শহর-পরিচালিত সুপারমার্কেট স্থাপন। এই উচ্চাভিলাষী সামাজিক সেবা পরিকল্পনাগুলোর অর্থায়ন হবে নিউ ইয়র্কের শীর্ষ ১% আয়কারীদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপের মাধ্যমে। মামদানি এই পরিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বর্ণগত বৈষম্য হ্রাস করে একটি অধিক সমতাভিত্তিক শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ফক্স নিউজে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানিকে “একজন বিশুদ্ধ কমিউনিস্ট” আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, মামদানি জিতলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে। মামদানি তার জবাবে বলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়ে যা বলছেন, তা মূলত আমার চেহারা, কণ্ঠস্বর, ধর্ম বা বংশ পরিচয়কে টার্গেট করে। তিনি এসব বলছেন কারণ আমি যেসব সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়ছি, তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চান।”
তিনি আরও বলেন, “নিউ ইয়র্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শহর, অথচ এখানকার একজন মানুষও যদি অনাহারে থাকে, তা আমাদের ব্যর্থতা।”
মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানও তাঁকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তিনি ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন—যা ইসরায়েল সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।
এনবিসির সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি “গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফ়দা” স্লোগানটিকে সমর্থন করেন কিনা। মামদানি উত্তরে বলেন, “এই ভাষা আমি ব্যবহার করি না,” তবে তিনি এটি নিন্দা করতেও অস্বীকার করেন।
জিউিশ কমিউনিটির একাংশ এই স্লোগানকে সহিংসতামূলক ও অ্যান্টিসেমিটিক বলে মনে করলেও, মামদানি বলেন, “নিউ ইয়র্কের মেয়রের কাজ কারো ভাষা নিয়ন্ত্রণ করা নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই প্রো-ফিলিস্তিনি কর্মীদের বাকস্বাধীনতা দমন করে তা করছে।”
তিনি আরো বলেন, “ঘৃণার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে কাজের মাধ্যমে—শুধু কথায় নয়।”
মেয়র পদে নির্বাচন হতে চলেছে এক বহুপ্রার্থীর জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, যিনি একসময় ডেমোক্রেটিক টিকিটে জিতেছিলেন, এবার স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির মামলাগুলি ট্রাম্প প্রশাসন প্রত্যাহার করায়, রাজনৈতিক মহলে ‘কোয়িড প্রো কুও’-এর গুঞ্জন উঠেছে।
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস-এর প্রতিষ্ঠাতা কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আইনজীবী জিম ওয়ালডেন।
তবে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর সিদ্ধান্ত নিয়ে। মামদানির বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর তিনি এখনও জানিয়েছেন না যে, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন কিনা।
জোহারান মামদানি এখন নিজ দলের ভেতরকার দ্বিধা, ডানপন্থী রাজনৈতিক আক্রমণ এবং জাতিগত-ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রচারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তিনি কিভাবে এই বিতর্কগুলি সামাল দেন এবং সাধারণ নিউ ইয়র্কবাসীর আস্থা কতটা অর্জন করতে পারেন, তার উপর।