BRAKING NEWS

(রাউন্ড আপ): বালুরঘাটে আয়োজিত জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা অমিত শাহের

বালুরঘাট, ১০ এপ্রিল (হি.স.) : দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের বুনিয়াদপুরে আয়োজিত এক বিশাল জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির বরিষ্ঠ নেতা শ্রী অমিত শাহ।

বুধবার বালুরঘাটের বুনিয়াদপুর জনসভা থেকে ভাষণ দেওয়ার সময় অমিত শাহ বলেন, তৃণমূল সরকারের গুন্ডারা মহিলাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং যখন ইডি টিম তাদের গ্রেফতার করতে আসে, তখন তারা ধাক্কা দেয়। তাদের উপর পাথর ছোঁড়া হয়। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক তুষ্টির জন্য সন্দেশখালির অপরাধীদের সমর্থন করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এবং শাসনের খতিয়ান তুলে ধরে শ্রী শাহ ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আহ্বান জানান।

শ্রী শাহ বলেন, বালুরঘাটের এই জনসভায় যে পরিমাণ মানুষ এসেছেন তাতেই বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টির জয় নিশ্চিত। ১৯ এপ্রিল বাংলার মানুষ বিজেপিকে বিজয়ী করার সংকল্প নিয়েছে। বালুরঘাট এলাকায় দারিদ্র্য বিস্তারের জন্য দায়ী কমিউনিস্ট পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার আঞ্চলিক উৎপাদন তাঁতের শাড়ি, দই এবং মুখড়া সিল্ককে বৈশ্বিক স্তরে নিয়ে যেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে এবং বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন করতে হবে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বাংলার মানুষ বিজেপিকে যথাক্রমে ২ এবং ১৮টি আসনে নিজেদের আশীর্বাদ করেছিল। একই ধারাবাহিকতায়, ২০২৪ সালে বাংলার জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজ্যের ৩০টিরও বেশি আসনে বিজেপিকে জিতিয়ে ৩৭০-এর ঊর্ধ্বে পৌঁছে দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই সোনার বাংলা কথিত রাজ্য প্রতিদিন বোমা বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনিতে কেঁপে ওঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলায় শুধু দালালি আর দুর্নীতি করেছে। একটি শক্তিশালী বাংলা ছাড়া একটি শক্তিশালী ভারত কল্পনা করা যায় না এবং বাংলাকে শক্তিশালী করতে রাজ্যে অনুপ্রবেশ রোধ করা প্রয়োজন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয় না, কারণ এই অনুপ্রবেশকারীরা টিএমসির ভোটব্যাঙ্ক। বাংলায় অনুপ্রবেশের সমস্যা একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলার বিজেপি সরকারই সমাধান করতে পারে। অসমও অনুপ্রবেশের সমস্যায় জর্জরিত ছিল, কিন্তু অসমের মানুষ রাজ্যে বিজেপির প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছিল এবং বিজেপি সরকার এই সমস্যার মূলোৎপাটন করেছে। এখন অসম সীমান্ত থেকে কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারে না। বাংলায় বিজেপি সরকার গঠিত হলেই অনুপ্রবেশের সমস্যা মিটে যাবে, এরপর বাংলার মাটিতে কোনও পাখিও ঢুকতে পারবে না।

শ্রী শাহ বলেছেন, বিরোধী দলগুলি একসাথে রাম মন্দিরের ইস্যুকে স্থগিত, বিমুখ এবং ঝুলিয়ে রেখেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জি ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় একটি বিশাল রাম মন্দির নির্মাণ করে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৫০০ বছর পর ১৭ এপ্রিল, রামলালা নিজের জন্মদিনে বিশাল মন্দিরে অধিষ্ঠিত থাকবেন। কংগ্রেস এবং তৃণমূল তুষ্টিকরণের জন্য ৩৭০ ধারা অব্যাহত রেখেছিল, কিন্তু ৫ আগস্ট ২০১৯-এ ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে চিরকালের জন্য ভারতের একটি অভিন্ন অংশে পরিণত করার কাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সমবায় মন্ত্রী বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার অনেক কাজ করেছে। ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসা হয়েছে, ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে, ১২ কোটি মানুষকে শৌচাগার দেওয়া হয়েছে, ৪ কোটি পাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, ১০ কোটি মানুষকে উজ্জ্বলা সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং ১৪ কোটি মানুষকে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মোদী সরকার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য খরচ বহন করছে।

মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে বলেন যে মোদী সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের কাছে পৌঁছতে দিচ্ছেন না। মাননীয় অমিত শাহ জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আসন্ন নির্বাচনে ৩৭০ এর বেশি আসন পেয়ে মমতা-সরকারকে উৎখাত করতে হবে এবং তাহলেই সমস্ত জনকল্যাণমূলক প্রকল্প জনগণের কাছে পৌঁছাতে শুরু করবে। কেউ কয়লা চোরাচালান, গরু চালান ও অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। এই পশ্চিমবঙ্গ বাংলার মানুষের এবং এ নিয়ে কোনো আপোস করা হবে না। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা তিন তালাকের বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে তিন তালাক বাতিল করেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন যে, কংগ্রেস নেতারা এখনও মুসলমানদের শরিয়তি আইন বজায় রাখতে চায়। আর ইউসিসির বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, কংগ্রেসের ইস্তেহারে থাইল্যান্ডের ছবি রাখা হয়েছে, কারণ রাহুল গান্ধী বারবার সেখানে ছুটি কাটাতে যান। দেশের জনগণ ও গরিবদের নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কোনো চিন্তাভাবনা নেই। সিএএ নিয়ে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীরা জনগণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে যে এই আইনের দ্বারা জনগণের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, সিএএ-র মাধ্যমে ভারতে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এবং কারও বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা হবে না। তিনি বলেন, একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় আসা রোহিঙ্গাদের সমর্থন করছেন, আবার অন্যদিকে হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ শরণার্থীদের বিভ্রান্ত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই প্রতিবাদ করুক না কেন, এদেশে আসা শিখ, হিন্দু ও বৌদ্ধ শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে বদ্ধপরিকর মোদী সরকার। আগে বাংলায় গানের সুর শোনা যেত, আজ বাংলায় বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভূপতিনগরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার তদন্ত হাইকোর্ট এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এনআইএ-র বিরুদ্ধে মামলা করে বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের রক্ষা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সব অভিযুক্তকে উলটো করে ঝুলিয়ে সিধে করবে।

মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেন যে, সন্দেশখালির মতো লজ্জাজনক ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করেছে তৃণমূল সরকার। বছরের পর বছর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাকের ডগায় তৃণমূলের গুন্ডারা মহিলাদের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছিল। কিন্তু ইডি যখন তাদের গ্রেফতার করতে গিয়েছিল, তখন ইডি টিমকে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা হয়েও রাজনৈতিক তোষণের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেশখালির অপরাধীদের সমর্থন করেন। তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ী করা মানে সন্দেশখালির মতো ঘটনাকে সমর্থন করা। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিজয়ী করা মানে নতুন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা করে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা। তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, সন্দেশখালির অপরাধীদের শাস্তি দিতে বিজেপিকে ৪০০টিরও বেশি আসনে জয়ী করা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *